শুধু শহরের দক্ষিণ অংশই নয়। সারা কলকাতার বাজার-মানচিত্রেই অন্যতম ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার।
উচ্চারণের দোষে অনেকেই একে বলেন ‘জগুবাবুর বাজার’। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভুল। এই পসরার নামের প্রকৃত উৎস হল ‘যদুনাথবাবুর বাজার’।
কে ছিলেন এই বাবু যদুনাথ? জানতে, আসুন চোখ রাখি ইতিহাসের পাতায়।
বাজারে রূপান্তরিত হওয়ার আগে সাবেক ব্রিটিশ কলকাতার এই জায়গায় একটি বিশাল বাগানবাড়ি ছিল।
কে এই বাড়ি বানিয়েছিলেন, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা যায় না। তবে এই বাড়িতে দীর্ঘ দিন বাস করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি রবার্ট চেম্বার্স।
১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে শুরু হয়েছিল দ্য সুপ্রিম কোর্ট অব জুডিকেচার। সেটাই পরে সুপ্রিম কোর্টে রূপান্তরিত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের কার্যভার সামলাতে ইংল্যান্ড থেকে চার জন বিচারপতি এসেছিলেন। রবার্ট চেম্বার্স ছিলেন তাঁদের মধ্যে এক জন।
পরবর্তী কালে এই বাগানবাড়ি সমেত বিশাল জমি কিনে নেন রানি রাসমণি। স্থানীয় এলাকায় বাজার বসান তিনি। পুরো সম্পত্তি তিনি দান করেন দৌহিত্র যদুনাথ চৌধুরীকে।
যদুনাথ ছিলেন রানি রাসমণির মেজো মেয়ে কুমারী দাসীর ছেলে। প্যারীমোহন চৌধুরী ছিলেন যদুনাথের বাবা।
কয়েক বছর আগে ট্যাংরা রোডের নামকরণ করা হয়েছে রাধানাথ চৌধুরী রোড। এই রাধানাথ ছিলেন প্যারীমোহন এবং যদুনাথের উত্তরসূরি।
বাবু যদুনাথ চৌধুরীর সেই বাজার আজ যদুবাবুর বাজার। মূলত তাজা শাকসব্জি এবং ফলের জন্য এই বাজার বিখ্যাত। স্থানীয়দের পাশাপাশি এখানে ভিড় জমান দূরদূরান্তের মানুষও।
ভবানীপুরে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় রোড সংলগ্ন এলাকায় বিস্তৃত জায়গা জুড়ে বসে এই বাজার। বাজারের বেশ কিছুটা অংশ ছাউনির নীচে। আবার কিছু দোকানি বসেন খোলা আকাশের নীচেই। ভোর থেকে গভীর রাত অবধি শতাব্দীপ্রাচীন এই বাজারে চলে বিকিকিনি। (ঋণস্বীকার: কলকাতার ইতিবৃত্ত ও অন্যান্য রচনা, লেখক- প্রাণকৃষ্ণ দত্ত, দেবাশিস বসু সম্পাদিত)