শত্রু দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাকে খতম করে দিয়েছে ইজ়রায়েল। তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের সামরিক নেতা সইদ রেজ়া মৌসাভির।
সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে মৌসাভিকে হত্যা করেছে ইজ়রায়েল। তিনি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সেনাকর্তা। দীর্ঘ দিন ধরে সিরিয়ায় থেকে ইরানি সামরিক অভিযান পরিচালনা করছিলেন মৌসাভি।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর পরামর্শদাতা হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মৌসাভির। দামাস্কাসের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
জেরুজালেম পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে দামাস্কাসে অভিযান চালায় ইজ়রায়েলি বাহিনী। সয়েদা জ়েইনাব এলাকায় তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় দামাস্কাস বিমানবন্দর এলাকা।
ওই হামলাতেই মৌসাভির মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে মারা গিয়েছেন আরও দুই ইরান-ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্তা। এই ঘটনার পরেই তেহরানের তরফে কড়া বিবৃতি জারি করা হয়েছে।
ইরান জানিয়েছে, মৌসাভির মৃত্যুর দিন থেকেই কাউন্টডাউন শুরু হল। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রত্যাঘাত হানবে তারা। হত্যা করা হবে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে।
তেহরানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘তেল আভিভকে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ওরা কূটনৈতিক চালে বড়সড় ভুল করে ফেলেছে। এই অপরাধের জবাব দেওয়া হবে। ফল ওদের ভুগতেই হবে।’’
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইস বলেই দিয়েছেন, ‘‘ইজ়রায়েলকে এই জঘন্য অপরাধের মূল্য দিতে হবে। এর ফল ওরা ভুগবে। পরিণতি ভাল হবে না।’’
দীর্ঘ দিন ধরে সিরিয়ায় থেকে কাজ করছিলেন মৌসাভি। তিনি সিরিয়ার পাশাপাশি লেবাননের সামরিক কার্যাবলিও নিয়ন্ত্রণ করতেন। ফলে হুথি এবং হেজ়বুল্লাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
মৌসাভির মৃত্যুতে এই দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ইরানের তরফেও তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। সমুদ্রে একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে তেহরান।
সূত্রের খবর, মৌসাভির মৃত্যুতে ইরান এতটাই ক্ষিপ্ত যে, তাদের তরফে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে। কী ভাবে নেতানিয়াহুকে হত্যা করা হবে, তার বর্ণনা রয়েছে সেই ভিডিয়োয়।
ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড ফোর্সের প্রাক্তন কমান্ডার জেনারেল জাফর আসাদি জানিয়েছেন, এর আগেও মৌসাভিকে হত্যার চেষ্টা করেছিল ইহুদি সেনা। সে বার তারা ব্যর্থ হয়।
মৌসাভিকে হত্যার দায় কিন্তু স্বীকার করেনি ইজ়রায়েল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই হত্যাকাণ্ড ইজ়রায়েলের বৃহত্তর পরিকল্পনার অঙ্গ।
অনেকে বলছেন, নেতানিয়াহু পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধকে আরও সম্প্রসারণ করতে চাইছেন। তাদের প্রাথমিক ‘টার্গেট’ এখন আর হামাস নয়। বরং ইরানের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায় ইজ়রায়েল। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধের পরিধি এবং ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যোআভ গ্যালান্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সাতটি দিক থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। তালিকায় রয়েছে ইরান, ইরাক, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন।
গাজ়া এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও ইজ়রায়েলের শত্রু রয়েছে বলে দাবি গ্যালান্টের। এই সাত এলাকার মধ্যে যে দিক থেকে তাঁদের উপর হামলা চালানো হবে, সে দিকেই বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দেবে ইজ়রায়েল। তারাই তখন হবে নেতানিয়াহুর ‘টার্গেট’।
হামাসের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েল যুদ্ধঘোষণা করার পর থেকেই ইরান প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর পক্ষ নিয়েছিল। তেহরান হামাসকে অর্থ এবং সামরিক হাতিয়ার দিয়ে সাহায্য করেছে বলেও শোনা যায়।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ আর নিছক ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইরান, লেবানন, সিরিয়া-সহ একাধিক দেশ যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
আমেরিকার সমর্থন রয়েছে ইজ়রায়েলের কাছে। অনেকে মনে করছেন, পশ্চিম এশিয়ার এই যুদ্ধই বাড়তে বাড়তে আগামী দিনে জন্ম দিতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের।