দুধের প্রসঙ্গ উঠলেই সেই গানের কলি যেন মনের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে— ‘দুধ না খেলে হবে না ভাল ছেলে’। কিন্তু দুধের রং সাদা থেকে যদি হঠাৎ কালো হয়ে যায়? ‘তা সে যতই কালো হোক’, পুষ্টিগুণের দিক থেকে কোনও হেরফের হবে কি? কোন প্রাণীর থেকেই বা কালো রঙের দুধ পাওয়া যায়?
সকালে উঠে চা-কফির সঙ্গে হোক অথবা ‘স্বাস্থ্যকর’ পানীয়ের সঙ্গে, অধিকাংশেরই নিত্য দিনের সঙ্গী দুধ। কোনও জিনিসের পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠি বোঝাতেও দুধসাদা রঙের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু সেই দুধের রংই যদি হয় কালো?
গরু অথবা ছাগল নয়, তবে চারপেয়ে এমন এক প্রাণী রয়েছে, যাদের থেকে কালো রঙের দুধ পাওয়া যায়। সন্তান প্রসবের পরেই কালো রঙের এই তরল তার শরীর থেকে নিঃসৃত হয়।
আফ্রিকায় এক বিশেষ ধরনের গন্ডার পাওয়া যায়, যার গায়ের রং কুচকুচে কালো। এই কালো গন্ডারের বিজ্ঞানসম্মত নাম ডাইসেরস বাইকর্নিস।
কালো স্ত্রী গন্ডারের শরীর থেকেই কালো রঙের দুধের নিঃসরণ হয়। তবে উপাদানের নিরিখে সাদা দুধের সঙ্গে কালো দুধের বিস্তর ফারাক রয়েছে।
গবেষণা করে জানা গিয়েছে, কালো স্ত্রী গন্ডারের শরীর থেকে যে দুধ পাওয়া যায় তাতে জলের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। ফলে সাদা দুধের চেয়ে এর ঘনত্ব অনেকটাই কম।
শুধু ঘনত্বের দিক থেকেই নয়, কালো দুধে ফ্যাটের পরিমাণও অত্যন্ত কম। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই দুধে ফ্যাটের পরিমাণ ০.২ শতাংশ।
২০১৩ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, কালো দুধের ঘনত্ব কম হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে কালো স্ত্রী গন্ডারের ধীর গতির প্রজননচক্র।
সাধারণত জন্মের পর চার থেকে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলে কালো স্ত্রী গন্ডারেরা সন্তান প্রসবে সক্ষম হতে পারে।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কালো স্ত্রী গন্ডারেরা অন্তঃসত্ত্বা থাকে। এক বারে একটি মাত্র সন্তানেরই জন্ম দিতে পারে তারা।
শুধু সন্তানধারণের জন্যই নয়, সন্তান পালনের ক্ষেত্রেও বেশি সময় লাগে কালো স্ত্রী গন্ডারের। সাধারণত সন্তান প্রসবের পর দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে সন্তান পালন করে তারা।
সন্তান প্রসবের পর থেকেই কালো রঙের দুধ সন্তানকে পান করানো শুরু করে কালো স্ত্রী গন্ডার। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই দুধ নিঃসৃত হতে থাকে।
গবেষকদের একাংশের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে কালো স্ত্রী গন্ডারের শরীর থেকে দুধ বার হওয়ার কারণে পুষ্টিগত দিক থেকে তা উন্নত নয়। সে কারণেই কালো রঙের দুধে ফ্যাট এবং প্রোটিনের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।