ছোট পর্দায় কাজ করছেন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। অভিনয় করেছেন বড় পর্দাতেও। হিন্দি ধারাবাহিকের জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছেন হিনা খান। উপার্জনের দিক থেকেও খুব একটা পিছিয়ে নেই তিনি।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, হিনার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫২ কোটি টাকা। হিন্দি ধারাবাহিকের জগতে যে অভিনেত্রীরা উপার্জনের দিক থেকে এগিয়ে, সেই তালিকায় হিনার নাম প্রথম সারিতে রয়েছে।
শর্ট ফিল্ম এবং বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও ধারাবাহিকে অভিনয় করে হিনা সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, ধারাবাহিকের প্রতিটি পর্বে অভিনয় করার জন্য ২ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নেন হিনা। ‘ইয়ে রিস্তা কেয়া কহলাতা হ্যায়’ ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। সূত্রের খবর, এই ধারাবাহিকে কাজ করার জন্য এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন হিনা।
ধারাবাহিকে অভিনয় করে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলার পর নামী ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের মুখ হিসাবে কাজ করতে দেখা গিয়েছে হিনাকে। টেলিপাড়া সূত্রে খবর, প্রতিটি বিজ্ঞাপনে এক কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেন তিনি।
সলমন খানের জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন হিনা। কানাঘুষো শোনা যায় যে, দু’সপ্তাহ অন্তর ৭২ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন তিনি।
রোহিত শেট্টির জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর: খতরোঁ কে খিলাড়ি’ অষ্টম পর্বে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন হিনা। এই শোয়ে কাজ করে নাকি পর্বপিছু সাড়ে চার লক্ষ টাকা আয় করেছেন অভিনেত্রী।
হিনার বহু দিনের ইচ্ছা ছিল মায়ানগরীতে নিজের স্বপ্নমহল তৈরি করার। স্বপ্নপূরণ করে মুম্বইয়ে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন অভিনেত্রী।
মাঝেমধ্যেই হিনার ইনস্টাগ্রামে থেকে তাঁর ফ্ল্যাটের ঝলক দেখা যায়। এই ফ্ল্যাটেই নিজের বাবা-মা এবং ভাইকে নিয়ে থাকেন তিনি। সূত্রের খবর, বিপুল টাকা খরচ করে এই ফ্ল্যাট কিনেছেন অভিনেত্রী।
বিলাসবহুল গাড়ি কেনারও শখ ছিল হিনার। সূত্রের খবর, হিনার কাছে অডির এ৪ মডেলের গাড়ি রয়েছে। এই গাড়িটির মূল্য ৪৪ লক্ষ টাকা।
দামি ব্র্যান্ডের পোশাকে ভরা হিনার আলমারি। জনপ্রিয় পোশাকশিল্পীদের কাছ থেকেও নিজের পছন্দের পোশাক কেনেন তিনি। এই পোশাকগুলির মধ্যে কোনও কোনওটির দাম লাখ টাকারও বেশি।
১৯৮৭ সালের ২ অক্টোবর জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে জন্ম হিনার। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লি চলে যান তিনি। সেখান থেকেই এমবিএ করেন।
জীবনের প্রথম দিকে অভিনয়ে নামার কোনও ইচ্ছা ছিল না হিনার। তিনি বরাবর বিমানকর্মী হিসাবে কাজ করতে চাইতেন। এমনকি, দীর্ঘ দিন এর জন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাজে যুক্ত হওয়ার সময় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প়ড়েন হিনা। ফলে আর কাজে যোগ দিতে পারেননি।
কলেজে পড়াকালীন বন্ধুদের কথায় হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন হিনা। বহু দিন পর হঠাৎ মুম্বই থেকে ডাক আসে তাঁর। ‘ইয়ে রিস্তা কেয়া কহলাতা হ্যায়’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তিনি।
অভিনয় সম্বন্ধে হিনার কোনও ধারণা ছিল না। তাই ধারাবাহিকে অভিনয়ের আগে দু’সপ্তাহের জন্য অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে প্রথম বার ছোট পর্দায় দেখা যায় হিনাকে।
প্রথম ধারাবাহিকে অভিনয় করেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন হিনা। কানাঘুষো শোনা যায়, অভিনেত্রীকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল দর্শক। হিনাকে ভয় দেখিয়েছিলেন যে, তিনি যদি ধারাবাহিকের কাজ বন্ধ করে দেন, তা হলে হিনাকে প্রাণে মেরে দেওয়া হবে।
আট বছর একটানা ‘ইয়ে রিস্তা কেয়া কহলাতা হ্যায়’ ধারাবাহিকে কাজ করার পর হিনা এই ধারাবাহিক ছেড়ে অন্য ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত হন। ‘কসৌটি জ়িন্দেগি কে’ ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্বে অভিনয় করেছিলেন হিনা।
ধারাবাহিকে কাজ চলাকালীন একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন হিনা। কিন্তু শুটিংয়ের জন্য প্রায় দু’মাস তাঁকে মুম্বই ছে়ড়ে অন্যত্র থাকতে হত। সময়ের অভাব থাকায় ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন হিনা। সেখানকার প্রথম ৩০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে নামও লিখিয়েছিলেন তিনি। ছোট পর্দার বিভিন্ন রিয়্যালিটি শোয়েও দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
বিভিন্ন মিউজ়িক ভিডিয়ো, শর্ট ফিল্ম ছাড়াও বড় পর্দায় কাজ করতে দেখা গিয়েছে হিনাকে। ‘হ্যাকড’ নামের একটি মনোস্তাত্বিক থ্রিলার ঘরানার ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ২০২০ সালে বিক্রম ভট্টের পরিচালনায় ছবিটি মুক্তি পায়।
প্রায় ১৪ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে নিজের অনুরাগীমহল তৈরি করে ফেলেছেন হিনা। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী সংখ্যা ১ কোটি ৮৮ লক্ষ।