তিন দিন ধরে মুম্বইয়ে ছিল সাজ সাজ রব। দেশ-বিদেশ থেকে খ্যাতনামীরা এসে চাঁদের হাট বসিয়েছিলেন মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানীর বিয়ের অনুষ্ঠানে। শুক্রবার দীর্ঘকালীন প্রেমিকা রাধিকা মার্চেন্টের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন অম্বানী। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, তিন দিনের এই বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০০০ কোটি টাকা খরচ করেছেন মুকেশ অম্বানী। বরের হাতে যেমন কোটি কোটি টাকা মূল্যের ঘড়ি দেখা গিয়েছে, তেমনই নিকট বন্ধুবান্ধবেরাও পেয়েছেন কোটি টাকার উপহার।
এত দিন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দামি বিয়ের তালিকার শীর্ষে ছিল যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে ডায়নার বিয়ে। ১৯৮১ সালে চার্লস এবং ডায়নার বিয়ের অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ খরচ হয়েছিল সেই নজির চার দশকে কেউ ভাঙতে পারেননি।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, আশির দশকে চার্লস এবং ডায়নার বিয়ের খরচ ছিল ভারতীয় মুদ্রায় ৪০১ কোটি টাকা। সেই সময় ৪০১ কোটি টাকার পরিমাণ যদিও বর্তমানে প্রচুর।
চার্লস-ডায়নার বিয়েতে সাড়ে তিন হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭৫ কোটি মানুষ সেই অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখেছিলেন।
অতিথিদের সংখ্যা হোক অথবা বিয়ের খরচ— সব দিক দিয়েই ৪৪ বছর পর চার্লস এবং ডায়নার সবচেয়ে দামি বিয়ের নজির ভেঙে দিলেন মুকেশ অম্বানী। সূত্রের খবর, ১২ জুলাই মুম্বইয়ে জিয়ো ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে অনন্ত এবং রাধিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছেন মুকেশ।
নববধূ রাধিকার সাজপোশাকে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও অম্বানী-পুত্রের বিয়েতে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে অনন্তের হাতঘড়ি।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, বিয়ের অনুষ্ঠানে পাটেক ফিলিপ ব্র্যান্ডের একটি দামি ঘড়ি পরেছিলেন অনন্ত। অনন্তের বিয়েতে দামি জিনিসের তালিকায় নাম লিখিয়েছে এই হাতঘড়ি। ঘড়িটির মূল্য সাড়ে ৬৭ কোটি টাকা।
অনন্তের বিয়েতে নজর কেড়েছে মুকেশ-পত্নী নীতা অম্বানীর গলার হার। পুত্রের বিয়েতে পান্না বসানো হিরের হার পরেছিলেন নীতা। কানাঘুষো শোনা যায়, সেই হারের মূল্য ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি হারের মধ্যে এটি অন্যতম।
মুকেশ এবং নীতার জ্যেষ্ঠ পুত্র আকাশ অম্বানীর জীবনসঙ্গিনীও কোনও অংশে কম যাননি। আকাশের স্ত্রী শ্লোকা অম্বানী দেওরের বিয়ের অনুষ্ঠানে যে হার পরেছিলেন তার দাম আকাশছোঁয়া। শোনা যায়, শ্লোকা যে হারটি পরেছিলেন তার মূল্য ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
অনন্তের বিয়ের অনুষ্ঠানে যে অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সকলের জন্যই দামি উপহারের আয়োজন করেছিলেন মুকেশ। পরিবারের নিকটাত্মীয় থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, ভিকি কৌশল এবং রণবীর সিংহের মতো জনপ্রিয় বলি তারকাদের দু’কোটি টাকা মূল্যের ঘড়ি উপহার দিয়েছেন মুকেশ।
শুধু নামী ব্র্যান্ডের ঘড়িই নয়, অতিথিদের জন্য উপহারের তালিকায় ছিল আরও অনেক কিছু। লুই ভিত্তোঁ ব্র্যান্ডের দামি ব্যাগ থেকে সোনার হার এবং নকশা করা জুতো অতিথিদের উপহার দিয়েছেন মুকেশ।
অনন্তের বিয়ে উপলক্ষে ছিল এলাহি আয়োজন। জিয়ো ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারের তিনটি তলা জুড়ে ছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। তার মধ্যে সম্পূর্ণ একটি তলা জুড়ে ছিল খাওয়াদাওয়ার আয়োজন।
