এসএসসি নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় রাজ্যের অপসারিত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর তদন্ত শুরু করে ইডি। ২১ জুলাই পার্থের নাকতলার বাড়ি-সহ ১৫টি জয়গায় হানা দেন ইডির আধিকারিকেরা। তদন্ত চলাকালীন ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে হানা দেয় ইডি। আর সেখানে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করা হয়। যা এই ঘটনায় বাড়তি মাত্রা সংযোজন করে। এর পর থেকে অর্পিতার নামে থাকা একাধিক সম্পত্তিতে অভিযান চালিয়েছে ইডি।
২২ জুলাই অর্পিতার বাড়িতে দীর্ঘ অভিযান চালিয়ে ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি, ওই ফ্ল্যাট থেকে বহুমূল্যের গয়না ও বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করেন ইডির আধিকারিকেরা। এর পরই গ্রেফতার করা হয় অর্পিতাকে।
২৭ জুলাই বুধবারও বেলঘরিয়ার রথতলার একটি আবাসনে অর্পিতার নামে থাকা দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ইডির দল।
প্রথমে এই আবাসনের ‘২-এ’ ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালাতে যান ইডি আধিকারিকেরা। কিন্তু সেই ফ্ল্যাটের চাবি না মেলায় বাধ্য হয়ে তালা ভেঙে ঢুকতে হয় ইডি আধিকারিকদের।
তবে এই ফ্ল্যাট থেকে বিশেষ কিছু উদ্ধার হয়নি। অভিযান শেষে ইডির তদন্তকারী দল এই ফ্ল্যাটটি সিল করে বেরিয়ে যান।
এর পর এই আবাসনেই অর্পিতার ‘৮-এ’ ফ্ল্যাটটিতে অভিযান চালায় ইডি। আর এই ফ্ল্যাটে হানা দিয়েই থ হয়ে যান ইডি আধিকারিকেরা!
এই ফ্ল্যাট থেকে টাকা এবং সোনার ভান্ডার উদ্ধার করে তদন্তকারী দল। শুধু শোবার ঘর নয়, বাথরুম থেকেও প্যাকেট বন্দি টাকা উদ্ধার করা হয়।
বুধবার দুপুর থেকে শুরু হয় এই তল্লাশি অভিযান। বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত টানা ১৯ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে অর্পিতার এই ফ্ল্যাট থেকে নগদ উদ্ধার ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ করেন ইডি আধিকারিকেরা। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়, বেশ কয়েকটি সোনার বাট ও গয়না।
১ কেজি করে তিনটি সোনার বাট, আংটি, একাধিক মোটা হার, ছ’টি মোটা মোটা সোনার কাঁকন (বালা)-সহ একাধিক রকমারি সোনার গয়নাও উদ্ধার করা হয়। ইডি আধিকারিকদের বাজেয়াপ্ত করা ‘স্বর্ণভান্ডার’-এর মধ্যে দেখা যায় দু’টি সোনার ঘড়ি ও একটি সোনার পেন।
এই ফ্ল্যাট থেকে সব মিলিয়ে মোট ৪ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার সোনা উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি বেশ কিছু সম্পত্তি সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করা হয় বলেও ইডি সূত্রে খবর।
ওই একই দিনে কসবায় অর্পিতার রাজডাঙার বিনোদন সংস্থার অফিস ‘ইচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট’-এ যায় ইডির একটি দল। অর্পিতা ওই সংস্থার ডিরেক্টর বলেও দাবি করে ইডি।
সেখানে গিয়ে অন্য অভিযোগ আনা হয় অর্পিতার বিরুদ্ধে। রঞ্জিত কর নামে কসবার এক স্থানীয় কেব্ল ব্যবসায়ীর দাবি, ৯৫ রাজডাঙা রোড ঠিকানাটি তাঁর। অর্পিতার অফিসটির ঠিকানা আসলে ভুয়ো বলেও তিনি দাবি করেন।
ইডি সূত্রে খবর, অর্পিতার এই সংস্থার তথ্য এবং ঠিকানা পাওয়া যায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেই। যদিও সেই তথ্যের সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি।
বুধবার বেলঘরিয়ার আব্দুল লতিফ স্ট্রিটে অর্পিতার পৈতৃক বাড়িতেও ইডির অন্য একটি দল পৌঁছয়। ওই বাড়িতে থাকেন অর্পিতার মা। সেখানেও তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকেরা।
বুধবার বালিগঞ্জ প্লেস ইস্টের একটি বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছিল ইডি। সেখান থেকেও প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
ইডি সূত্রের খবর, ৮ নম্বর বালিগঞ্জ প্লেস ইস্টে একটি বাড়িতে ঢুকে একটি তালাবন্ধ লকার দেখতে পান তদন্তকারীরা। কী আছে লকারে? তা জানতে তালা খোলার চেষ্টা চালান ইডির তদন্তকারী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করে ইডি।
এর পর বৃহস্পতিতে উত্তর ২৪ পরগনার চিনার পার্কেও অর্পিতার একটি ফ্ল্যাটের হদিস পাওয়া যায়। চিনার পার্কের নোয়াপাড়ার পূর্বপাড়ায় রয়েল রেসিডেন্সি আবাসনের বি ব্লকের চার তলায় এই ফ্ল্যাটে আছে বলেই খবর পান ইডি আধিকারিকেরা।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে দাবি, ওই ফ্ল্যাটটির সন্ধান পাওয়া মাত্রই বিকেলে তল্লাশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফ্ল্যাটটি তালাবন্ধ অবস্থায় ছিল। ইডি সূত্রে খবর, ফ্ল্যাটের চাবি না মেলায় শেষ পর্যন্ত এই ফ্ল্যাটেও তালা ভেঙেই ভিতরে ঢোকেন তদন্তকারীরা। পরে অবশ্য ফ্ল্যাটটি লক করে দেওয়া হয়।
তল্লাশি শেষে এই ফ্ল্যাটটিও সিল করে দেন ইডি আধিকারিকেরা।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই ফ্ল্যাটগুলি ছাড়া অর্পিতার আরও বেশ কিছু সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি। সেই জায়গাগুলিতেও শীঘ্রই তল্লাশি চালানো হবে বলেও সূত্রের খবর।