জনপ্রিয় অভিনেতা এবং পরিচালক সতীশ কৌশিকের অকালপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ বলিউড। হাসপাতাল যাওয়ার পথে গাড়ির ভিতর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সতীশ। কিন্তু সতীশের মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমশ রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। প্রকাশ্যে এসেছে টাকা লেনদেনের ঘটনাও।
মঙ্গলবার বলিপাড়ার জনপ্রিয় গীতিকার জাভেদ আখতারের বাড়িতে হোলি উদ্যাপন করতে গিয়েছিলেন সতীশ। সেখান থেকে গুরুগ্রামে ফিরে আসেন তিনি। বুধবার আবার বিকাশ মালু নামে এক বন্ধুর খামারবাড়িতে হোলির অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সতীশ। পার্টির পর বাড়ি ফেরার পরেই নাকি তিনি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার ভোরে গাড়ির চালককে শারীরিক অবনতির কথা জানিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সতীশের ভাগ্য সহায় ছিল না। হাসপাতালে যাওয়ার সময় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বিকাশের দ্বিতীয় স্ত্রী সানভির অনুমান, তাঁর স্বামী বিষ দিয়েছেন সতীশকে। সেই বিষক্রিয়ার জেরেই নাকি প্রাণ হারিয়েছেন সতীশ। সানভির আরও দাবি, সতীশের কাছে ১৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছিলেন বিকাশ। পেশায় ব্যবসায়ী তিনি। কিন্তু টাকা ধার নেওয়ার পর আর সতীশকে ফেরত দেননি তিনি। সানভি জানিয়েছেন যে, এই টাকার লেনদেন নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসাও লাগে। এই প্রসঙ্গেই আলোচনায় উঠে আসছে সতীশের মোট সম্পত্তির পরিমাণ।
৩৫ বছরেরও বেশি সময় ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা সতীশের সম্পত্তির পরিমাণ নাকি ১২২ কোটি টাকা। কিন্তু গুটি কতক সংবাদমাধ্যমের দাবি, সতীশের নাকি এত সম্পত্তিই নেই। তাদের দাবি, ৫০ কোটি টাকা সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন তিনি।
সতীশের উপার্জনের বেশির ভাগ আসত অভিনয় করে। মুখ্যচরিত্রে না হলেও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন তিনি। শুধু বড় পর্দায় নয়, ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করেছেন তিনি।
অভিনয় ছাড়াও ছবি পরিচালনার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সতীশ। অভিনয় করে তিনি যা পারিশ্রমিক পেতেন, সেই তুলনায় ছবি পরিচালনা করে অর্থ উপার্জন করতেন অনেক বেশি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রথম ছবিতে অভিনয় করে মাত্র ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে ‘ওহ সাত দিন’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেছিলেন তিনি।
এক জন ফুলবিক্রেতার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ‘ওহ সাত দিন’ ছবির পরিচালক বনি কপূর প্রথমে সতীশকে ২০১ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বনি তাঁর ভাই অনিল কপূরের অনুরোধে সতীশের পারিশ্রমিক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের ভারসোভা এলাকার একটি বিলাসবহুল বাংলোয় স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে থাকতেন সতীশ। এই বাংলোটি কোটি কোটি টাকা খরচ করে কিনেছেন তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, এই বাংলোটি নিজের স্ত্রী এবং কন্যার নামে লিখে দিয়েছিলেন সতীশ। যদিও এই বিষয় নিয়ে সতীশ কখনও মুখ খোলেননি।
মুম্বইয়ের বাংলো ছাড়াও একটি খামারবাড়ি কিনেছিলেন সতীশ। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, চণ্ডীগড়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে খামারবাড়িটি কিনেছেন তিনি।
গাড়ি সংগ্রহের শখ ছিল সতীশের। তাঁর বাংলোর গ্যারাজে সারি দিয়ে দাঁড় করানো থাকে নামী ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি। বেশি পছন্দ ছিল অডি।
অডি ব্র্যান্ডের কিউ৭ মডেলের গাড়ি কিনেছিলেন সতীশ। এই গাড়িটির আনুমানিক মূল্য ৮২ লক্ষ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা।
সতীশের বাংলোর গ্যারাজে রয়েছে অডি ব্র্যান্ডের কিউ৩ মডেলের গাড়ি। এই গাড়িটির মূল্য ৪৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু। কিউ৩ মডেলের গাড়ির সর্বোচ্চ মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা।
অডি ব্র্যান্ডের দু’টি গাড়ি ছাড়াও সতীশের সংগ্রহে ছিল এমজি হেক্টর। এই গাড়িটির সর্বনিম্ন মূল্য ১৪ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ২১ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা।