গায়কের পাশাপাশি অভিনেতা হিসাবেও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন কিশোর কুমার। তবে বলিপাড়ায় মাঝেমধ্যে কানাঘুষো শোনা যায়, কিশোর কুমার হঠকারিতার বশে এমন কিছু কাণ্ড ঘটাতেন, যা দেখে অনেকেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়তেন। শুধুমাত্র ক্ষণিকের আনন্দের জন্যই নয়, পেশাগত জীবনেও বার বার এমন ঘটনা ঘটিয়েছিলেন কিশোর।
বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, কিশোর নাকি খুব সহজে না বলতে পারতেন না। কাছের কোনও বন্ধু তাঁকে কিছু বললে তিনি সরাসরি না করতে পারতেন না। ছলে-বলে-কৌশলে সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতেন।
বলিপাড়ার প্রথম সারির চিত্রনাট্যকার গুলজ়ার তাঁর লেখা ‘অ্যাকচুয়ালি... আই মেট দেম’ বইয়ে কিশোরের কাণ্ডকারখানা উল্লেখ করেছেন। ছবিতে অভিনয় করতে চাননি বলে নাকি মাথা কামিয়ে ফেলেছিলেন কিশোর। বইয়ে এমনটাই জানান গুলজ়ার।
১৯৭১ সালে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় এবং পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘আনন্দ’ ছবিটি। এই ছবির চিত্রনাট্যকারের দায়িত্বে ছিলেন গুলজ়ার।
‘আনন্দ’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খন্না, সুমিতা সান্যাল এবং রমেশ দেও অভিনয় করেন। এই ছবিতে রাজেশ এবং অমিতাভের অভিনয় দর্শকের এতটাই মনে ধরেছিল যে ‘আনন্দ’ মুক্তির দু’বছর পর আবার দুই অভিনেতাকে একসঙ্গে নিয়ে বড় পর্দায় হাজির হন হৃষিকেশ।
১৯৭৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘নমক হারাম’। হৃষিকেশ পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজেশ এবং অমিতাভ। তবে ‘আনন্দ’ ছবির জন্য হৃষিকেশের প্রথম পছন্দ ছিলেন না রাজেশ।
রাজেশের পরিবর্তে ‘আনন্দ’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য কিশোরকে পছন্দ করেছিলেন হৃষিকেশ। এমনকি গুলজ়ারেরও পছন্দ ছিল কিশোরকে। কানাঘুষো শোনা যায়, চিত্রনাট্য লেখার সময় কিশোরকে কল্পনা করেই আনন্দের চরিত্র বুনেছিলেন গুলজ়ার।
গুলজ়ার তাঁর বইয়ে জানান, ‘আনন্দ’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের জন্য কিশোরকে প্রস্তাব দেন হৃষিকেশ। হৃষিকেশের সঙ্গে আগে থেকেই বন্ধুত্ব ছিল কিশোরের। তাই বন্ধুর দেওয়া প্রস্তাব সহজে ফেরাতে পারছিলেন না কিশোর।
‘আনন্দ’ ছবির শুটিং শুরু হওয়ার আগে চিত্রনাট্য এবং পোশাক সংক্রান্ত আলোচনা করার জন্য ছবির সঙ্গে যুক্ত সকল তারকাকে ডেকে পাঠান হৃষিকেশ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন গুলজ়ারও।
হৃষিকেশের ডাকে একে একে সকলে আলোচনার জন্য হাজির হতে থাকেন। কিন্তু যে মুহূর্তে কিশোর ঘরের ভিতর প্রবেশ করেন, সে মুহূর্তে সকলে চমকে ওঠেন।
গুলজ়ার তাঁর বইয়ে জানান, সে দিন কিশোর এসেছিলেন মাথা কামিয়ে।
ঘরের ভিতর প্রবেশ করার পর হঠাৎ করে নাচগান করতে শুরু করে দেন কিশোর। তার পর খুশিমনে হৃষিকেশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘‘কী! এ বার আর আমাকে দিয়ে অভিনয় করাতে পারবে না তো!’’
গুলজ়ারের মতে ‘আনন্দ’ ছবিতে অভিনয় করতে ইচ্ছুক ছিলেন না কিশোর। কিন্তু বন্ধুকে সরাসরি মানাও করতে পারছিলেন না। তাই মাথা কামিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
‘আনন্দ’ ছবিতে আর কিশোর অভিনয় করছেন না জানতে পেরে সে চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন রাজেশ। হৃষিকেশের কাছে সে প্রস্তাব দেন তিনি।
‘আনন্দ’ ছবির শুটিংয়ের ঠিক আগে রাজেশকে মুখ্যচরিত্রে নেন হৃষিকেশ। ছবি মুক্তির পর রাজেশ এবং অমিতাভের জুটি জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি ছবিটিও বক্স অফিসে সফল হয়।