হাতে-পায়ে চোট লাগলে শুরুতেই চিকিৎসকদের নিদান এক্স-রে। এক্স-রে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তবে চিকিৎসা শুরু করা হয়। মানুষের পাশাপাশি পশুদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসা পদ্ধতি একই।
পশুদের চোট লাগলে পশু চিকিৎসকরা প্রথমে তাঁদের এক্স-রে করানোর ব্যবস্থা করেন। সেই রিপোর্ট দেখে তাঁরা পশুর রোগটি আগে চিহ্নিত করেন। কোথায় চোট লেগেছে, তা কতটা গুরুতর, এক্স-রে রিপোর্ট ছাড়া সেই খুঁটিনাটি জানার উপায় নেই।
কিন্তু এক্স-রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে মানুষ যেমন বাধ্য, পশুরা সকলে তেমন বাধ্য হয় না। এক্স-রে করার সময় তাদের নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহা সমস্যায় পড়েন চিকিৎসকরা।
সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিয়োতে কিন্তু প্রচলিত সেই ধারণা ভেঙে গিয়েছে। পশু চিকিৎসকের এক ‘অতি বাধ্য’ রোগীর দেখা মিলেছে। সমাজমাধ্যমে যাকে নিয়ে চর্চা তুঙ্গে।
কথা হচ্ছে একটি হাতির এক্স-রে নিয়ে। ভাইরাল একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে দিব্যি এক্স-রে করছে হাতি। তার দ্বারা কারও কোনও অনিষ্ট তো দূর, এক্স-রে মেশিনের গায়ে সামান্য আঁচটুকুও লাগেনি।
এক চিকিৎসক এক্স-রে পরীক্ষার ল্যাবে নিয়ে এসেছিলেন বিশাল হাতিটিকে। সে নির্দ্বিধায় হেঁটে হেঁটে ল্যাবে ঢুকেছে। কারও কোনও কথা অমান্য করেনি।
যন্ত্রপাতি ভর্তি ল্যাবটিতে তার মতো বিশাল আকৃতির হাতি নেহাতই বেমানান। কিন্তু ঘরে সে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছে। ল্যাবে ঢুকে প্রথমে বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে হাতিটি। কোথা থেকে কী ভাবে যন্ত্রপাতি বার করা হচ্ছে, ধৈর্য ধরে তা দেখে সে।
এক্স-রে ল্যাবে হাতিটির সঙ্গে ছিল তার মাহুতও। তার কথা শুনে এর পর মেঝেতে এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে গজরাজ। এক্স-রে যন্ত্র দিয়ে তার ছবি তোলা হয়।
কাজের প্রয়োজনে এক বার হাতিটিকে মাথা তুলে আবার শুয়ে পড়তে বলা হয়। বাধ্য ছাত্রের মতো সব নির্দেশ পালন করেছে সে। যেন তার সঙ্গে কী হচ্ছে, তার চারপাশে কে কী করছে, সবটাই সে বুঝতে পারছে। সকলের সঙ্গে সহযোগিতাও করছে।
হাতির এমন কীর্তি দেখে নেটাগরিকরা বিস্মিত। অনেকে এই ভিডিয়োর নীচে অনেক রকম মন্তব্য করেছেন। কেউ বলেছেন, ‘‘মানুষও এত ধৈর্য ধরে থাকতে পারে না।’’ কেউ আবার বলেছেন, ‘‘কী সুন্দর প্রাণী! কী ভাবে আমরা এদের আঘাত করার কথা ভাবতে পারি!’’
বস্তুত, হাতির এক্স-রে করা অন্যান্য পশুর চেয়ে কঠিন। মূলত তাদের আকারের কারণেই এক্স-রে করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় চিকিৎসক কিংবা ল্যাব কর্মীদের। ভাইরাল হাতির ক্ষেত্রেও সে সম্ভাবনা ছিল।
বিশাল দেহ নিয়ে চামড়া এবং মাংসের আবরণ ভেদ করে হাতির হাড়ের ছবি তোলা সহজ নয়। এর জন্য বড়সড় জায়গার প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মেশিনের নীচে ছবি তোলার জন্য হাতিকে কাত করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।
শুধু তো এক্স-রে নয়, হাতির চিকিৎসায় এমআরআই থেকে শুরু করে সিটি স্ক্যান, প্রয়োজন হয় সব কিছুই। তা করতে গিয়ে পদে পদে আসে বাধা।
একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চিড়িয়াখানায় থাকা হাতিগুলি সাধারণত বেশি স্বাস্থ্যবান হয়। হাতির মাথা বেশি চওড়া হলে এমআরআই মেশিনে তা আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। নির্বিঘ্নে এক্স-রে করে বেরিয়েছে গজরাজ। হেলতে দুলতে এসে একই রকম দুলকি চালে ফিরে গিয়েছে আবার। তাকে নিয়ে আলোচনা তাই কিছুতেই থামতে চাইছে না।