বায়ুসেনাকে শক্তিশালী করতে ভারতের এক প্রতিবেশী দেশের দ্বারস্থ হচ্ছে অপর প্রতিবেশী দেশ। খুব শীঘ্রই চিনের কাছ থেকে জে-৩১ যুদ্ধবিমান কিনতে চলেছে পাকিস্তান।
চিনে তৈরি জে-৩১ ‘স্টিলথ’ যুদ্ধবিমান আমেরিকার যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ এবং এফ-২২ বিমানের অনুলিপি। আর সেই যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের হাতে এলে তা এশিয়ার আকাশে ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বর্তমানে প্রধান যুদ্ধবিমান হিসাবে পাকিস্তানের হাতে রয়েছে এফ-১৬। তবে চিনের জে-৩১ হাতে আসার পর সেই যুদ্ধবিমান এফ-১৬কে প্রতিস্থাপন করতে পারে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’কে তেমনটাই জানিয়েছে পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সূত্র।
এই সপ্তাহের শুরুতে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলি পাক বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমদ বাবরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল যে, জে-৩১ কেনার বিষয়ে চিনের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে পাকিস্তান।
বাবর বলেছিলেন, ‘‘জে-৩১ কেনা নিয়ে চিনের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। এই যুদ্ধবিমান অদূর ভবিষ্যতে পাক বায়ুসেনার অংশ হতে প্রস্তুত।’’
পাকিস্তানের বায়ুসেনার হাতে ইতিমধ্যেই চিনের দু’টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। যার মধ্যে একটি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান। যা সামরিক মহলে ‘থান্ডার’ নামেও পরিচিত। তবে এই বিমান তৈরিতে চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তানও। ২০২১ সালে নাইজেরিয়াও চিনের কাছ থেকে এই যুদ্ধবিমান কিনেছিল।
১৫০টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান ছাড়াও পাকিস্তানের কাছে ২৫টি জে-১০সি ‘ভিগোরাস ড্রাগন’ যুদ্ধবিমান রয়েছে।
তবে চিনের কাছ থেকে নতুন করে জে-৩১ কেনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই দেখছেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা।
ভারতের হাতে এখনও কোনও ‘স্টিলথ’ যুদ্ধবিমান নেই। তবে বর্তমানে দেশীয় পদ্ধতিতে একটি স্টিলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করছে ভারত। সেই ‘অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (এএমসিএ)’ ২০৩০ সালের মধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে চলে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতীয় বায়ুসেনার চিন্তন শিবিরের উচ্চপদস্থ কর্তা তথা প্রাক্তন এয়ার মার্শাল অনিল চোপড়া ‘দ্য প্রিন্ট’কে জানিয়েছেন, জে-৩১ নিয়ে এখনই এত হইচই করার মতো কিছু হয়নি। এখনও বিমানের নতুন সংস্করণ পুরোপুরি তৈরিই হয়নি।
অনিল আরও জানিয়েছেন, জে-৩১ একটি ছোট বিমান এবং প্রধানত নৌবাহিনীর অংশ হিসাবেই সেই যুদ্ধবিমান তৈরি করছে চিন। তিনি বলেন, “জে-৩১ এখনও চিনের বিমানবাহিনীতেই যোগ দেয়নি। বিমানটি এখনও সম্পূর্ণ ভাবে তৈরিও নয়।’’
অন্য দিকে, প্রাক্তন এয়ার মার্শাল দীপ্তেন্দু চৌধুরীর কথায়, অতীতে চিনে তৈরি যুদ্ধবিমানগুলিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবুও সেগুলি বাজারে ছেড়েছে বেজিং।
জে-৩১ পাকিস্তানের হাতে এলে তা কি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বায়ুসেনার ক্ষমতার ভারসাম্যকে বদলে দিতে পারে? উত্তরে দীপ্তেন্দু বলেন, ‘‘পাকিস্তান দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা করছে।’’
দীপ্তেন্দু আরও বলেন, “আমেরিকা থেকে সাহায্য আসবে কি না তা নিয়ে নিশ্চিত নয় পাকিস্তান। তাই এই সিদ্ধান্ত। এক দল ভাল যোদ্ধা পেয়ে গেলেই ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে যেতে পারে না। তবে এটা ঠিক যে, যুদ্ধবিমানটি পাকিস্তানের বায়ুসেনার শক্তি বৃদ্ধি করবে।’’
মনে করা হয়, চিনের সেনাবাহিনী ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি (এএলএ)’র বায়ুসেনার ৬০-৭০ শতাংশ চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান দিয়ে তৈরি।
মিলিটারি-টুডে ডট কম-এর একটি প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ২০০৭ সালে আমেরিকার এফ-৩৫ এবং এফ-২২ যুদ্ধবিমানের ব্লুপ্রিন্ট এবং অন্যান্য গোপন নথি চিনের হাতে চলে এসেছিল। মনে করা হচ্ছে সেই নথির তথ্য ধরেই জে-৩১ যুদ্ধবিমানের নতুন সংস্করণটি তৈরি হচ্ছে।