Hamas

‘গাজ়ার লাদেন’! আরাফতের মোকাবিলায় ইয়াসিনকে হামাস গড়তে মদত দিয়েছিল ইজ়রায়েলই

প্যালেস্তিনীয়দের মুক্তি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ইরাসের আরাফতের মোকাবিলা করতে ‘প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’-এর বিরোধী শক্তি হিসাবে হামাসের উত্থানে মদত দিয়েছিল ইজ়রায়েল সরকার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
গাজা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:০২
Share:
০১ ২০

আল কায়দার ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের মিল ছিল অনেক। অভিযোগ, তাঁরা দু’জনেই রাষ্ট্রের তৈরি ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’। দু’জনেই প্রাক্তন মদতদাতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। নিহতও হয়েছিলেন ‘স্রষ্টার’ নির্দেশেই।

ছবি: সংগৃহীত।

০২ ২০

আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান লাদেনের উত্থানের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল আমেরিকা। প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ইয়াসিনকে প্রথম পর্যায়ে মদত যুগিয়েছিল ‘শত্রু দেশ’ আমেরিকারই বন্ধুরাষ্ট্র ইজ়রায়েল। ঘটনাচক্রে, দু’টি সিদ্ধান্তই বুমেরাং হয় দু’দেশের কাছে।

ছবি: সংগৃহীত।

Advertisement
০৩ ২০

আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারির বিরুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনীর প্রতিরোধে অংশ নিতে আরবের ধনকুবের পরিবারের সন্তান লাদেনকে সর্বতো ভাবে মদত দিয়েছিল আমেরিকা। সে সময়ই গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলের ‘তাস’ হয়ে উঠেছিলেন শেখ আহমেদ ইয়াসিন।

ছবি: সংগৃহীত।

০৪ ২০

ইজ়রায়েলের উদ্দেশ্য ছিল, প্যালেস্তিনীয়দের মুক্তি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ইরাসের আরাফতের মোকাবিলা করতে ‘প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’-এর বিরোধী শক্তি হিসাবে একটি সংগঠন গড়ে তোলা। সেই সূত্র ধরেই ইয়াসিনের উত্থান এবং হামাসের আত্মপ্রকাশ।

ছবি: সংগৃহীত।

০৫ ২০

ছেলেবেলায় কুস্তি অনুশীলনের সময় আঘাত পেয়ে চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়া ইয়াসিন তাঁর অননুকরণীয় বক্তৃতায় সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারতেন। সত্তরের দশকে আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে গাজ়া ভূখণ্ডে অনুরাগীদের বড়সড় বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

০৬ ২০

গোড়ার দিকে মিশরের শাসকদল মুসলিম ব্রাদারহুডের মদতপুষ্ট সংগঠন ‘ইমান-উল-মুসলিমিন প্যালেস্তাইন’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইয়াসিন। আরাফতের সংগঠন ‘ফাতা’-সহ বিভিন্ন প্যালেস্তিনীয় গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত পিএলও-র সঙ্গে যার সম্পর্ক ছিল ‘অম্লমধুর’।

ছবি: সংগৃহীত।

০৭ ২০

১৯৭৩ সালে গরিব প্যালেস্তিনীয়দের আর্থিক এবং সামাজিক সহায়তার জন্য ‘মুজমা-আল-ইসলামিয়া’ নামে একটি সংগঠন গড়ার জন্য ইজ়রায়েল সরকারের অনুমতি চেয়েছিলেন ইয়াসিন। প্রাথমিক ভাবে ইজ়রায়েল সরকার সম্মতি না দিলেও বছরখানেক পরে অনুমতি দিয়েছিল।

ছবি: সংগৃহীত।

০৮ ২০

‘মুজমা-আল-ইসলামিয়া’র নানা উন্নয়নমুখী কার্যকলাপ দ্রুত প্যালেস্তিনীয় আমজনতার মধ্যে ইয়াসিনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে। ‘সুযোগের’ অপেক্ষায় ছিল ইজরায়েলও। আরাফতের গুরুত্ব কমাতে বিকল্প ‘মুখ’ হিসাবে তাঁকে তুলে ধরা শুরু হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

০৯ ২০

সে সময় থেকেই সঙ্গে পিএলও-র সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন ইয়াসিন। ঘটনাচক্রে, সে সময় লেবানন এবং জর্ডনের সঙ্গে পিএলও নেতৃত্বের মতবিরোধ হয়েছিল। যার জেরে প্যালেস্তিনীয়দের কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে হামলাও চালানো হয়। পরিস্থিতির সুযোগ পান তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

১০ ২০

১৯৮৭-র ডিসেম্বরে প্যালেস্তিনীয় মুক্তি সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ‘আল-কায়দা আল মুয়াহদ্দা’ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ইন্তিফাদা’ (সর্বাত্মক অভ্যুত্থান) শুরু করেছিল। ঠিক সে সময়ই নয়া সংগঠন হামাস গড়ে সেই সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন ইয়াসিন।

