টি২০ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে ভারত। সেমিফাইনালের মঞ্চেই বিদায় নিয়েছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। কিন্তু মেলবোর্নে রবিবারের বিশ্বকাপ ফাইনাল একবারে ‘ভারতহীন’ হবে না।
রবিবার মেলবোর্নের মাঠে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে ভারত বনাম পাকিস্তান হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার আশায় ছিলেন অনেকেই। যাঁরা আশাহত হয়েছেন, জলের দরে বিকিয়ে দিয়েছেন ফাইনালের টিকিট।
তবে ভারত ফাইনালে না উঠলেও বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে ভারতীয় ছোঁয়া নিয়ে হাজির থাকবে এক নাবালিকা।
তার নাম জানকী এসওয়ার। মেলবোর্নের বাইশ গজে বল গড়ানোর আগে তার সুরেলা কণ্ঠে মাতবে স্টেডিয়াম।
১৩ বছরের জানকী ফাইনালের অন্যতম আকর্ষণ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই কন্যা ফাইনাল খেলা শুরু হওয়ার আগে গান গাইবেন মেলবোর্নে। তার সঙ্গে থাকবে অস্ট্রেলিয়ার নামকরা ব্যান্ড।
‘আইসহাউজ’ ব্যান্ডের সঙ্গে রবিবার পারফর্ম করবে জানকী। তাঁদের গানের তালে তালে ফাইনালের উন্মাদনা আলাদা মাত্রা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মেলবোর্নের স্টেডিয়ামে দর্শকসংখ্যা ৯০ হাজার। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ না হলেও ফাইনালের দিন স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ থাকবে বলেই আশাবাদী ক্রিকেট সংস্থা। সেই ৯০ হাজার দর্শককে গান শোনাবে ছোট জানকী।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই জানকীর জন্ম। সে বড়ও হয়েছে ক্যাঙারুর দেশেই। তবে তার শিকড় গাঁথা ভারতে। জানকীর বাবা-মা কেরলের বাসিন্দা।
জানকীর বাবা অনুপ দিবাকরণ, মা দিব্যা রবীন্দ্রন। কেরলের কোঝিকোড়ের বাসিন্দা তাঁরা। গত ১৫ বছর ধরে তাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় থাকছেন। তাঁদের মেয়ে জানকী জনপ্রিয়তা পায় গত বছর।
অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘দ্য ভয়েজ় অস্ট্রেলিয়া’। সেখানে গত বছর অংশগ্রহণ করে জানকী। সেই ছিল অনুষ্ঠানের কনিষ্ঠতম প্রতিযোগী। ‘দ্য ভয়েস অস্ট্রেলিয়া’-তে জানকীর গান শুনে মুগ্ধ হন সকলে। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ নিয়মিত এই রিয়্যালিটি শো দেখেন। তাঁদের কাছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত জানকীও তাই পরিচিত মুখ।
টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত জানকী। সংবাদমাধ্যমের কাছে সে জানিয়েছে, মেলবোর্নের মতো মাঠে এত মানুষের সামনে নিজের প্রতিভা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়ে তার কতটা ভাল লাগছে।
জানকী বলেছে, ‘‘বিশাল এমসিজি-র দর্শকের সামনে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি আমি। সারা পৃথিবীর মানুষ আমার গান শুনবে, আমাকে টিভিতে দেখতে পাবে। এটা একটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে।’’
জানকী আরও বলেছে, ‘‘আমার বাবা-মা খুব ক্রিকেট ভক্ত। ওঁদের মাধ্যমেই আমি জানতে পেরেছি যে, আমি কত বড় একটা সুযোগ পেয়েছি। শুনেছি মেলবোর্নের সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। রবিবারের অনুষ্ঠান এবং খেলা দেখার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।’’
তবে এত কিছুর মাঝেও ভারতের ফাইনাল না খেলার দুঃখ ভুলতে পারছে না জানকী। সংবাদমাধ্যমে সে হতাশার সুরে বলেছে, ‘‘ভারত যদি ফাইনাল খেলত, আমার আরও বেশি ভাল লাগত।’’
‘দ্য ভয়েজ় অস্ট্রেলিয়া’ থেকে জানকীর উত্থান শুরু। তার পর একাধিক অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই কিশোরী। মেলবোর্নে ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব, ‘ইন্ডিয়া ফ্যাশন উইক অস্ট্রেলিয়া’-তেও গান গাইতে দেখা গিয়েছে জানকীকে।
জানকীর গানের গলায় দর্শক এবং শ্রোতারা মুগ্ধ। তবে ‘দ্য ভয়েস অস্ট্রেলিয়া’-র মঞ্চে যা সব থেকে বেশি নজর কেড়েছে, তা হল জানকীর পোশাক। ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ ভারতীয় পোশাকে সেজে ‘দ্য ভয়েজ় অস্ট্রেলিয়া’-য় পারফর্ম করত জানকী।
রবিবার মেলবোর্নের মাঠেও জানকীকে ঐতিহ্যবাহী পোশাকেই দেখা যাবে। ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বের মঞ্চে তুলে ধরতে চায় জানকী। সেই সঙ্গে বহু-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার মাহাত্ম্য প্রচারেও সে আগ্রহী।
৬ বছর বয়স থেকে গান গাইছে জানকী। তাঁর পরিবারেও গানের আবহ ছিল। জানকীর বাবা এবং দুই কাকা সঙ্গীতচর্চা করেন। কাকাদের মধ্যে এক জন পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী। তাঁদের অনুপ্রেরণায় সঙ্গীতকে কেন্দ্র করেই কেরিয়ার গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগোচ্ছে জানকী।
অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা হলেও জানকী নিজের শিকড় ভুলে যায়নি। মালয়ালম ভাষাতেও সে কথা বলে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে জানকী কেরলের বাড়িতে যায়। সেখানে ঠাকুরমা এবং ঠাকুরদার সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসে জানকী।