জেফ বেজোস এবং বিল গেটস। বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে থাকা দুই ধনকুবের। আর তাঁদের বিনিয়োগ করা সংস্থাই নাকি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হতে চলেছে অ্যামাজ়ন প্রধান এবং মাইক্রোসফ্ট প্রধানের বিনিয়োগ করা সংস্থা ‘কনভয়’।
২০১৫ সালে কনভয় নামে আমেরিকার ওই সংস্থাটি শুরু হয়েছিল। সেই সময় মনে করা হয়েছিল, বেজোস এবং গেটসের হাত ধরে বিশ্বের অন্যতম দামি সংস্থায় পরিণত হতে চলেছে কনভয়। কিন্তু তেমনটা হল কই! আট বছর যেতে না যেতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কনভয়।
২০১৭ সালে কনভয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, তাঁদের সংস্থায় ৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছেন গেটস। তবে কনভয় সংস্থায় বেজোস ভরসা দেখিয়েছিলেন আরও আগে। সংস্থা শুরুর একদম গোড়ার দিকে।
গেটস এবং বেজোস ছাড়াও কনভয়ে বিনিয়োগ করেন ‘সেলসফোর্স ডটকম’-এর সিইও মার্ক বেনিওফ এবং ‘ড্রপবক্স’-এর সিইও ড্রিউ হিউস্টন।
নামীদামি বিনিয়োগকারীদের দৌলতে শুরু থেকেই কনভয়কে নিয়ে আলোচনা চলছিল বিভিন্ন ব্যবসায়িক মহলে। তবে বেজোস এবং গেটসের বিনিয়োগের পরে ওই সংস্থাকে নিয়ে আরও জোর চর্চা শুরু হয়েছিল। বিশ্বের দুই ধনকুবের কেন এই সংস্থায় বিনিয়োগ করেছিলেন, তা নিয়েও শুরু হয়েছিল জল্পনা।
কনভয় হল সিয়াটল-ভিত্তিক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এই স্টার্টআপ সংস্থা ট্রাক ড্রাইভারদের পণ্যবাহী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
পণ্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার পর খালি ট্রাকগুলি আবার ফিরে আসে। এতে সময় এবং জ্বালানি— উভয়েরই অপচয় হয়। কনভয়ের উদ্দেশ্য ছিল সেই অপচয় বন্ধ করা।
কনভয় যখন শুরু হয়েছিল, তখন এটিকে ‘ট্রাকেদের উবর’ বলা হত। গত বছর অবধি কনভয়ের মোট বাজারমূল্য ছিল ৩০০ কোটি ডলার।
কনভয় যখন ব্যবসা শুরু করে, তখন মনে করা হয়েছিল মালবাহী শিল্পে বেশ কয়েকটি কঠিন সমস্যার সমাধান করতে চলেছে সেই সংস্থা। পাশাপাশি এই সংস্থা ট্রাক ড্রাইভারদের সঙ্গে বিভিন্ন পণ্যবাহী সংস্থার যোগাযোগ আরও মজবুত করবে বলেও মনে করা হয়েছিল।
কনভয় প্রযুক্তিগত দিক থেকেও পণ্যবাহী শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। আর সেই কারণেই মাইক্রোসফ্ট এবং অ্যামাজ়নের প্রধান ওই সংস্থায় বিনিয়োগ করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
কনভয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও ড্যান লুইস কনভয় শুরুর আগে বেজোসের সংস্থা অ্যামাজ়নের উঁচু পদে ছিলেন। তার আগে, মাইক্রোসফ্টও কাজ করতেন তিনি। আর তাঁর হাত ধরেই নাকি ওই দুই সংস্থা থেকে কনভয়ে বিনিয়োগ এসেছিল।
সংস্থা শুরুর সময় কনভয়কে নিয়ে যেমন আলোচনা শুরু হয়েছিল, তেমনই সংস্থাটি বন্ধ হওয়ার সময়েও তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক মহলে এখন একটাই প্রশ্ন, কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সেই স্টার্টআপ সংস্থা?
কনভয়ের সিইও ড্যান লুইস জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারই সংস্থার শেষ দিন ছিল। বাজারে চাউর হওয়া খবর অনুযায়ী, গত চার মাসে নাকি কোনও ব্যবসা করতে পারেনি কনভয়। আর সেই কারণেই সংস্থাটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে পরবর্তী কালে এই সংস্থা নিয়ে নতুন ভাবনাচিন্তা করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন লুইস। পণ্যবাহী বাজারে পতন এবং অর্থনৈতিক মন্দাকেও ব্যবসা বন্ধে
ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগেও সংস্থাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন লুইস। তার জন্য সংস্থা থেকে ১০০০ কর্মীকে ছাঁটাইও করা হয়েছিল। তবে শেষরক্ষা হল না।
অনেকেই এখন কনভয় সংস্থাটিকে ‘ল্যাংড়া ঘোড়া’র সঙ্গে তুলনা করছেন। গেটস এবং বেজো, এত দূরদর্শী ব্যবসায়ী হওয়া সত্ত্বেও কেন কনভয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।