চাঁদে ১৪ দিনের জন্য তৃতীয় চন্দ্রযানকে পাঠিয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। এই সময়কাল শেষ হলেই চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞানের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
পৃথিবীর হিসাবে ১৪ দিন অর্থাৎ এক চন্দ্রদিবস। চাঁদে এই ১৪ দিনই সূর্যের আলো থাকে। অর্থাৎ, চাঁদে এক দিন সম্পন্ন হয় পৃথিবীর ১৪ দিনে। তার পর সূর্য ডুবে যায়।
তৃতীয় চন্দ্রযানের যন্ত্রপাতিগুলির শক্তির মূল উৎস সূর্য। সৌরশক্তিতে কাজ করছে তারা। ফলে সূর্য ডুবে গেলে বিক্রম বা প্রজ্ঞানের সমস্ত যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ার কথা। তাদের আয়ু মাত্র ১৪ দিন।
চাঁদে রাতের বয়সও ১৪ দিনের কাছাকাছি। রাত শেষে চাঁদে আবার সূর্য উঠলে বিক্রম বা প্রজ্ঞানকে আবার বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব কি না, তা চেষ্টা করে দেখা যাবে। যদিও তার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদে নিয়ে গিয়েছে মোট চারটি পেলোড। তারাই চন্দ্রলোকের চারমূর্তি। চাঁদে তাদের অনুসন্ধানের উপরেই নির্ভর করে আছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
এই চারটি পেলোডের মধ্যে প্রথমটি হল, ‘রেডিয়ো অ্যানাটমি অফ মুন বাউন্ড হাইপারসেন্সিটিভ আয়োনোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার’। সংক্ষেপে এর নাম রম্ভা।
তৃতীয় চন্দ্রযানের দ্বিতীয় পেলোড ‘চন্দ্রাস সারফেস থার্মো ফিজ়িক্যাল এক্সপেরিমেন্ট’। সংক্ষেপে এর নাম চ্যাস্টে। এই পেলোডটির একাধিক কাজের নমুনা ইতিমধ্যে ইসরো প্রকাশ করেছে।
তৃতীয় পেলোডের নাম ‘ইনস্ট্রুমেন্টস ফর লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি’, সংক্ষেপে ইলসা। চাঁদের মাটির কম্পন মাপতে সাহায্য করছে এই পেলোড।
এ ছাড়া, বিক্রমের সঙ্গে চাঁদে পাড়ি দিয়েছে ইসরোর আরও একটি পেলোড। তার নাম ‘দ্য লেসার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে’। সংক্ষেপে যাকে এলআরএ বা অ্যারে বলা হচ্ছে।
চাঁদের মাটিতে এই চতুর্থ পেলোডটিই ইসরোর ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। কারণ, এলআরএ-র কাজ শুরু হবে বাকিরা ঘুমিয়ে পড়লে।
এলআরএ পেলোড ইসরো তৈরি করেনি। ভারতে তা তৈরিও হয়নি। এই পেলোডটি বানিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। নাসার গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে তৈরি করা হয়েছে এলআরএ।
নাসা জানিয়েছে, এলআরএ বিদ্যুৎ বা কোনও রকম সৌরশক্তি ছাড়াই কাজ করতে পারে। অন্যদের কাজ শেষ হলেই সে তার কাজ শুরু করবে। অন্যদের কাজে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তাই এই ব্যবস্থা।
প্রতিফলিত লেজার রশ্মি ব্যবহার করবে এলআরএ। এটিতে ১.২৭ সেন্টিমিটার ব্যাসের মোট আটটি গোলাকার রেট্রোরিফ্লেক্টর রয়েছে। সেগুলি ৫.১১ সেন্টিমিটার ব্যাসের ১.৬৫ সেন্টিমিটার উঁচু একটি গোলাকৃতি প্ল্যাটফর্মের উপর স্থাপিত।
এলআরএ-র ভর মাত্র ২০ গ্রাম। এর রেট্রোরিফ্লেক্টরগুলি বিভিন্ন কোণ অনুযায়ী স্থাপন করা হয়েছে, যাতে সেগুলি সঠিক ভাবে লেজার রশ্মির প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
চাঁদের বাইরে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের কক্ষপথে থাকা কোনও মহাকাশযানের লেজার রশ্মি এলআরএ পেলোডের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে। সে ভাবেই কাজ করবে পেলোডটি।
চাঁদের রাতে কী কাজ করবে এলআরএ? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দূরের মহাকাশযানটির সঙ্গে এলআরএ-র সম্পর্ক স্থাপিত হলে তার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা হবে। তা থেকে পৃথিবীর দূরত্বও সহজেই অঙ্ক কষে বার করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
এর ফলে পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদের গতিবিধি আরও স্পষ্ট হবে বিজ্ঞানীদের কাছে। ভবিষ্যতের চন্দ্র অভিযানের ক্ষেত্রে এই তথ্য অনেক কাজে লাগবে। এলআরএ-র তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের অভিযানগুলি পরিকল্পনা করবে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
চাঁদের মাটিতে তৃতীয় চন্দ্রযানের অন্য যন্ত্র ঘুমিয়ে পড়লেও এলআরএ-র আয়ু এত দ্রুত ফুরিয়ে যাবে না। বরং দীর্ঘ দিন তা কাজ করবে বলেই আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। ফলে ভবিষ্যতের চন্দ্র অভিযানের রসদ সংগ্রহ করতে পারবে এই পেলোড।
গত ২৩ অগস্ট চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম। তার পেট থেকে বেরিয়ে এসেছে রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদে ঘুরে ঘুরে রোভার নানা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কাজ করছে ল্যান্ডারের পেলোডগুলিও।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে যে অংশে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করেছে, সেখানে এর আগে কেউ পৌঁছতে পারেনি। রাশিয়াও একই জায়গায় মহাকাশযান পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।