তাপপ্রবাহের জেরে রাজ্যে নাজেহাল অবস্থা। সপ্তাহখানেক ধরেই গরম হাওয়া বইছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। দু’পশলা বৃষ্টির জন্য চাতকের মতো অপেক্ষায় মানুষ।
গরমে ঘর্মাক্ত অবস্থায় চোখেমুখে ঠান্ডা জল দিয়ে সামান্য আরাম পাওয়া গেলেও এখন যেন সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে গিয়েছে মুখ মোছার টিস্যু। এটি ফেসিয়াল টিস্যু নামে অধিক পরিচিত।
ঠান্ডা পানীয়ের পাশাপাশি এই গরমে রুমাল এবং ফেসিয়াল টিস্যুর বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘাম বেশি ক্ষণ জমে থেকে ত্বকের যেন কোনও রকম ক্ষতি না করতে পারে, সেই কারণে এই টিস্যু দিয়ে অনেকেই মুখ মোছেন।
কিন্তু ফেসিয়াল টিস্যু আদতে কী থেকে তৈরি হয় তা জানেন কি? এই টিস্যু আপনার ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর কি না সেই প্রশ্নের উত্তর কি জানা আছে?
অনেকাংশের মতে, সপ্তাদশ শতক থেকেই এই ফেসিয়াল টিস্যুর ব্যবহার শুরু হয়। জাপানিরাই সর্বপ্রথম এই টিস্যু ব্যবহার শুরু করেন। কিন্তু তখন একমাত্র সর্দি হলেই তাঁরা টিস্যু ব্যবহার করতেন। ধীরে ধীরে টিস্যুর চল নানা ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
জাপানিরা সর্দির সময় কাগজের ছোট ছোট টুকরোকে টিস্যু হিসাবে ব্যবহার করতেন। তবে এখন যে ধরনের টিস্যু ব্যবহৃত হয় তার আবিষ্কার ১৯২০ সালে।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাগজপত্রই টিস্যু তৈরির কাঁচামাল হিসাবে কাজে লাগে। সাধারণত, কম্পিউটার প্রিন্টারের কাগজগুলি এ ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়। তার কারণ এই কাগজগুলি খুব সহজেই ক্ষুদ্র এবং নরম তন্তু জাতীয় পদার্থে পরিণত হয়ে যায়।
প্রথমে ৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের প্রিন্টার পেপারকে পাল্পার নামের একটি বিশালাকার যন্ত্রের ভিতর ফেলা হয়। এই যন্ত্রই কাগজগুলিকে ছোট ছোট ফাইবার বা তন্তুতে পরিণত করে।
তন্তুতে পরিণত হওয়ার পর তা জলের সঙ্গে মেশানো হয়। জলে মেশানো এই তন্তুগুলি ‘পাল্প’ নামে পরিচিত।
পরে পাল্পার যন্ত্রের মধ্যে পাল্পের মধ্যে দিয়ে বাতাস চালনা করা হয়। কাগজের গায়ে কোনও কালি লেগে থাকলে তা বাতাসের সংস্পর্শে আসার ফলে তন্তুগুলি থেকে আলাদা হয়ে যায়।
যন্ত্রের ভিতর থেকে বাতাসের বুদবুদের মাধ্যমে কালিগুলি বাইরে বেরিয়ে যায়। তার পর কালিমুক্ত পাল্পগুলি রোলার যন্ত্রের মধ্যে ফেলা হয়।
পুরনো দিনের রিঙ্গার ওয়াশিং মেশিনের মতো রোলার যন্ত্রগুলি পাল্প থেকে নোংরা জল বার করে।
তার পর স্ক্রু কনভেয়রের মাধ্যমে পাল্পগুলি ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে পরিষ্কার জল দিয়ে পাল্প ধোয়া হয়।
জল দিয়ে ধোয়ার পর পাল্পগুলি টিস্যু তৈরির জন্য ব্যবহার করা যায়। পেপার মেশিনের মধ্যেই টিস্যু তৈরি করা হয়।
স্ক্রিন কনভেয়ার বেল্টের মধ্যে ফেলার পর আবার রোলারের ভিতর দিয়ে পাল্প থেকে জল বার করা হয়। এই জলই স্ক্রিন বেল্টের মধ্যে দিয়ে বাইরে নির্গত করা হয়।
পাল্পগুলি তার পর হট এয়ার ড্রায়ারের মধ্যে দিয়ে চালনা করা হয় এবং মেশিন থেকে তা দশ ফুট চওড়া পেপার শিটের আকারে বার করা হয়।
দশ ফুটের যে চওড়া রোলগুলি বার হয় তার দৈর্ঘ্য ১৬০০ মিটার। রোলগুলি তার পর কনভার্টিং মেশিনের ভিতর ভরে পেপারগুলিকে টিস্যুতে পরিণত করা হয়।
প্রথম স্টেশনের পেপার থেকে দু’টি রোল আলাদা করা হয়। পেপারের মধ্যে যদি কোনও রকম ভাঁজ থাকে তবে তা চাপ দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পরবর্তী স্টেশনে দু’টি রোলকে জুড়ে দু’টি প্লাই শিট তৈরি করা হয়। সাকশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিটগুলিকে এক জায়গায় আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
তার পর নির্দিষ্ট মাপ মেনে শিটগুলি কাটা হয়। তার পর প্লাই শিটগুলি ইন্টারলকিং পদ্ধতিতে মুড়ে রাখা হয়। প্রতি সেকেন্ডে মেশিন মারফত ১৬টি ফোল্ড করা যায়।
পাঁচ ফুট চওড়া মোড়ানো টিস্যুকে পরবর্তী স্টেশনে পাঠানো হয়। প্যাকিংয়ের আগে সেখান থেকে ৮০ থেকে ২৫০টি টিস্যুর শিটগুলি মাপ মতো আলাদা করে রাখা হয়।
কনভেয়র বেল্টের মাধ্যমে টিস্যুর শিট পরবর্তী স্টেশনে যায় যেখানে আট ইঞ্চির মাপ অনুযায়ী শিট থেকে টিস্যু কাটা হয়।
ইন্টারলকিং পদ্ধতিতে যে ভাবে শিটগুলি জুড়ে দেওয়া হয়েছিল তা আবার খুলে দেওয়া হয়। তৈরি হয়ে যায় ফেসিয়াল টিস্যু। সব শেষে এই টিস্যুগুলি বাক্সে ভরে কারখানা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।