স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা চিকিৎসায় খরচ না করে দুষ্টু ওয়েবসাইটে গিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন স্বামী। সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার কলোরাডোয়।
স্বামীর এই কীর্তিতে স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছিলেন ক্যানসারে আক্রান্ত ফার্মাসিস্ট মেলিন্ডা লাম।
মেলিন্ডা জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, পুত্রের ক্যারাটে ক্লাসের বেতন দিতে গিয়ে। মেলিন্ডা দেখেন, তিনি যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা দিতেন সেগুলি আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তখনই সন্দেহ হয় তাঁর।
এর পরেই স্বামীর সঙ্গে থাকা জয়েন্ট অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখেন মেলিন্ডা। দেখেন, কমপক্ষে ছ’টি ক্রেডিট কার্ডের সব টাকা খরচ করে ফেলেছেন তাঁর স্বামী। তাঁদের সঞ্চয় থেকে উড়িয়ে দিয়েছেন বহু টাকা।
আরও খতিয়ে দেখে মেলিন্ডা বুঝতে পারেন, পর্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্টের টাকা খরচ করেছেন স্বামী। মেলিন্ডা স্মরণ করেছেন, যখন তাঁর স্বামী এ ভাবে দু’হাতে টাকা ওড়াচ্ছেন, তখন স্তন ক্যানসারের জন্য কেমোথেরাপি নিচ্ছিলেন তিনি। মেলিন্ডার কথায়, ‘‘ওই নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের জন্য আমার জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছিল।’’
মেলিন্ডা আবিষ্কার করেন তাঁদের বাড়ির কম্পিউটারের প্রচুর টাকা কলম্বিয়ার বোগোটার বাসিন্দা লরা শাইন নামে এক মহিলার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এ-ও দেখেন যে, শাইন ওই বিশেষ ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট বানান।
মেলিন্ডা তাঁর স্বামীর চ্যাট খুলে দেখেন শাইন তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছেন। টাকাও চেয়েছেন। ডোমিনিকান রিপাবলিকের একটি রিসর্টে একসঙ্গে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন দু’জনে।
শাইনের অনলাইন প্রোফাইলে তাঁকে ওই ওয়েসাইটের ‘সবচেয়ে অদ্ভুত মেয়ে’ হিসাবে বর্ণনা করা ছিল। মেলিন্ডা দাবি করেছেন, ওই দুষ্টু ওয়েবসাইটে ১৩৫,০০০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা) খরচ করে ক্ষান্ত হয়েছিলেন তাঁর স্বামী। এমনকি, পেনশনের টাকাও তুলে নিয়েছিলেন স্বামী। দেউলিয়া হওয়ার পর স্বামীর উপর রেগে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন মেলিন্ডা।
মেলিন্ডা জানিয়েছেন, অবশেষে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বামীকে হাতেনাতে ধরেন তিনি। কিন্তু তিনি অসুস্থ জানা সত্ত্বেও স্বামী নাকি তাঁকে মারধর করেন। এমনকি, পাঁচ বছরের সন্তানকেও নাকি মাটিতে ফেলে দেন।
এক বার তাঁর স্বামী তাঁকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন বলেও দাবি করেছেন মেলিন্ডা। এর পরই পুলিশের দ্বারস্থ হন মেলিন্ডা। ছেলেকে নিয়ে বাড়িও ছাড়েন। যদিও পুলিশের কাছে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন মেলিন্ডার স্বামী।
মেলিন্ডা ছাড়াও ওই নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের জন্য ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আরও এক মহিলা। তিনি জানিয়েছেন, ওই ওয়েবসাইটে স্বামীর অশ্লীল ভিডিয়ো দেখার কারণেই নাকি তাঁদের বিয়ে ভেঙেছে। অন্য এক জন আবার দাবি করেছেন, তাঁর প্রেমিক অনুমতি ছাড়ায় তাঁদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ওই ওয়েবসাইটে আপলোড করেছেন।
অন্য দিকে, এক জন নাকি কুকুরের সঙ্গে যৌনক্রিয়ার ভিডিয়ো ওই ওয়েবসাইটে পোস্ট করে সমালোচনার মুখে পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের হয়।
প্রসঙ্গত, ওই নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট এবং সেই ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা প্ল্যাটফর্মটিকে সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়নের জন্য তৈরি একটি মাধ্যম বলে উল্লেখ করেন।
তবে অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বাড়তি টাকা আয় করার জন্য ওই ওয়েবসাইটে ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেন। সেই সব ছবি এবং ভিডিয়ো দেখার জন্য টাকা দিতে হয় গ্রাহকদের।
ওই ওয়েবসাইটটি নীলছবিকে মূলধারায় নিয়ে এলেও তা এমনই প্রভাব ফেলেছে যে তা অনেকের জীবন কঠিন করে তুলেছে। যেমন মেলিন্ডার সঙ্গে হয়েছে।
অভিযোগ, ওই ওয়েবসাইটে মাঝেমধ্যে এমন সব কন্টেন্টও ছাড়া হয় যা পোস্ট করা অপরাধের শামিল।
মেলবোর্নের লা ট্রোব ইউনিভার্সিটির গবেষক মেগান টাইলারের কথায়, ‘‘ওই ওয়েবসাইটে এমন কিছু ঘটছে যা স্বাভাবিক নয়। এটি সত্যিই নিয়ম মানছে না। এমনকি আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে এবং আমরা যাঁরা ওই সাইটে ঢুকি না, তাঁদের জীবনেও প্রভাব পড়ছে।’’
কিন্তু কী ভাবে গ্রাহকদের কাছে টাকা আদায় করা হয় ওই ওয়েবসাইটে? নগ্ন ছবি এবং ভিডিয়ো বিক্রি তো বটেই, বিভিন্ন যৌন সামগ্রী বিক্রি করেও গ্রাহকদের থেকে টাকা নেন কন্টেন্ট নির্মাতারা। মাঝেমধ্যে মোটা টাকা টিপস্ হিসাবেও চাওয়া হয়।
ওই ওয়েবসাইট শুধুমাত্র ২০২৩ সালে ১৩০ কোটি ডলারের ব্যবসা করেছে। শীর্ষস্থানীয় নির্মাতারা বছরে কোটি টাকাও উপার্জন করেছেন এখান থেকে।
সাইটের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে ফ্লোরিডা এবং আলাবামার সমুদ্রসৈকতে ওই ওয়েবসাইটের বিপক্ষে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।