প্রশান্ত মহাসাগরের ব্যাপ্তি, গভীরতা, বিজ্ঞানীদের বার বার আকৃষ্ট করেছে। অন্য চার মহাসাগরের চেয়ে এর আকারই সবচেয়ে বড়। তাই বার বার এর বুকেই লুকিয়ে থাকা রহস্যের সন্ধানে ঝাঁপ দেন দুঃসাহসিক অভিযাত্রীরা।
গত মাসে তেমনই এক দল অভিযাত্রী গভীর সমুদ্রে অজানার অণ্বেষণের জন্য প্রশান্ত মহাসাগরকে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁরা এমন এক বস্তু আবিষ্কার করেছেন, যা এর আগে কেউ কখনও দেখেননি।
প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে সোনালি রঙের অচেনা একটি ডিম্বাকার বস্তু দেখা গিয়েছে। বস্তুটি এক জায়গায় স্থির হলেও বিজ্ঞানীদের সন্দেহ, সেটি অচেনা কোনও প্রাণী হলেও হতে পারে।
আমেরিকার ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর তরফে এক জন গবেষক তথা অভিযাত্রীকে প্রশান্ত মহাসাগরে অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয়েছিল।
তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, আলাস্কা উপসাগরের গভীরতা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া এবং সেখানে লুকিয়ে থাকা রহস্যের সন্ধান। সমুদ্রে কোরাল এবং স্পঞ্জের বসবাস এবং আগ্নেয়গিরির উপস্থিতি নিয়েও কাজ করছেন ওই বিজ্ঞানীরা।
অগস্ট মাসে এনওএএ-র গবেষকদল প্রশান্ত মহাসাগরে নামে। আলাস্কা উপকূল থেকে তাঁদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২৪ দিনের এই অভিযানে সমুদ্রের চার মাইল পর্যন্ত গভীরে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
গত ৩০ অগস্ট, আলাস্কার দক্ষিণ উপকূল থেকে প্রায় ৪০০ কিমি দূরে সমুদ্রের নীচে ওই রহস্যময় সোনালি ‘ডিম’ খুঁজে পান অভিযাত্রীরা। এই অভিযানের সরাসরি সম্প্রচার চলছিল।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ডিম্বাকার ওই বস্তুর একটি অংশে একটি মাত্র ফুটো দেখা গিয়েছে। তা থেকেই তাঁদের ধারণা হয়েছে, এটি অচেনা কোনও সামুদ্রিক প্রাণী হতে পারে। বাইরে থেকে যার শক্ত খোলস দেখা যাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের রিপোর্ট অনুযায়ী, সমুদ্রের এই রহস্যময় বস্তুটি কী, তা জানার জন্য ইতিমধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। ‘ডিম’টির বিশ্লেষণও করে দেখা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, অভিযাত্রীদের ডুবোযানের আলো প্রতিফলিত হওয়ার কারণে বস্তুটিকে সোনালি রঙের দেখাচ্ছিল। অন্য বিভিন্ন ছবি খুঁটিয়ে দেখে বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত, বস্তুর আসলে হলদে-বাদামি রঙের।
প্রাথমিক ভাবে পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ডিম্বাকার বস্তুটি কোনও ত্বকের টিস্যুর মতো পদার্থ দিয়ে তৈরি। অন্তত বাইরে থেকে দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।
বস্তুটিকে ঘিরে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য একটি রিমোটচালিত হাত ছোঁয়ানো হয়েছিল তাতে। একটি নলের মাধ্যমে তার সঙ্গে সংযোগস্থাপনও করা হয়। এখন রহস্যময় ‘ডিম’কে ঘিরে ব্যস্ততার শেষ নেই।
ডিম্বাকার বস্তুটির ব্যাস চার ইঞ্চি। চেনা কোনও প্রাণীর শ্রেণিগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে বলছেন, নতুন প্রাণী আবিষ্কৃত হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে।
এনওএএ-র এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, গবেষণাগারে নিয়ে এসে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে না পারলে বস্তুটির রহস্য পুরোপুরি উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়।
প্রশান্ত মহাসাগরে সোনালি ‘ডিম’-এর রহস্যের সমাধান করতে এনওএএ-র তরফে নানা মহলের বিজ্ঞানী এবং সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই রহস্যের সমাধান হবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।