‘মোগ্যাম্বো’র নাতি বলে কথা! অন্তত দু’-একটি ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় না করলে হয়! কিন্তু অমরীশ পুরীর নাতির কেরিয়ার অন্য সুতোয় বাঁধা। কখনও তিনি সেটে গিয়ে চা পরিবেশন করেছেন। কখনও আবার অগ্রজ শিল্পীদের পান সেজে দেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় ফাইফরমাশ খেটেছেন। এখন কী করেন বর্ধন পুরী?
১৯৯০ সালের মে মাসে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম বর্ধনের। তাঁর আসল নাম হর্ষবর্ধন পুরী। তবে বর্ধন নামেই অধিক পরিচিত তিনি। মুম্বইয়ে বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে থাকেন তিনি।
বর্ধনের পিতা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হলেও শৈশব থেকে অভিনয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন অমরীশ পুরী, বলিপাড়ার জনপ্রিয় খলনায়ক ‘মোগ্যাম্বো’।
মুম্বই থেকে স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন বর্ধন। বিজ়নেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করে ২০১১ সালে স্নাতক হন তিনি। অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় স্কুলজীবন থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিনির্মাতা সত্যদেব দুবের কাছে নাটক শিখতে শুরু করেন বর্ধন। সত্যদেবের কাছে অভিনয় শিখেছিলেন অমরীশও।
কিশোর বয়সে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করার সুযোগ পান বর্ধন। নব্বইটিরও বেশি নাটকে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি। তার আগে মঞ্চের পিছনে সমস্ত কাজ সামলাতেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, স্কুল শেষ হওয়ার পর নাটকের রিহার্সালে চলে যেতেন বর্ধন। সেখানে গিয়ে অগ্রজ শিল্পীদের সমস্ত ফাইফরমাশ খাটতেন। কখনও সেটের সকলকে চা পরিবেশন করতেন, কখনও পান সেজে দিতেন। রিকশা ডেকে দেওয়া থেকে শুরু করে মঞ্চ পরিষ্কারও করে দিতে হত বর্ধনকে।
ছোটবেলায় শারীরিক সমস্যায় খুব ভুগতেন বর্ধন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২৫০ দিন তিনি নাকি অসুস্থতার কারণে হাসপাতালেই থাকতেন।
বর্ধন বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতাম আমি। এক চিকিৎসক জানিয়েছিলেন যে, আমি ১৪ বছর পর আর বাঁচব না। কিন্তু আমি মনের জোর নিয়ে লড়াই করেছি। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছি।’’
অমরীশের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল বর্ধনের। ছোটবেলায় ঠাকুরদার ১২ নম্বরের জুতো পায়ে গলিয়ে, মাথায় ঠাকুরদার নকল চুল পরে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতেন বর্ধন। অমরীশের সঙ্গে সারা রাত জেগে সিনেমাও দেখতেন।
বলিউডে পা রাখলেও ক্যামেরার পিছনে কাজ শুরু করেছিলেন বর্ধন। ‘ইশকজ়াদে’, ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’ এবং ‘দাওয়াত-এ-ইশক’-এর মতো যশরাজ ফিল্মস প্রযোজনা সংস্থার হিন্দি ছবিগুলিতে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন বর্ধন।
২০১৯ সালে ‘ইয়ে সালি আশিকি’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পান বর্ধন। তার পর ‘আসেক’ এবং ‘দশমী’ নামের দু’টি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু কোনও ছবিই তেমন প্রচারে আসেনি।
সোনু নিগম এবং উদিত নারায়ণের পুত্র আদিত্য নারায়ণের মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করেন বর্ধন। বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটির পর্দায়ও নিজের কেরিয়ার গড়েন তিনি।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ‘ব্লাডি ইশক’ নামের হরর ঘরানার একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন বর্ধন। সেই ছবি ওটিটির পর্দায় মুক্তি পায়। সম্প্রতি ওটিটির পর্দায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ববি অওর ঋষি কি লভ স্টোরি’ নামের একটি রোম্যান্টিক ঘরানার ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, চলতি বছরে আরও দু’টি ছবিতে অভিনয় করার কথা রয়েছে বর্ধনের। কম সময়ের মধ্যে সমাজমাধ্যমেও বেশ পরিচিতি তৈরি হয়েছে তাঁর। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় বর্ধনের অনুগামীর সংখ্যা সাড়ে ছ’লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।