হাথরসে স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবার ‘সৎসঙ্গ’-এ বিশৃঙ্খলার জেরে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা হয়েছে। তাতে মারা গিয়েছেন ১২১ জন। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেই ‘সৎসঙ্গ’-এর আয়োজক প্রকাশ মধুকর। তাঁকে খুঁজছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। সেই প্রকাশ এ বার হারালেন চাকরি।
১০০ দিনের কাজ (এমজিএনআরইজিএ)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মধুকর। উত্তরপ্রদেশের ২০টি পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজে তিনি টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে নজরদারি চালাতেন ।
২০১০ সাল থেকে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে সেই কাজ করতেন মধুকর। তিনি বিল এবং ভাওচার প্রস্তুত করতেন।
এটা জেলার শীতলপুর ব্লকে ১০০ দিনের কাজের অধীনে যে সব উন্নয়নমূলক প্রকল্প হত, সেগুলিও তদারকি করতেন মধুকর।
হাথরসকাণ্ডে নাম জড়ানোর পর গিয়েছে সেই চাকরি। শীতলপুরের ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার দীনেশ শর্মা জানিয়েছেন, হাথরসকাণ্ডে এফআইআরে মূল অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে মধুকরের। তার পরেই তাঁকে অপসারণ করা হয়েছে। নিয়োগের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবারের ঘটনার পর থেকে ফেরার মধুকর। তাঁর খোঁজ দেওয়ার জন্য এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আলিগড় পুলিশের আইজি শলাভ মাথুর বলেন, ‘‘ওই সৎসঙ্গের ইনচার্জ ছিলেন দেবপ্রকাশ মধুকর। তাঁর নামেই সৎসঙ্গের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। হাথরস পুলিশের এফআইআরে তাঁর নাম থাকার পর থেকে তিনি ফেরার। তাঁর খোঁজ দেওয়ার জন্য এক লক্ষ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। জামিনঅযোগ্য পরোয়ানা জারি করে তাঁর খোঁজ চলছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, নিজের গ্রামের লোকজনকে ‘সৎসঙ্গ’-এ যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন মধুকর। তাঁর গ্রাম থেকে ৩০ জন সেখানে গিয়েছিলেন।
হাথরসের সিকন্দ্রা রাউ গ্রামে বাস করেন মধুকর। এর আগে গ্রামপ্রধান হওয়ার নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি। কিন্তু হেরে যান। তাঁর স্ত্রী পঞ্চায়েতের সহকারী পদে কাজ করেন।
গত মঙ্গলবার হাথরসে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা হয়। যেখানে মৃত্যু হয় শিশু, মহিলা-সহ ১২১ জনের। তার পর থেকে খোঁজ মেলেনি ভোলে বাবা ওরফে নারায়ণ সাকার বিশ্ব হরি এবং মধুকরের। এফআইআরে ভোলে বাবার নাম নেই। তবে পুলিশ জানিয়েছে, প্রয়োজনে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মধুকরের খোঁজে রাজস্থান, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ওই সব এলাকায় ভোলে বাবার ‘সৎসঙ্গ’-এর আয়োজন করা হত। তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব এলাকায় স্বঘোষিত ধর্মগুরুর একাধিক ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছেন।
পুলিশ তদন্তে আরও জানতে পেরেছে, নিটের প্রশ্নফাঁসকাণ্ডের সঙ্গে ভোলে বাবার যোগ ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি ভোলে বাবাও নিটকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত? যদিও পুলিশের দাবি, সে রকম কোনও প্রমাণ এখনও তাদের হাতে আসেনি।
রাজস্থান পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি (স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ) ভিকে সিংহ জানিয়েছেন, রাজ্যের দৌসাতে প্রায়ই আসতেন ভোলে বাবা। সেখানে হর্ষবর্ধন মীনার বাড়িতে থাকতেন। শুধু তা-ই নয়, মীনার বাড়িতে ‘সৎসঙ্গ’-এরও আয়োজন করতেন। আর পুরো দায়িত্ব সামলাতেন মীনাই। ঘটনাচক্রে, দেশ জুড়ে নিটের প্রশ্নফাঁসকাণ্ডে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, মীনা তাঁদের মধ্যে এক জন। তদন্তকারীদের সন্দেহ, এই মীনাই নিটকাণ্ডের অন্যতম চক্রী।
শুক্রবার হাথরসে মৃতদের একাংশের পরিজনের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। রাহুল শুক্রবার সকালে প্রথম আলিগড়ের নভিপুর খুর্দ এবং পিলাখনা গ্রামে যান। পদপিষ্ট হয়ে মৃত শান্তি দেবী ও মঞ্জু দেবীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এর পরে হাথরসের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। মৃতদের পরিবারের সদস্যেরা পরে সংবাদমাধ্যমকে জানান, রাহুল তাঁদের আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে ইতিমধ্যে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার।