যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয়, বিশ্বের সেরা ফুটবলার কে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর আসার সম্ভাবনা আর্জেন্টিনার মারাদোনা বা ব্রাজিলের পেলে। দু’জনের গায়েই চেপেছিল ১০ নম্বর জার্সি। পেলেই প্রথম ১০ নম্বর জার্সিকে প্রচারের আলোয় এনেছিলেন।
জার্সি নম্বর দশ। এই নম্বরের জার্সি পরে খেলে নাম-যশ পেয়েছেন এমন ফুটবলারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। অনেকের মতে এই জার্সি শ্রেষ্ঠ হওয়ার অনুপ্রেরণা তৈরি করে। এই নম্বরের জার্সিকে ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সম্মানজনক বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
কেন বিশ্বের সেরা ফুটবলাররা এই নম্বরের জার্সিকেই সবার আগে বেছে নিতে চান? মনে করা হয় পেলে এবং মারাদোনা এর অন্যতম কারণ।
অনেক দিন আগে থেকেই ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন সেরারা। আর সেই কারণে নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদেরও এই সংখ্যার জার্সি পরার প্রতি রয়েছে বিশেষ টান। তবে অনেক ক্ষেত্রে তা সম্ভবও হয় না। কারণ, স্বাভাবিক ভাবেই দলে এই নম্বরের জার্সি কারও কাছে না থাকলে তবেই অন্য কেউ এটাকে বেছে নিতে পারেন।
অনেকেই মনে করেন, আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফুটবলার। অনেকে তাঁকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা বলেও মনে করেন। তাঁর জার্সিতেও রয়েছে ওই একই সংখ্যা।
কিন্তু মেসি কেন ১০ নম্বর জার্সিকেই বেছে নিলেন? তাঁরও কি কোনও অনুপ্রেরণা ছিল? আসলে মেসি ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলা শুরুই করেননি।
যখন তিনি বার্সেলোনার হয়ে প্রথম দলে খেলতে শুরু করেন, তখন তাঁর জার্সির নম্বর ছিল ৩০। এর কয়েক বছর পর যখন রোনাল্ডিনহো দল ছাড়েন তখন তাঁকে ১০ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। রোনাল্ডিনহোর মতোই দলের অন্যতম স্তম্ভ মেনে নিয়ে তাঁকে ওই জার্সি দেওয়া হয়েছিল।
পেলে-মারাদোনা-মেসি ছা়ড়াও যে সেরারা ১০ নম্বর জার্সি পরেছেন, তাঁরা হলেন, জুয়ান রোমান রিকলমে, মিশেল প্লাতিনি, জোহান ক্রুইফ, ফেরেঙ্ক পুসকাস, জিনেদিন জিদান, রোনাল্ডিনহো, রিভাল্ডো, ওয়েন রুনি, আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো, ফ্রান্সেসকো টোট্টি, সার্জিও আগুয়েরো, নেমার, ফিলিপে কুতিনহো, রবার্তো বাজ্জিয়ো-সহ আরও অনেকে।
তবে এ-ও সত্য, ১০ নম্বর জার্সি পরেই যে সব সময় বৈগ্রহিক খেলোয়াড় হওয়া যায়, এমনটা নয়। তার অন্যতম উদাহরণ রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব। রিয়াল মাদ্রিদের জন্য ১০ নম্বর জার্সি বরাবর ‘অভিশাপ’ হয়েই ফিরে এসেছে।
বর্তমান শতকের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ দলে একটি নতুন নীতি প্রয়োগ করেন। তিনি চেয়েছিলেন এমন এক দল তৈরি করতে যার খেলোয়াড়রা বিশ্ব জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করবে।
প্রতি বছর দলের উন্নতির জন্য এক জন সেরা খেলোয়াড় বাছাই করতেন পেরেজ। এই দল এবং এই খেলোয়াড়দের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘গ্যালাক্টিকোস’।
প্রথম দিকে গ্যালাক্টিকোসের হয়ে ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলেন লুই ফিগো। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর গায়ে ছিল ওই জার্সি। কিন্তু ফিগোর পরে রিয়ালের ১০ নম্বর জার্সিতে আর কেউ সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি।
‘গ্যালাক্টিকোস’ যুগ শেষ হওয়ার পরে, রিয়াল মাদ্রিদের অনুরাগীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে ১০ নম্বর জার্সি ক্লাবের জন্য অভিশপ্ত। কারণ অনেক ফুটবলার ১০ নম্বর জার্সি পরে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এই খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন লাসানা দিয়ারা, মেসুট ওজিল, ওয়েসেলি স্নাইডার, হামেস রদ্রিগেজ এবং রবিনহো। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দল ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছিলেন।
পরে আবার এই ধারণাকে ভ্রান্ত করে দেন ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ। বহু বছর ধরে ১৯ নম্বর জার্সি পরে খেলার পর তিনি ১০ নম্বর জার্সি গায়ে চাপান। এর পর তিনি রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হয়ে ওঠেন। এর এক বছর পরে তিনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসাবে ‘বালঁ দ্যর’ জিতেছিলেন।
মনে করা হয়, ১০ নম্বর জার্সি গায়ে চাপালেই সেই ফুটবলারের কাছে অনেক কিছু আশা করে থাকেন দর্শকেরা।
কখনও কখনও, অন্য ফুটবলার ১০ নম্বর জার্সি না চাইলে এক জন নবাগতকে ওই জার্সি বাধ্য হয়ে নিতে হয়। পরে তিনিই হয়তো হয়ে উঠতে পারেন অন্যতম সেরা।
পর্তুগালের রোনাল্ডো মাঠে নামেন ৭ নম্বর জার্সি গায়ে চাপিয়ে। তাঁর মতো যদি আরও কেউ এই জার্সি পরে বিখ্যাত হন, তা হলে ৭ নম্বর জার্সিও সেরা জার্সি হিসাবে ভবিষ্যতে গণ্য হতে পারে।
শুধু ফুটবল নয়, ক্রিকেটের সেরাদের গায়েও উঠেছে এই সংখ্যার জার্সি। তাঁর অন্যতম উদাহরণ শচীন তেন্ডুলকার। এ ছাড়াও পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ডোনাল্ডের মতো খেলোয়াড়ও মাঠে নেমেছেন ১০ নম্বর জার্সি পরে।