অর্থনৈতিক প্রযুক্তিতে ক্রমে উন্নতি করছে দেশ। আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। এ বার এই তালিকায় জুড়ল ইউপিআই এটিএম, যেখানে কার্ড ব্যবহার না করেই বার করা যাবে টাকা।
নতুন এই প্রযুক্তির নেপথ্যে রয়েছে হিটাচি পেমেন্ট সার্ভিস। ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআই)-এর সঙ্গে সহযোগিতায় নতুন এই প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে প্রতারকেরা আর কার্ড চুরি করে তা দিয়ে এটিএম থেকে টাকা বার করতে পারবে না।
শুধু হোয়াইট লেবেল এটিএমগুলিতেই মিলবে এই পরিষেবা। যে সব এটিএম কোনও সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্কের নয়, মালিক অন্য কোনও বেসরকারি সংস্থা, সেগুলিকে বলে হোয়াইট লেবেল এটিএম। যে কোনও ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে এই এটিএমগুলি থেকে টাকা তোলা যায়।
কী ভাবে এ সব এটিএম থেকে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা তোলা যাবে? এ সব এটিএমে ঢুকে মোবাইলে ইনস্টল করা যে কোনও ইউপিআই অ্যাপ খুলে কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে।
তার পর মোবাইলেই গোপন পিন দিতে হবে। তা করলে এটিএম যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসবে নোট।
এই প্রযুক্তিতে প্রতি বার ১০ হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। ইউপিআইয়ের মাধ্যমে দিনে সর্বোচ্চ লেনদেনের ঊর্ধ্বসীমা একই থাকবে।
এটিএম থেকে মোবাইলের ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে।
কী ভাবে প্রতারণা রুখবে নতুন এই প্রযুক্তি? এই প্রযুক্তিতে এটিএম থেকে টাকা তোলার জন্য কোনও ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
এর আগে প্রতারকেরা কার্ড চুরি করে বা কার্ডের পিন কোনও ভাবে জেনে নিয়ে তার মাধ্যমে এটিএমে ঢুকে টাকা তুলে নিতেন। কখনও কোনও দোকান বা শপিং মল থেকেও একই ভাবে জিনিস কিনে নিতেন।
কী ভাবে কার্ডের তথ্য পেতেন প্রতারকেরা? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এটিএমে বিশেষ এক ধরনের যন্ত্র প্রতিস্থাপন করতেন তাঁরা। এর ফলে কোনও গ্রাহক নিজের কার্ড এটিএমে ঢোকালে সেই কার্ডের নম্বর, পিন-সহ সমস্ত তথ্য প্রতারকদের হাতে চলে আসত। নতুন প্রযুক্তিতে আর কার্ড ব্যবহার করতে হবে না। ফলে প্রতারণার ঝুঁকিও থাকছে না।
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, নতুন এই প্রযুক্তি এতটাই উন্নত যে প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা ততটা সক্রিয় নয়, সেখানেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা তোলা যাবে।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কার্যপ্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে এই ইউপিআই এটিএম চালু করা হয়েছে।
দেশের সব হোয়াইট লেবেল এটিএমগুলি পরিচালনা করে হিটাচি পেমেন্ট সার্ভিস। দেশে এ রকম এটিএমের সংখ্যা প্রায় ৩,০০০। এই সবক’টিরই পরিচালনা করে তারা।
হিটাচি পেমেন্ট সার্ভিসের প্রধান সুমিল বিকামসে জানিয়েছেন, এই ইউপিআই এটিএমের মাধ্যমে দেশে সব থেকে দ্রুত টাকা লেনদেন করা যাবে। পরবর্তী সময় দেশে অনলাইন লেনদেনের অর্ধেকই হবে নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।
মনে করা হচ্ছে, শীঘ্রই সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই নতুন প্রযুক্তি। কী ভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করে এটিএম থেকে টাকা তোলা যাবে, তার ভিডিয়ো এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা।
গত বছর সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছিল, ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালে দেশে এটিএম প্রতারণা ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই প্রতারণাতে এ বার লাগাম পরানো যাবে বলে মত সুমিলের।