‘কার্লি টেল্স’-এর একটি ভিডিয়ো থেকে জানা যায়, অনন্তের বিয়েতে আড়াই হাজারেরও বেশি নিরামিষ পদের আয়োজন করা হয়েছিল। দেশের নানা প্রান্তের জনপ্রিয় নিরামিষ খাবার ছিল মেনুতে।
ভিডিয়ো থেকে জানা যায়, অনন্তের বিয়ের মেনুতে যে খাবারগুলি নারকেল দিয়ে তৈরি, তা রান্নার জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে রন্ধনশিল্পী এসেছিলেন।
অনন্ত-রাধিকার বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রও ছিল নজরকাড়া। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে গিয়ে বিয়ের প্রথম নিমন্ত্রণপত্রটি মহাদেবকে উৎসর্গ করেছিলেন নীতা। তার পর থেকে শুরু হয়ে গিয়েছিল বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র বিলির পালা। বিয়ের কার্ডটিও মন্দিরের ধাঁচে বানানো।
সমাজমাধ্যমে অনন্ত-রাধিকার বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পর দেখা যায়, লাল রঙের একটি ছোট আলমারির মধ্যে রুপোর মন্দির। আলমারি খুললেই জ্বলছে এলইডি আলো। সেই আলোয় রুপোর মন্দিরের চমক যেন আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।
মন্দিরের এক একটি কক্ষে বিষ্ণু, রাধাকৃষ্ণ, দুর্গা এবং গণেশের মূর্তি। মন্দিরের ছাদে সাজানো ছোট ছোট রুপোর ঘণ্টা। মন্দিরের সঙ্গে রুপোর বাক্সে ভরা বিয়ের কার্ড। সঙ্গে আর একটি রুপোর বাক্স। বাক্সের ভিতর একটি শাল, বিভিন্ন দেবতার সোনার মূর্তি এবং অনন্ত-রাধিকার নাম লেখা একটি মসলিনের কাপড়।
বিয়ের চমক লাগানো নিমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে নিমন্ত্রিতদের ইমেলে পাঠানো হয়েছিল একটি গুগ্ল ফর্ম। অতিথিরা সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন কি না, তা সেই ফর্ম পূরণ করে জানাতে হয়েছিল।
বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ছ’ঘণ্টা আগে অতিথিদের একটি ‘কিউআর কোড’ পাঠানো হয়েছিল। সেই কোড দেখিয়ে অনুষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতিপত্র পেয়েছিলেন তাঁরা।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, অনন্ত-রাধিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে ১৪ হাজারেরও বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন। নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বরিস জনসন, টনি ব্লেয়ারের মতো রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে কিম কার্দাশিয়ান, শাহরুখ খান, সলমন খানের মতো তারকারা হাজির ছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। দেশ-বিদেশের খেলোয়াড়েরাও ছিলেন আমন্ত্রিতদের তালিকায়।
বিয়েতে অতিথিদের হাতে গোলাপি, নীল, লাল ব্যান্ড নজর কেড়েছে সকলের। বিয়েতে গোলাপি ব্যান্ড বরাদ্দ করা হয়েছিল ভিভিআইপিদের জন্য। আসনের দিক থেকে তাঁদের স্থান ছিল একেবারে প্রথম সারিতে। অম্বানী পরিবারের সঙ্গে সমাজমাধ্যমের কন্টেট তৈরি করার সুযোগও ছিল তাঁদের কাছে।
অনন্তের বিয়েতে নীল ব্যান্ড বরাদ্দ করা হয়েছিল অনন্ত এবং রাধিকার কাছের বন্ধুবান্ধবের জন্য। এই ব্যান্ড পরে থাকলে অতিথিদের নাচের মঞ্চে যাওয়ার সুযোগ ছিল। এই অতিথিদের জন্য অম্বানীরা আলাদা করে চাট এবং পানীয়ের স্টলের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
মূলত অম্বানীদের সাধারণ কর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য বরাদ্দ ছিল আলাদা আলাদা রঙের ব্যান্ড। অতিথি আপ্যায়নে যেন কোথাও কোনও ত্রুটি না থাকে, তাঁদের নিরাপত্তায় যেন কোনও গাফিলতি না হয়, সেই জন্যই বিভিন্ন রঙের ব্যান্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছিল অম্বানী পরিবারের তরফে।
রেডিটে এক নেটব্যবহারকারী দাবি করেছেন, মুকেশ যদি প্রতি দিন তিন কোটি টাকা করে খরচ করেন, তবে তাঁর যা সম্পত্তি রয়েছে তা খরচ করে ৯৬২ বছর চলবে।