সলমন খান, শাহিদ কপূরের মতো নায়কের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। পেশার জন্য নামও পরিবর্তন করেছিলেন। এক দশক অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত থেকেও বক্স অফিসে একটিও হিট ছবি উপহার দিতে পারেননি। বলিপাড়া থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যান তিনি। অথচ বর্তমানে উপার্জনের দিক থেকে তাবড় তাবড় নায়িকাকে টেক্কা দেন টিউলিপ জোশী।
১৯৭৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে জন্ম টিউলিপের। বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে সেখানে থাকতেন তিনি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বইয়ের একটি কলেজ থেকে পুষ্টিবিজ্ঞান এবং রসায়নে স্নাতক হন তিনি।
শৈশবে খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল টিউলিপের। কিন্তু কিশোরী বয়সে মডেলিং নিয়ে কেরিয়ার গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০০০ সালে এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন টিউলিপ।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জিততে না পারলেও বহু নামী সংস্থার বিজ্ঞাপন এবং ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন তিনি। একাধিক বিজ্ঞাপনে অভিনয়ও করেন তিনি।
অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ে তোলার তেমন ইচ্ছা ছিল না টিউলিপের। তবে বিয়েবাড়িতে টিউলিপকে দেখে পছন্দ হয় বলিপাড়ার এক খ্যাতনামী প্রযোজক-পরিচালকের। তার পরই হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান টিউলিপ।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, প্রযোজক-পরিচালক আদিত্য চোপড়ার প্রাক্তন স্ত্রী পায়েল খন্নার বান্ধবী ছিলেন টিউলিপ। আদিত্য এবং পায়েলের বিয়েতে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ। সেখানে টিউলিপকে দেখে পছন্দ হয়েছিল পাত্রের বাবা, বলিপাড়ার জনপ্রিয় প্রযোজক-পরিচালক যশ চোপড়ার। তার পরেই টিউলিপকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন তিনি।
যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরে কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে অভিনয় করেন টিউলিপ। হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের কাছাকাছি পৌঁছতে নিজের নাম পরিবর্তন করে সঞ্জনা রাখেন তিনি।
২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় ‘মেরে ইয়ার কি শাদি হ্যায়’ ছবিতে অভিনয় করেন টিউলিপ। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বিপাশা বসু, জিমি শেরগিল, উদয় চোপড়াও। কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি।
হিন্দি ভাষায় তেমন দক্ষতা ছিল না টিউলিপের। অভিনয়ের পাশাপাশি নানা ধরনের ভাষাও শিখতে শুরু করেন তিনি। হিন্দি ছাড়াও পঞ্জাবি, তামিল, তেলুগু-সহ বিভিন্ন ভাষা শিখে ফেলেন টিউলিপ।
‘দিল মাঙ্গে মোর!!!’, ‘ধোকা’, ‘সুপারস্টার’, ‘ড্যাডি কুল’, ‘রানওয়ে’, ‘হস্টেল’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন টিউলিপ। কিন্তু কোনও ছবিই বক্স অফিসে আয় করতে পারেনি। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার পর সঞ্জনার পরিবর্তে আবার নিজের নাম ব্যবহার করতে শুরু করেন টিউলিপ।
তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড় এবং পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেন টিউলিপ। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই সে ভাবে পরিচিতি পাননি তিনি। তার পরেই অভিনয়জগৎ থেকে সন্ন্যাস নেন টিউলিপ।
২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সলমন খান অভিনীত ‘জয় হো’ ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টিউলিপ। ‘জয় হো’তে অভিনয়ের পর আর হিন্দি ছবিতে কাজ করেননি তিনি।
ন’বছর আগে শেষ বারের মতো ‘এয়ারলাইন্স’ নামের একটি হিন্দি ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল টিউলিপকে। তার পর আর অভিনয়জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি তিনি।
সেনাবাহিনীতে কর্মরত ক্যাপ্টেন বিনোদ নায়ারের সঙ্গে সম্পর্কে আসেন টিউলিপ। বিনোদের সঙ্গেই সাত পাকে বাঁধা পড়েন তিনি। বিয়ের পর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন টিউলিপ।
বিয়ের পর বিনোদ এবং টিউলিপ দু’জন মিলে একটি কনসালটেন্সি এজেন্সি খোলেন। বর্তমানে টিউলিপ সেই সংস্থার অধিকর্তা।
পারিবারিক ব্যবসা থেকেই প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন টিউলিপ। উপার্জনের নিরিখে বলিপাড়ার নামকরা অভিনেত্রীদের টক্কর দেন তিনি।
নিজের নামে একটি ওয়েবসাইটও খুলেছেন টিউলিপ। সেই ওয়েবসাইটে নিজের পরিচয় এক জন অভিনেত্রী এবং বৈদিক শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ হিসাবে দেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে খুব একটা সক্রিয় নন টিউলিপ। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ২৩ হাজারের গণ্ডি পার করেছে।