২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর বসেছে দুবাইয়ে। রবিবার সেখানেই চলছিল ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই পাকিস্তানকে টেক্কা দিয়েছে ভারত। শতরান করে ম্যাচের নায়ক বিরাট কোহলি। বল হাতে মাত করেছেন হার্দিক-কুলদীপরা। তবে খেলার বাইরেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন হার্দিক পাণ্ড্য।
ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে বিশেষ অবদান না রাখতে না পারলেও বল হাতে জাদু দেখিয়েছেন হার্দিক। ক্রিকেট অনুরাগীদের নজরে পড়ে হার্দিকের ঘড়িও। বিশেষ ম্যাচের বিশেষ সাজগোজ হিসাবে বিদেশি বিলাসী সংস্থা রিচার্ড মিলের বিশেষ সংস্করণ ‘টারবিলন রাফায়েল নাদাল স্কেলিটন ওয়াচ’ পরেছিলেন তিনি। এর দাম ৮ লক্ষ মার্কিন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার সমান।
কিন্তু বাইশ গজে যখন ব্যস্ত হার্দিক, তখন ছবিশিকারিদের নজরবন্দি হলেন ক্রিকেটারের ‘বান্ধবী’ জ্যাসমিন ওয়ালিয়া। পরনে সাদা পোশাক, চোখে রোদচশমা। গ্যালারিতে বসে হাততালি দিতে দেখা গেল তাঁকে। তার পর থেকেই জোরালো হয় ক্রিকেটারের প্রেমজীবন নিয়ে জল্পনা। কে এই জ্যাসমিন?
চার বছরের সংসারের পর নাতাশা স্তানকোভিচের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন হার্দিক। গত বছর জুলাই মাসে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। বিবাহবিচ্ছেদের এক মাস কাটতে না কাটতেই হার্দিকের সঙ্গে নাম জড়ায় অন্য নারীর। তাঁর সঙ্গেই নাকি গ্রিসে একান্ত সময় কাটিয়েছিলেন ক্রিকেটার। তিনি আর কেউ নন, জ্যাসমিন।
গ্রিসের মায়কোনোসের এক বিলাসবহুল রেস্তরাঁয় ঘুরতে গিয়েছিলেন জ্যাসমিন। নীল বিকিনি পরে সেখান থেকেই ছবি পোস্ট করেছিলেন তিনি। জ্যাসমিনের পোস্ট করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই হার্দিক সমাজমাধ্যমে একই জায়গা থেকে নিজের ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। তার পর থেকেই শুরু হয়েছিল জল্পনা।
হার্দিকের পোস্ট করা ছবিতে একটি সুইমিং পুলের ধার দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। পিছনে পাহাড়, সমুদ্র। পাহাড়ের কোলে ছোট ছোট বাড়ি। হার্দিক নয়, বরং সকলের নজর কেড়েছিল আশপাশের দৃশ্য। কারণ, জ্যাসমিনও প্রায় একই সময়, একই জায়গার ছবি পোস্ট করেছিলেন তাঁর সমাজমাধ্যমের পাতায়।
১৯৯২ সালের ২৩ মে ইংল্যান্ডের এসেক্সে জন্ম জ্যাসমিনের। সেখানে বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। পরিবারের কেউ সঙ্গীতজগতের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ ছিল জ্যাসমিনের।
টেলিভিশনের পর্দায় কখনও ভারতীয় সঙ্গীত শুনে, কখনও বা অভিনেতার কণ্ঠ শুনে তা নকল করতেন জ্যাসমিন। তাঁর যখন মাত্র আট বছর বয়স, তখন থেকেই গান করতে শুরু করেন তিনি। ১০ বছর বয়সে নাটক শেখার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও ভর্তি হন জ্যাসমিন।
২০০০ সালে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান জ্যাসমিন। ‘ডক্টরস’ নামে একটি ধারাবাহিকে শিশু অভিনেতা হিসাবে দেখা যায় তাঁকে।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন নিয়ে পড়ে স্নাতক হন জ্যাসমিন। কলেজ থেকে পাশ করার পর লন্ডনের একটি ব্যাঙ্কে গ্রাহক পরিষেবা সংক্রান্ত কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
কয়েক বছর ব্যাঙ্কে চাকরি করার পর তা ছেড়ে দেন জ্যাসমিন। পরে অ্যাকাউন্ট্যান্সি নিয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন বলে একটি কোর্সে ভর্তি হন। কিন্তু মাঝপথে সেটিও ছেড়ে দেন তিনি।
২০১০ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর ‘দ্য ওনলি ওয়ে ইজ় এসেক্স’ নামের ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় জ্যাসমিনকে। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি মনোনিবেশ করতে চান বলে সেই ধারাবাহিকে অভিনয় ছেড়ে দেন তিনি।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল খোলেন জ্যাসমিন। সেই চ্যানেলেই গান গেয়ে ভিডিয়ো পোস্ট করতেন তিনি।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গানের একটি জনপ্রিয় শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জ্যাসমিন। কিন্তু তাঁর গান বিচারকদের পছন্দ না হওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যান তিনি।
২০১৫ সালে ‘দেশি রাস্কাল্স’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান জ্যাসমিন। এই ধারাবাহিকে শুটিং চলাকালীন তাঁর আলাপ হয় রস ওয়ার্সউইকের সঙ্গে। জ্যাসমিনের সহ-অভিনেতা ছিলেন তিনি। পেশাগত সূত্রে আলাপ হলেও সেখান থেকে বন্ধুত্ব এবং প্রেম হয় দু’জনের।
কানাঘুষো শোনা যায়, রসের সঙ্গে দু’বছর সম্পর্কে ছিলেন জ্যাসমিন। গান নিয়ে পুরোদমে কেরিয়ার শুরু করতে চান বলে রসের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন গায়িকা।
এর পর ব্রিটেনের জনপ্রিয় গায়ক জ্যাক নাইটের সংস্পর্শে আসেন জ্যাসমিন। জ্যাকের সঙ্গে গান গাওয়ার সুযোগ পান তিনি। তার পরেই জ্যাসমিনের কেরিয়ার নতুন ছন্দ পায়। গায়িকা হিসাবে রাতারাতি পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন তরুণী।
শুধু বিদেশের মাটিতেই নয়, কেরিয়ার গড়তে বলিপাড়ায়ও পা রাখেন জ্যাসমিন। ২০১৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সোনু কে টিটু কি সুইটি’ নামের একটি হিন্দি ছবি। কার্তিক আরিয়ান অভিনীত এই ছবিতে ‘বম ডিগি’ গানটি গেয়েছেন জ্যাসমিন।
‘বিগ বস্’-এর ত্রয়োদশ সিজ়নের প্রতিযোগী আসিম রিয়াজ়ের সঙ্গে ২০২২ সালে একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করতে দেখা যায় জ্যাসমিনকে।
জ্যাসমিনই প্রথম ভারতীয় ব্রিটিশ গায়িকা, যিনি নিউ ইয়র্কের টাইম্স স্কোয়্যারের বিলবোর্ডে জায়গা পেয়েছিলেন। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে পর পর দু’বছর এশিয়ার প্রথম ৫০ জন ‘সেক্সিয়েস্ট উওম্যান’-এর তালিকায় স্থান পান তরুণী।
সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুগামীমহল গড়ে তুলেছেন জ্যাসমিন। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা সাত লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে।
অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, নাতাশার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পরেই জ্যাসমিনকে ডেট করতে শুরু করেছেন হার্দিক। তবে এখনও পর্যন্ত সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি কেউ-ই।