International Mother Language Day

International Mother Language Day: মাতৃভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখতে ‘মুরাদ টাকলা’ লড়ছে লড়বে

এই ডাকের পিছনে একটি কাহিনি আছে। আনুমানিক ২০১২ সালে ফেসবুকে জয়ন্ত কুমার নামে এক ব্যক্তি একটি মন্তব্য করেন ‘বাংলিশ’-এ।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৪১
Share:
০১ ২২

ফেসবুক বা টুইটারে একাধিক অ্যাকাউন্ট। রাশি রাশি ফলোয়ার। নেটমাধ্যমে মাঝে মাঝেই ঢেউ ওঠে তাঁকে নিয়ে। ‘মুরাদ টাকলা’। এই নামেই পরিচিত তিনি। সমাজ ও সংস্কৃতি সচেতন নেটাগরিকরাও কিন্তু তাঁর নামের পিছনে ‘বডি শেমিং’-এর কোনও উদ্দেশ্য দেখতে পান না। স্বচ্ছন্দে, সাবলীল ভাবে ভাইরাল হতে থাকে মুরাদ টাকলার পোস্ট। ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামের অলিগলি পেরিয়ে সেই সব পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপের মহাসমুদ্রে।

০২ ২২

নেটমাধ্যমের খ্যাতনামী ‘মুরাদ টাকলা’ কিন্তু কোনও এক জন ব্যক্তি নন। নেটমাধ্যমে ইংরেজি হরফে বাংলা লিখতে গিয়ে যাঁরা ভুল ভাবে বিকৃত বাংলা বা ‘বাংলিশ’ লেখেন, তাঁদেরকেই ডাকা হয় ‘মুরাদ টাকলা’ নামে। এই ডাকের পিছনে একটি কাহিনি আছে। আনুমানিক ২০১২ সালে ফেসবুকে জয়ন্ত কুমার নামে এক ব্যক্তি একটি মন্তব্য করেন ‘বাংলিশ’-এ। তিনি লিখতে চেয়েছিলেন, ‘মুরোদ থাকলে যুক্তি দিয়া কথা বল, ফালতু পিক দিছস কেন? লেখাপড়া কইরা কথা বল।’ কিন্তু যা সেই পোস্টে যা দাঁড়িয়েছিল, তা সঙ্গের ছবিতে দৃশ্যমান।

Advertisement
০৩ ২২

এর পর থেকে এই ধরনের মন্তব্য সংগ্রহে নেমে পড়েন বাংলাদেশের বেশ কিছু নেটাগরিক। তাঁদের উৎসাহে তৈরি হয় ‘মুরাদ টাকলা’-র পেজ। এক থেকে বহু হয় মুরাদ টাকলা। বাড়তে থাকে পেজ ও কমিউনিটি-র সংখ্যা। ‘মুরাদ টাকলা’-র ডিপি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে বিচিত্র সব ছবি। তার মধ্যে নারকেলের ছবির ব্যবহার নজর কাড়ে রসিকজনের।

০৪ ২২

‘মুরাদ টাকলা’ গ্রুপগুলি থেকে করা উদ্ভট বাংলা অথবা ‘বাংলিশ’-এ লেখা কমেন্টগুলির সঠিক পাঠোদ্ধার নিয়ে শুরু হয় মজার খেলা। নেটাগরিকরা সোৎসাহে অংশ নিতে শুরু করেন সেই খেলায়। উদাহরণ স্বরূপ কিছু মন্তব্য এবং তার সঠিক পাঠ রাখা হল এই গ্যালারিতে। যেমন সঙ্গের মন্তব্যটিতে বলার চেষ্টা করা হয়েছিল— ‘তুই বদমাশ/ তোর কারণে আপুর ঘর ভেঙেছে/ তুই পপিকে আঘাত করেছিস/ তুই কিসের নায়ক/ তুই নায়কের (মতো) কথা পারিস না/ তুই গুন্ডামিতে যা/ টোকাইগিরিতে যা/ বদমাশিতে যা’। (‘টোকাই’ শব্দটি একান্ত ভাবে বাংলাদেশি। এর অর্থ ‘অনাথ’ বা নিঃস্ব’)

০৫ ২২

) উদ্ভট বাংলা যে শুধু নেটমাধ্যমে ঘোরাফেরা করে, তা নয়। প্রাত্যহিক জীবনের আনাচে কানাচে ভাষা-বিপর্যয়। এমনকি শৌচাগারও তার ব্যতিক্রম নয়।

০৬ ২২

ভয় পাবেন না। এখানে ‘ফুচকা অ্যান্ড কফি হাউস’ লেখার বাসনা ছিল, অন্য কিছু নয়।

০৭ ২২

সরলার্থ: ‘রিলেশনের প্রথমে অনেকে বলে, তুমি আমার অক্সিজেন। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না... তা হলে যখন রিলেশন পুরনো হয়ে যায়, তখন কি কার্বন ডাই অক্সাইড হয়ে যায়? কারণ, কার্বন ডাই অক্সাইড মানুষ ত্যাগ করে... আর রিলেশন পুরনো হলেও অনেকে ব্রেক আপ করে দেয়...’।

০৮ ২২

ভয় পাবেন না। ‘ভৌতিক’ কিছু নয়। নেহাতই মাংসের একটি পদ। প্রসঙ্গত, ‘মেজবান’ বা ‘মেজওয়ান’ একটি পারসিক শব্দ, যার বঙ্গার্থ ‘কোনও ভোজসভার আহ্বায়ক বা আপ্যায়নকারী’।

০৯ ২২

‘পাচফুট’ অর্থে পঁচ ফুট নয়, ‘পাসপোর্ট’। আর ‘ছাইচ’ হল ‘সাইজ। ‘ইছকেন’ যে ‘স্ক্যান’, তা রসিকজন বুঝবেন।

১০ ২২

সরলার্থ: দূরে চলে গেলে সবাই ভুলে যায়। কাছে থাকলে সবাই মনে রাখে, এটাই জীবন।

১১ ২২

সরলার্থ: যেমন পানি ছাড়া মাছ দুর্বল, তেমনই আটা ময়দা ছাড়া মেয়েরা দুর্বল। (এর নিহিতার্থ বোঝা অবশ্য শিবের বাবারও অসাধ্য)

১২ ২২

খুবই লোভনীয় খাবার। ইন্ডিয়ান চিকেন দোসা। উপরে পোস্ট-কর্তার মন্তব্যটিও মনোগ্রাহী।

১৩ ২২

খুবই জটিল পোস্ট। লেখক বলতে চেয়েছেন— ‘শিলাবৃষ্টি আছে, মুন্নি-বৃষ্টি নেই কেন বলেন তো?’ (ভাবসূত্র: ‘শিলা কি জওয়ানি’ আর ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি’ শীর্ষক দু’খানি জনপ্রিয় বলিউডি গান)

১৪ ২২

‘ড্যাগারে শোন’ দেখে ঘাবড়াবেন না। ‘ড্যাগার’ অর্থাৎ ছুরিতে শান দেওয়ার কথা বলা হয়নি। দোকানের ‘ডেকরেশন’ বোঝাতে চাওয়া হয়েছে মাত্র।

১৫ ২২

‘কিলিনিক’ অর্থাৎ ‘ক্লিনিক’। আর ‘আলতা সোনো’ খুবই সাধারণ বিষয়। ‘আলট্রাসোনোগ্রাফি’।

১৬ ২২

এমনিতেই জীবনে সমস্যার অন্ত নেই! তার উপরে দাম দিয়ে কেনে কে? আসলে ‘সামোসা’-র কথা বলা হয়েছে। (মাংসের পুর ভরা ছোট আকারের শিঙাড়া বাংলাদেশে সামোসা বা সামোচা নামে পরিচিত)

১৭ ২২

একে তো ‘লঞ্চ’ (লাঞ্চ) তার উপরে ‘চিল্ড্রেন ভুনা’, ‘বেগম ভাজি’। ভুলেও ভাববেন না, ইনি কোনও নরমাংসভোজী। চিকেন ভুনা আর বেগুন ভাজি দিয়ে ভাত খেতে চাইছেন মাত্র।

১৮ ২২

সরলার্থ: খারাপ তখনই লাগে, যখন কাছের মানুষ অবহেলা করে ফেসবুকে ব্লক মারে।

১৯ ২২

‘বাগ’ মানে কি ছারপোকা? নাকি অন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো ‘বাগ’? আচ্ছা, ‘বাগ’ মানে ‘বাঘ’ নয়তো? ছবি দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। (পরিবেশ সচেতন পোস্ট। ‘বাঘ’ ধরা সর্বত্রই নিষিদ্ধ বাস্তুতান্ত্রিক কারণে।)

২০ ২২

ইচ্ছা হলে ‘হড্ডক’ খেয়ে দেখতে পারেন। ভুলেও কিন্তু ‘হট ডগ’ খাবেন না। কামড়ে দেবে!

২১ ২২

‘মুরাদ টাকলা’ নামের গ্রুপগুলি মূলত চালান বাংলাদেশি নেটাগরিকরা। কেন চালান? এর উত্তর তাঁরা নিজেরাই রেখেছেন তাঁদের একটি ফেসবুক গ্রুপের পরিচিতিতে। সেখানে ‘অ্যাবাউট’ অংশে লেখা আছে— ‘ভাষা বিকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলুক অবিরাম’।

২২ ২২

দু’পার বাংলাতেই বাংলা ভাষা যে ঘোর সঙ্কটের মধ্যে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাস্তার মোড়ের বিজ্ঞাপনী প্রচার থেকে নেটমাধ্যম, পরীক্ষার খাতা থেকে প্রেমপত্র— কোথায় না ঘটছে ভাষা-বিকৃতি। সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের দেশ থেকে আজও লড়াই চালাচ্ছে শুদ্ধ মাতৃভাষার পক্ষে। লড়াই জারি থাকুক বিশ্বের সর্বত্র। শুদ্ধ হোক মাতৃভাষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement