১৯৯৫ সাল। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র মতো হিট ছবি দিয়ে বক্স অফিস কাঁপাচ্ছেন বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখ খান। একই বছরে তাঁর কেরিয়ারের ঝুলিতে এমন একটি ছবি যোগ হয় যা এখনও পর্যন্ত শাহরুখের কেরিয়ারে ‘সবচেয়ে ব্যর্থ’ ছবি বলে বলিপাড়ার দাবি।
নব্বইয়ের দশকে বলিউডের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেতাদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেন শাহরুখ। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র পর একই বছর মুক্তি পায় ‘কর্ণ অর্জুন’। পর পর শাহরুখের দু’টি ছবিই বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করে।
১৯৯৫ সালে শাহরুখের মোট সাতটি ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ এবং ‘কর্ণ অর্জুন’ হিট হলেও ওই বছরে মুক্তি পাওয়া ‘জমানা দিওয়ানা’ এবং ‘গুড্ডু’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
১৯৯৫ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় ‘ত্রিমূর্তি’। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মুকুল এস আনন্দ। ওই বছর শাহরুখ অভিনীত শেষ ছবি ছিল সেটি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, এখনও পর্যন্ত শাহরুখ যতগুলি ছবিতে অভিনয় করেছেন সেগুলির মধ্যে ‘ত্রিমূর্তি’ সবচেয়ে ব্যর্থ ছবি।
সুভাষ ঘাই প্রযোজিত ‘ত্রিমূর্তি’ ছবিতে শাহরুখের পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন অনিল কপূর, জ্যাকি শ্রফ, প্রিয়া তেন্ডুলকর, গৌতমী তাদিমালিয়া, অঞ্জলি জঠর, তিন্নু আনন্দ, সইদ জাফ্রের মতো একাধিক তারকা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১১ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছিল ‘ত্রিমূর্তি’ ছবিটি। সেই সময় যে ছবিগুলি মুক্তি পেত সেগুলির সঙ্গে তুলনা করলে বাজেটের দিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিল ‘ত্রিমূর্তি’।
তবে বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করতে পারেনি ‘ত্রিমূর্তি’। সারা ভারত জুড়ে মাত্র আট কোটি টাকার ব্যবসা করে শাহরুখের এই ছবিটি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, মুক্তির দিন বিপুল ব্যবসা করেছিল ‘ত্রিমূর্তি’। প্রথম কোনও ভারতীয় ছবি যা মুক্তির প্রথম দিনেই এক কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলে।
তবে ‘ত্রিমূর্তি’ ছবিটি মুক্তির পর লোকমুখে নিন্দা ছ়ড়াতে থাকায় ধীরে ধীরে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভিড় কমে যেতে থাকে।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘ত্রিমূর্তি’ ছবিতে শাহরুখের সহ-অভিনেতা হওয়ার কথা ছিল বলি অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের। এমনকি ছবির জন্য বেশ কয়েকটি দৃশ্য শুট করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু তার পর জেলবন্দি হয়ে পড়েন তিনি।
সঞ্জয়ের অনুপস্থিতিতে ‘ত্রিমূর্তি’ ছবির কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তার পর অনিল কপূরকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন ছবিনির্মাতারা। অনিল সে প্রস্তাবে রাজি হলে আবার নতুন করে শুরু হয় ছবির শুটিং।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘ত্রিমূর্তি’র। কিন্তু আবার নতুন করে শুটিং শুরু হওয়ায় মুক্তির দিন পিছিয়ে যায়।
নির্ধারিত তারিখের এক বছর পর ১৯৯৫ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ত্রিমূর্তি’। এর ফলে বাজেটও বেড়ে যায়।
মুকুলের কেরিয়ারের শেষ পরিচালিত ছবি ‘ত্রিমূর্তি’। এই ছবির পর সলমন খান এবং সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে ‘দস’ ছবির পরিচালনা শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি তিনি।
১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান মুকুল। ৪৫ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর কেরিয়ারের শেষ পরিচালিত ছবি হিসাবে থেকে যায় ‘ত্রিমূর্তি’।