অ্যান্টিভাইরাস সফটঅয়্যার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জন ম্যাকাফিকে স্পেনের বার্সেলোনার একটি কারাগারে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ছিল আত্মহত্যা করেছেন তিনি। বর্ণময় চরিত্রের ম্যাকাফি কেন আত্মহত্যা করলেন তা আজও রহস্য।
তবে পুলিশের দাবি স্পেনে জেলে বন্দি অবস্থায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ম্যাকাফি। তাই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছিল। একটি মামলায় আমেরিকা তাঁর প্রত্যর্পণ চায়। স্পেনের একটি আদালত তার অনুমতি দেয়।
এই রায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশে দাবি জেলে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।
স্পেনের একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, রায় শোনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি আত্মহত্যা করেন। রায় শুনেই তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। জেলের চিকিৎসকরা তাঁকে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।
বিপুল কর ফাঁকির অভিযোগ এড়াতে তিনি আমেরিকা থেকে স্পেনে পালিয়ে আসেন। কিন্তু বার্সেলোনা বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
জেলে থাকাকলীন তিনি টুইটও করেন। সেই টুইটে লেখেন, ‘আমি এখানে সন্তুষ্ট। আমার বন্ধু আছে। খাবার ভাল। সব ঠিক আছে।’
ওই টুইটে আরও লেখেন, ‘জেনে রাখো যে আমি যদি নিজেকে ফাঁসিতে ঝোলাই, সেটা আমার কোনও দোষ নয়।’ তাঁর এই টুইটকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিতর্ক।
তাঁর এই টুইটের অন্য অর্থ ছিল বলে মনে করা হয়। সফটঅয়্যার সংস্থার প্রাক্তন কর্তা আসলে বলতে চেয়েছেন, খুন করে তাঁকে ঝুলিয়ে দেওয়া হতে পারে।
ম্যাকাফের আইনজীবীও সেই সময় এমন দাবি করেননি। কারণ তাঁকে কখনই হতাশাগ্রস্ত মনে হয়নি। তাঁর সঙ্গে যে সমস্ত সংবাদিক জেলে দেখা করতেন তাঁরাও এমনই মত প্রকাশ করেন। তাঁই মৃত্যু নিয়ে রহস্য থেকে গিয়েছে।
ম্যাকাফির বর্ণময় জীবনে ছিল ঘটনার ঘনঘটা। জীবিত অবস্থায় তিনি একাধিকবার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসেন।
২০০৪ সালে নিজেন অ্যান্টিভাইস সংস্থাকে ১০ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেন। পরে বিনিয়োগ শুরু করেন আবাসন শিল্পে। কিন্তু ২০০৮ সালে এই শিল্প মুখ থুবড়ে পডলে তিনি বড়সড় ধাক্কা খান।
পরের বছর তাঁর বিরুদ্ধে এক প্রতিবেশীকে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই সময় ম্যাকাফি বেলিজে থাকতেন। তাঁর দু’টি কুকুরের চিৎকার নিয়ে প্রতিবেশী গ্রেগরি ফাউলের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। পরে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর মাথায় দু’টি গুলির চিহ্ন ছিল।
বেলিজে থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে মাদক রাখা এবং বেআইনি কার্যকলাপেরও অভিযোগ ওঠে।
সেখানে তার নিজস্ব একটি ‘হারেম’ও ছিল যেখানে তিনি একাধিক কম বয়সি মহিলাদের সঙ্গে রাত কাটাতেন।
প্রতি সপ্তাহে তিনি টেস্টোস্টেরন হরমোন ইনজেকশনও নিতেন।
বিভিন্ন ধরনের বন্দুক তাঁর খুব প্রিয় ছিল। প্রায়শই তাঁর ছবিতে তাঁকে বন্দুক হাতে দেখা যেত।
যখন তাঁর ১৫ বছর বয়স সেই সময় তাঁর বাবা আত্মহত্যা করেন। সেই মৃত্যু তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলে।