প্যালেস্টাইনের বিতর্কিত গাজা ভূখণ্ডে কয়েক দিন ধরেই সামরিক লড়াই চলছে ইজ়রায়েল এবং হামাস জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে। হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র হানার জবাব দিতে পাল্টা রণকৌশল নিয়েছে ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনীও।
অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করার পাশাপাশি পাল্টা আক্রমণও শানাচ্ছে ইজ়রায়েল। সে দেশের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম সিস্টেম’ গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে।
তবে শুধু ‘আয়রন ডোম সিস্টেম’ই নয়, বিশ্বের একাধিক দেশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রুখতে উন্নত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এমনই উন্নত একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা হল ‘এস-৪০০ ট্রাম্ফ’।
এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি সংস্থা। বিশেষ পরিস্থিতিতে তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে এটি। শত্রু দেশের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে তৈরি করতে পারে মজবুত প্রতিরোধও।
শুধু তা-ই নয়, এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থায় রয়েছে বহুমুখী কাজ করতে পারা রেডার। লক্ষ্যবস্তুতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চিহ্নিত করে আক্রমণ হানতেও পারে ‘এস-৪০০ ট্রাম্ফ’।
আমেরিকার ‘রেথিয়ন’ এবং ইজ়রায়েলের ‘রাফায়েল’ সংস্থা যৌথ ভাবে তৈরি করেছে ‘ডেভিডস স্লিং’ নামক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা। কোন দিক থেকে আক্রমণ ধেয়ে আসছে, তা আগাম টের পাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ‘ডেভিডস স্লিং’-এর।
এর পাশাপাশি এটির সঙ্গে রয়েছে বহুমুখী কাজ করতে পারা রেডার। এই রেডারের সাহায্যে আকাশপথে যে কোনও বস্তুর উপরে নজরদারি চালাতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা।
ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংক্রান্ত সংস্থা ডিআরডিও-র সহায়তায় তৈরি হয়েছে ‘আকাশ’ নামক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থাটি। স্বয়ংক্রিয় ভাবে একাধিক লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণ শানাতে পারে এটি। ভ্রাম্যমান জায়গা থেকেও ‘আকাশ’কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৩০০’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা ছোট এবং মাঝারি পাল্লার যে কোনও ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখতে সক্ষম। একই সঙ্গে মাপা লক্ষ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ শানাতে পারে এটি।
ব্যবহার করার শুরুর দিন থেকে ১০০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সংস্থার তৈরি ‘থাড’। ২০০ কিলোমিটার পাল্লা পর্যন্ত যে কোনও ক্ষেপণাস্ত্রকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে এটির। এখনও পর্যন্ত ১৬টি অভিযানের প্রতিটিতেই সফল হয়েছে ‘থাড’।
চিনের তৈরি এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা হল ‘হং কুই-৯’। এটি অনেকটা রাশিয়ার ‘এস-৩০০’-এর মতো। হেলিকপ্টার, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হেলিকপ্টারকেও নিখুঁত ভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে এটি।
জার্মানি, আমেরিকা এবং ইতালি যৌথ ভাবে তৈরি করেছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘মিডস’। যুদ্ধক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা রয়েছে এটির।
ভারত এবং ইজ়রায়েল যৌথ ভাবে তৈরি করেছে ‘বারাক-৮’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থাটি। ইজ়রায়েলি সেনার পাশাপাশি ভারতের সেনাও এখন ক্ষেপণাস্ত্র হানা রুখতে ‘বারাক’-এর উপর ভরসা রাখছে।
বিশেষত্ব বলতে, এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থাটি দিন এবং রাতে এবং যে কোনও ঋতুতে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার তিনটি ধরনও রয়েছে।
আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্রের বহুল ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই শত্রুদেশের ক্ষেপণাস্ত্র হানা রুখতে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি রাখছে বিভিন্ন দেশ।