চারদিকে ধু ধু মরুভূমি। আর সেই বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ‘ডেথ ওয়ার্ম’ বা ‘মৃত্যুর পোকা’। শোনা যায়, এই পোকা শুধু স্পর্শ করলেই মৃত্যু নিশ্চিত।
২০২১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডিউন’ ছবিটি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা পেয়েছিল। চলতি বছরে এই ছবিটির দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পায়। এই ছবিটিও দর্শকের ভূয়সী প্রশংসা থেকে বঞ্চিত হয়নি। দু’টি ছবিতে ‘স্যান্ডওয়ার্ম’ নামে দানবাকৃতির একটি প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। অধিকাংশের দাবি, এই প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে।
বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম মরুভূমি গোবি। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এই মরুভূমির দক্ষিণ অথবা পশ্চিম দিকে একটি দানবাকৃতি জন্তু রয়েছে। মঙ্গোলীয় ভাষায় যার নাম ‘ওলগোই খোরখোই’।
‘মৃত্যুর পোকা’ বা ‘ডেথ ওয়ার্ম’ নামে পরিচিত প্রাণীটি। শোনা যায়, বালিয়াড়ির অনেক গভীরে প্রাণীটি ঘোরাফেরা করে। তাই এখনও পর্যন্ত সরাসরি সেই প্রাণীর দেখা কেউ পায়নি।
স্থানীয়েরা দাবি করেন, মরুভূমির গভীরে দানবাকৃতি প্রাণীটি যখন চলাফেরা করে তখন বালির উপর একটি তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। তরঙ্গের গতিপ্রকৃতি দেখে প্রাণীটির চলন সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
১৯২৬ সালে প্রকাশিত রয় চ্যাপম্যান অ্যান্ড্রুজ়ের লেখা ‘অন দ্য ট্রেল অফ অ্যানসিয়েন্ট ম্যান’ বইয়ে ডেথ ওয়ার্মের চেহারার উল্লেখ রয়েছে। ১৯২২ সালে মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দামদিনবাজ়ার। তিনি জানিয়েছিলেন যে, ডেথ ওয়ার্ম দেখতে অনেকটা সসেজের মতো।
ডেথ ওয়ার্মের নাকি কোনও মাথা নেই। পা-ও নেই। বুকে ভর দিয়ে মরুভূমির তলায় চলাফেরা করে সে। লম্বায় প্রায় দু’ফুট। এমনটাই দাবি করেছিলেন দামদিনবাজ়ার।
দামদিনবাজ়ার জানিয়েছিলেন, ডেথ ওয়ার্ম এতটাই বিষাক্ত যে তার সংস্পর্শে আসা মাত্রই যে কোনও প্রাণীর মৃত্যু হয়।
১৯২০ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত স্থানীয়দের কাছ থেকে ডেথ ওয়ার্ম প্রসঙ্গে নানা কাহিনি শুনে তা লিপিবদ্ধ করেন এডি সিমুকোভ এবং ইভান ইফ্রেমভ নামে রাশিয়ার দুই বিজ্ঞানী। কারও দাবি, এই প্রাণীটি এক থেকে দু’ফুট লম্বা। কারও মতে, এই প্রাণীটির দৈর্ঘ্য এক জন মানুষের সমানও হতে পারে।
ডেথ ওয়ার্মের গায়ের রং নাকি ধূসর সাদা। তবে উত্তেজিত হয়ে পড়লে তার সারা শরীর নাকি লাল অথবা বাদামি রং ধারণ করে।
স্থানীয়দের দাবি, শুধুমাত্র খিদে পেলেই বালির তলা থেকে উঠে আসে ডেথ ওয়ার্ম। মাটির কম্পন অথবা জোর শব্দ এই প্রাণীদের আকৃষ্ট করে।
বার বার কোনও জায়গায় যদি ছন্দ অনুযায়ী মাটি কাঁপে অথবা নির্দিষ্ট ছন্দ অনুযায়ী বার বার বিস্ফোরণ হয়, তা হলে সেই শব্দের উৎসের দিকে ছুটে যায় ডেথ ওয়ার্ম।
রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা স্থানীয়দের কথা শুনে ‘থাম্পার’ নামে এক বিশেষ যন্ত্রের ব্যবহার করেছিলেন। গোবি মরুভূমির সুদূর প্রান্তে পৌঁছে বালিয়াড়ির মধ্যে ‘থাম্পার’ যন্ত্রটি বসিয়েছিলেন তাঁরা। এই যন্ত্রটির মাধ্যমে নির্দিষ্ট শব্দ করে কিছুটা সময় পর পর মাটি কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু কোনও প্রাণীর দেখা পাননি তাঁরা।
স্থানীয়দের দাবি, ডেথ ওয়ার্মের শরীরেই বিষ লেগে রয়েছে। সংস্পর্শে না গিয়েও দূর থেকেই মেরে ফেলতে পারে এই প্রাণী।
দূর থেকে বিদ্যুৎকণার মতো বেগে বিষ লক্ষ্যে ছুড়তে পারে ডেথ ওয়ার্ম। তবে এই ভয়ঙ্কর প্রাণীর দেখা এখনও কেউ পাননি বলে তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। বিজ্ঞানমনস্কদের অধিকাংশের দাবি, প্রাচীন কোনও গ্রন্থে এই ধরনের প্রাণীর উল্লেখ ছিল। তার সঙ্গে কল্পনা মিশিয়ে স্থানীয়দের মুখে মুখে এই কাহিনি ঘোরাফেরা করছে। পরে এর অস্তিত্বকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন তাঁরা।