এই মুহূর্তে দেশে একটিই মহাকাশ বন্দর রয়েছে ইসরোর। বঙ্গোপসাগরের শ্রীহরিকোটা দ্বীপে, যা অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর জেলায় পড়ে।
২০০২ সালে এই মহাকাশ বন্দরের নামকরণ করা হয় ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যানের নামে। নাম দেওয়া হয় সতীশ ধওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র (এসডিএসসি)।
শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান মহাকাশ বন্দরে বর্তমানে দু’টি কার্যকরী লঞ্চ প্যাড রয়েছে যা রকেট, মহাকাশযান, পোলার এবং জিওসিঙ্ক্রোনাস উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ইসরোর চন্দ্রযান-১, চন্দ্রযান-২, চন্দ্রযান-৩, মঙ্গলযান থেকে আদিত্য-এল১ পর্যন্ত এই মহাকাশ বন্দর থেকেই উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
তবে সতীশ ধওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের উপর চাপ কমাতে আরও একটি মহাকাশ বন্দর তৈরি করছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
দেশে দ্বিতীয় মহাকাশ বন্দর তৈরি হচ্ছে তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন জেলার কুলশেখরপট্টিনামে। দ্বিতীয় মহাকাশ বন্দর তৈরির জন্য কুলশেখরপট্টিনামে জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে।
ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় মহাকাশ বন্দরটির এলাকা শ্রীহরিকোটার চেয়েও অনেক বড় হবে। সেই মহাকাশ বন্দর গড়ে তোলা হবে ২,৩০০ একর জমির উপর। যার ৮০ শতাংশের বেশি অধিগ্রহণ হয়ে গিয়েছে।
প্রাচীন সমুদ্র বন্দর ছিল কুলশেখরপট্টিনামে। সেই সময় কুলশেখরপট্টিনামের বন্দর দিয়েই কোল্লাম ও পান্ডিয়ান বন্দরে যাওয়া-আসা চলত।
ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, শ্রীহরিকোটায় এখন যে মহাকাশ বন্দরটি রয়েছে সেখানে দু’টি লঞ্চপ্যাড রয়েছে। কুলশেখরপট্টিনামেও আপাতত একটি লঞ্চপ্যাড গড়ে তোলা হবে। কিন্তু কেন দ্বিতীয় মহাকাশ বন্দরের প্রয়োজন পড়ল ইসরোর?
শ্রীহরিকোটা ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (পিএসএলভি)’-এর মতো ভারী রকেট উৎক্ষেপণের জন্য আদর্শ। কিন্তু সেখান থেকে ছোট রকেট উৎক্ষেপণের সময় অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় ইসরোকে।
ইসরোর ‘স্মল স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (এসএসএলভি)’ তুলনামূলক ভাবে ছোট রকেট। ৫০০ কিলোগ্রামের কাছাকাছি ওজনের উপগ্রহ পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠানোর জন্য এই রকেট ব্যবহার করা হয়।
শ্রীহরিকোটা থেকে যখন রকেটগুলিকে পৃথিবীর মেরু কক্ষপথের উদ্দেশে পাঠানো হয়, তখন সেগুলি দক্ষিণ দিক বরাবর উড়ে যায়। সোজা পথে উড়ে গেলে সেই রকেটগুলিকে প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার ওপর দিয়ে উড়ে যেতে হবে।
রকেটগুলি উৎক্ষেপণের পর যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোনও কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে সেই রকেট শ্রীলঙ্কায় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আশঙ্কা থেকে যায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির।
আর সেই দুর্ঘটনা এড়াতে রকেটগুলিতে এমন ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে সেগুলি সরলরেখায় ওড়ার পরিবর্তে একটি বাঁকা পথ ধরে উড়ে যায়। শ্রীলঙ্কার ভূখণ্ড পেরিয়ে আবার স্বাভাবিক পথে উড়ে যায় রকেটগুলি।
সোজা পথে যাওয়ার পরিবর্তে বাঁকা পথে উড়ে যাওয়ার জন্য রকেটগুলিকে অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয় করতে হয়। বহু অর্থের অপচয় হয়।
বড় পিএসএলভি রকেটগুলিতে অনেক বেশি পরিমাণে জ্বালানি থাকে। তাই এই জ্বালানি অপচয়ের খুব বেশি প্রভাব সেই রকেটগুলির উপর পড়ে না। কিন্তু বাঁকা পথে যাওয়ার জন্য ছোট এসএসএলভি রকেটগুলিতে প্রচুর জ্বালানি ব্যয় হয়। রকেটগুলির পেলোড বহন ক্ষমতাও কমে যায়।
তাই অনেক দিন ধরেই ইসরো এমন একটি জায়গা খুঁজছিল, যেখান থেকে উৎক্ষেপণের পর শ্রীলঙ্কাকে পেরনোর ঝুঁকি ছাড়ায় ছোট রকেটগুলি সরলরেখা বরাবর উড়ে যেতে পারে।
কুলশেখরপট্টিনাম তামিলনাড়ুর দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। সেখান থেকে ছোট রকেট উৎক্ষেপণ করা হলে সেগুলি জ্বালানি বাঁচাতে পারে এবং দক্ষিণ দিক বরাবর সোজা পথে উড়তে পারে।