ছবি: সংগৃহীত।

১১ ২০

১৯৮৭-র ১৪ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করা হামাস সংগঠনের পুরো নাম, ‘হারকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’ অর্থাৎ ‘ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন’। প্রতীক জ়েরুসালেমের হারম আল-শরিফ মসজিদের (ইজ়রায়েলিদের কাছে পরিচিত ‘টেম্পল মাউন্ট’ নাম) গম্বুজ এবং পবিত্র তরবারি।

ছবি: সংগৃহীত।

১২ ২০

ইয়াসিনের প্রধান দুই সহযোগী ছিলেন আবদেল আজিজ আল-রানতিসি এবং মাহমুদ আল-জ়হর। ঘটনাচক্রে, ইন্তিফাদায় অংশ নেওয়া অন্য সংগঠনগুলির সদস্যদের উপর ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ বেছে বেছে হামলা চালালেও হামাসের ‘ক্ষতি’ হয়েছিল অনেক কম।

ছবি: সংগৃহীত।

১৩ ২০

কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ‘ছবি’ বদলে যায়। ১৯৮৮ সালে ইয়াসিনের নেতৃত্বে হামাসের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মঞ্চ ‘পলিটিক্যাল ব্যুরো’র বৈঠকে গৃহীত হয় ‘হামাস চার্টার’। সেখানে ‘অধিকৃত আরব ভূখণ্ড’ থেকে ইজ়রায়েলি দখলদারি পুরোপুরি উৎখাতের ডাক দেওয়া হয়েছিল।

ছবি: সংগৃহীত।

১৪ ২০

১৯৮৯ সালে ইয়াসিনকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল ইজ়রায়েল। বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন জেলের সাজা হয়। প্রায় আট বছর আটক থাকার পরে জর্ডনের মধ্যস্থতায় মামাসের হাতে আটক দুই মোসাদ আধিকারিকের মুক্তির বিনিময়ে ছাড়া পান তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

১৫ ২০

১৯৯৩ সালে ইজ়রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে আমেরিকার মধ্যস্থতায় অসলো-১ চুক্তি সই করেন আরাফত। এই ঘটনায় ইজ়রায়েলি ফৌজের নিপীড়নের শিকার গাজ়ার প্যালেস্তিনীয় জনতা পিএলও-র উপর আস্থা হারায়। দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়ে শান্তিপ্রক্রিয়ার বিরোধী কট্টরপন্থী হামাসের।

ছবি: সংগৃহীত।

১৬ ২০

২০০৩ সালের জুলাই মাসে প্রথম ইজ়রায়েলে বিরুদ্ধে বড় হামলা চালায় হামাস। জেরুসালেমে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ২১ জনকে হত্যা করা হয়। দু’মাস পরে এর ‘জবাবে’ গাজ়ায় হামাসের ডেরায় হানা দেয় তেল আভিভের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। সূচনা হয় পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসের আর এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের।

ছবি: সংগৃহীত।

১৭ ২০

২০০৪ সালের ২২ মার্চ গাজ়ার একটি মসজিদে নমাজ শেষে হুইল চেয়ারে বেরোচ্ছিলেন ইয়াসিন। সে সময় ইজ়রায়েলি এএই-৬৪ অ্যাপাচে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তিনি নিহত হন। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর সহকারী এবং দেহরক্ষী-সহ বেশ কয়েক জনের।

ছবি: সংগৃহীত।

১৮ ২০

ইয়াসিন হত্যার এক মাসের মধ্যেই ২০০৪-এর ১৭ এপ্রিল একই কায়দার হামাস প্রধান আল-রানতিসিকে খুন করে ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা। কিন্তু তাতে হামাসের অগ্রগতি থামানো যায়নি। গাজ়ার পাশাপাশি পিএলও-র ‘গড়’ ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকাতেও তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে।

ছবি: সংগৃহীত।

১৯ ২০

২০০৬ সালে ১৩২ আসনের ‘প্যালেস্তাইন লেজিসলেটিভ কাউন্সিল’-এর ভোটে ৭৪টিতে জিতে গরিষ্ঠতা পায় হামাস। কিন্তু সংগঠনের প্রধান ইসমাইল হানিয়া ‘প্যালেস্তাইন জাতীয় কর্তৃপক্ষ’-এর প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হলেও ইজ়রায়েল এবং পশ্চিমি দুনিয়ার বাধায় তা সম্ভব হয়নি।

ছবি: সংগৃহীত।

২০ ২০

২০০৭ সালের মে মাসে মাত্র পাঁচ দিনের লড়াইয়ে ‘প্যালেস্তাইন জাতীয় কর্তৃপক্ষ’-এর নিরাপত্তা বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে গাজ়ার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ পায় হামাস বাহিনী। এর পর ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্যালেস্তাইন সরকারের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে শুরু করে তারা।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement