যৌনতার ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতানো! এমন প্রতারণার অভিযোগ সম্প্রতি অহরহ প্রকাশ্যে আসছে। যা ‘সেক্সটরশন’ নামেও পরিচিত। এ বার তেমনই এক অপরাধের চক্রীকে পাকড়াও করল পুলিশ। তাঁর নাম জসনীত কউর।
ইনস্টাগ্রামে এক জন প্রভাবী (ইনফ্লুয়েন্সার) হিসাবে পরিচিত জসনীত। এই সমাজমাধ্যমকে কাজে লাগিয়েই অপরাধের জাল বুনেছিলেন পঞ্জাবের তরুণী।
সমাজমাধ্যমে খোলামেলা পোশাকে নিজেকে মেলে ধরতেন এই তরুণী। অভিযোগ নিজের নগ্ন ছবি দেখিয়ে বিত্তবানদের প্রলোভিত করতেন। তার পর তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে চ্যাট করতেন।
পরে সেই চ্যাট ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিত্তবানদের কাছ থেকে মোটা টাকা হাতাতেন বলে অভিযোগ উঠেছে জসনীতের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জসনীতকে।
জসনীতের ঘটনা মনে করাচ্ছে ওড়িশার ‘সিরিয়াল ব্ল্যাকমেলার’ অর্চনা নাগের কথা। গত বছর অর্চনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বেছে বেছে প্রভাবশালীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে তাঁদের যৌনতার ফাঁদে ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতাতেন বলে অভিযোগ উঠেছে অর্চনার বিরুদ্ধে। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল ওড়িশায়।
অর্চনার মতোই ‘সেক্সটরশন’-এর কারবার চালাতেন জসনীত। নিশানা করতেন ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীদের।
মোহালির বাসিন্দা জসনীত। তাঁর আরও একটি নাম রয়েছে। সেটি হল রাজবীর কউর। তবে জসনীত নামেই বেশি পরিচিত তিনি।
ইনস্টাগ্রামে জসনীতের অনুরাগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়! প্রায় ২ লক্ষ অনুরাগী রয়েছে তাঁর।
ইনস্টাগ্রামে নিজেকে ‘অভিনেত্রী’, ‘মডেল’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন জসনীত। ‘ইনস্টাগ্রাম প্রভাবী’ হিসাবেই পরিচিত তিনি।
শুধু ইনস্টাগ্রাম নয়। একাধিক সমাজমাধ্যমে জসনীতের প্রোফাইল রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে টেলিগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটও।
কী ভাবে প্রতারণার কারবার চালাতেন জসনীত? পুলিশ সূত্রে খবর, ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীদের সঙ্গে খোলামেলা চ্যাট করতেন। এমনকি, তাঁদের নগ্ন ছবিও পাঠাতেন। পরে সেই চ্যাট ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতাতেন জসনীত।
বেছে বেছে পুরুষ অনুরাগীদের সঙ্গে চ্যাট করতেন মোহালির এই তরুণী। বিশেষত, বিত্তশালীদের নিশানা করতেন তিনি। প্রথমে তাঁদের সঙ্গে চ্যাট করতেন, তার পর তাঁদের টাকা পাঠাতে বলতেন। সেই টাকা দিতে অস্বীকার করলে চ্যাট ফাঁস করার হুমকি দিতেন জসনীত।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ভয় দেখানোর জন্য গ্যাংস্টারদের সাহায্য নিতেন জসনীত।
বিত্তশালীদের যৌনতার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতানোর কারবার করে বিলাসবহুল জীবন ভোগ করতেন জসনীত। কী ভাবে পর্দাফাঁস হল জসনীতের?
২০২৩ সালের ১ এপ্রিল লুধিয়ানার মডেল টাউন থানায় জসনীতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন সেখানকার এক ব্যবসায়ী।
তাঁর অভিযোগ, গত বছর নভেম্বর মাসে হোয়াটসঅ্যাপে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন তিনি। ফোনে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়। এমনকি, টাকা না দিলে পরিণাম ভাল হবে না বলেও তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়।
এই অভিযোগের ভিত্তিতেই জসনীতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর বিএমডব্লিউ গাড়ি, মোবাইল ফোন। ২০০৮ সালেও একই অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছিল জসনীতকে।
জসনীতের সহযোগীর বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করা হয়েছে। তাঁর নাম লাকি সান্ধু। লাকির রাজনৈতিক যোগ রয়েছে। তিনি যুব কংগ্রেস নেতা।
পুলিশ জানিয়েছে, জসনীত যাঁদের ব্ল্যাকমেল করতেন, তাঁদের ফোন করে ভয় দেখাতেন লাকি।
‘সেক্সটরশন’ রুখতে তৎপর হয়েছে পুলিশ। সাধারণ মানুষকে সতর্কও করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরও এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বিপাকে পড়ছেন অনেকে। অর্চনার পর জসনীতের ঘটনাও তারই প্রমাণ।