তরল, গ্যাসীয় বা কঠিন অবস্থা নয়, পদার্থের চতুর্থ একটি অবস্থা রয়েছে, যা প্লাজ়মা নামে পরিচিত। পদার্থের অন্য তিন অবস্থার চেয়ে প্লাজ়মা থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তার পরিমাণ প্রচুর।
বিজ্ঞানীদের মতে, এক গ্লাস নিখাদ প্লাজ়মার মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি থাকে তা ৯৮ কোয়াড্রিলিয়ন লিটার বা ৯৮০০ লক্ষ কোটি লিটার পেট্রলের সমান। তবে এই পরিমাণ নিখাদ প্লাজ়মা তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন এবং জটিল প্রক্রিয়া।
গবেষকদের দাবি, এক গ্লাস প্লাজ়মার শক্তি খরচ করে সম্পূর্ণ সৌরজগৎ এক বার প্রদক্ষিণ করে নেওয়া যায়।
এমনকি একটি গ্লাসে যে পরিমাণ প্লাজ়মা ভরে রাখা যায় তা খরচ করে ১৪৩ কোয়ান্টালিয়ন ওয়াটের বাল্ব টানা এক বছর ধরে জ্বালিয়ে রাখা যায়।
পদার্থের চতুর্থ অবস্থা তৈরি করা যায় কী ভাবে? গ্যাসীয় কোনও পদার্থকে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় রাখলে পরমাণু থেকে ইলেকট্রন আলাদা হয়ে যায়।
ইলেকট্রন আলাদা হয়ে যাওয়ার পর উত্তপ্ত গ্যাসীয় অণু-পরমাণুর মধ্যে যা অবশিষ্ট থাকে সেটাই পদার্থের চতুর্থ অবস্থা।
সূর্যের ছ’লক্ষ কিলোমিটার ভিতরে প্লাজ়মা অবস্থার অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানা যায়। সেখানকার তাপমাত্রা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় সহজেই তৈরি হয় প্লাজ়মা।
সূর্যের ভিতর পরমাণুগুলির একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিউক্লিয়ার ফিউশন বা পারমাণবিক সংযোজন ঘটায়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার ভিতরে প্লাজ়মা তৈরি হয়।
উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে রাতের বেলায় আকাশের দিকে তাকালে যে অরোরা বা জ্যোতি দেখা যায়, তা আসলে পদার্থের প্লাজ়মা অবস্থা।
বিদ্যুৎ চমকানোর সময় আলোর ঝলকানি হোক বা রাতের আকাশের নক্ষত্র— সবই আসলে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা প্লাজ়মা।
শক্তিশালী তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে সাধারণ গ্যাসকে অধিক তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে কৃত্রিম ভাবে প্লাজ়মা উৎপন্ন করা হয়।
কৃত্রিম প্লাজ়মার ব্যবহার আধুনিক যুগে বহুল। টেলিভিশন স্ক্রিনে প্লাজ়মা ডিসপ্লে তৈরির ক্ষেত্রে কৃত্রিম প্লাজ়মা ব্যবহার করা হয়।
ফ্লুরোসেন্ট বাতি, আয়ন ইঞ্জিন, লেজ়ার প্রোডিউসড প্লাজ়মা (এলপিপি) তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কৃত্রিম প্লাজ়মা।
পৃথিবীর উপরিভাগে যে আয়নোস্ফিয়ার রয়েছে সেখানে প্লাজ়মার উপস্থিতি রয়েছে। ম্যাগনেটোস্ফিয়ারেও রয়েছে প্লাজ়মা।
গবেষণা এবং প্রযুক্তির কাজেও কৃত্রিম প্লাজ়মা ব্যবহার করা হয়। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় কৃত্রিম প্লাজ়মা।
ধাতুর কঠিন পাত কাটার কাজে, প্লাজ়মা স্প্রে করে নতুন আবরণ তৈরিতে, মাইক্রোইলেকট্রনিক্সের কাজেও কৃত্রিম প্লাজ়মার ব্যবহার করা হয়।