মরা মাছের বান ডেকেছে গ্রিসে। গ্রিসের একটি সমুদ্রবন্দর ভোলোস। সেখানে এখন শুধুই মরা মাছের মিছিল। অবস্থা এতই সঙ্গিন যে সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
কয়েকশো টন মরা মাছ ভেসে আসছে সমুদ্র থেকে। সেই মরা মাছের দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না স্থানীয় মানুষজন ও পর্যটকরা।
উপকূল বরাবর এবং নদীগুলোতে কয়েকশো টন মরা মাছ জমা হয়েছে। মরা মাছ থেকে ছড়াতে পারে মারাত্মক দূষণ, এমনটাই আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদেরা।
সমুদ্রবন্দরের বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে থাকা মাছ সরাতে বুলডোজ়ারের সাহায্য নিতে হচ্ছে প্রশাসনকে। মরা মাছেদের সরাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মীদের।
মরা মাছের কারণে সমুদ্রের জল দূষিত হতে শুরু করেছে। তৎপরতার সঙ্গে জল থেকে কর্মীরা মাছ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
জল কি তবে বিষিয়ে গিয়েছে? না কি মাছের মৃত্যুমিছিলের নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য?
গ্রিসের রাজধানী আথেন্সের উত্তর দিকে থেসালি অঞ্চলে ভোলোস বন্দরটি অবস্থিত। গত বছরও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে এই বন্দর নগরী।
২০২৩ সালে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে যায় থেসালি অঞ্চলটি।
আগে এই থেসালিতে একটি মিঠে জলের হ্রদ ছিল। ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ায় ১৯৬২ সালে এই হ্রদটির জল সম্পূর্ণ সেঁচে ফেলা হয়। বন্যার জল ঢুকে ভর্তি হয়ে যায় শুকিয়ে যাওয়া হ্রদটিও।
বন্যার জলের তোড়ে মিঠে জলের মাছ সমুদ্রে চলে যাওয়ায় তারা আর বাঁচতে পারেনি। সেগুলিই ফিরে এসে জমা হচ্ছে বন্দরে।
পরিবেশ বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভোলোসের সমুদ্রের মোহনায় নদীর মুখে কোনও জাল লাগানো নেই। তার ফলে প্রায় সব মাছ সমুদ্রের জলে গিয়ে পড়ছে।
আর তার ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মিষ্টি জলের মাছ নোনতা জলের সংস্পর্শে আসার পরেই সেগুলি মারা যাচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদেরা।
কেবলমাত্র গত মঙ্গলবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ভোলোসের কাছে সমুদ্রসৈকত থেকে ৫৭ টন মৃত মাছ অপসারণ করেছে বলে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।
গত বছরের বন্যার পর অঞ্চলটিতে পর্যটকের সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। এখন মরা মাছ তাদের জন্য আর একটি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়েরা।
ভোলোস অ়ঞ্চলটি পর্যটন শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। গ্রিস ছাড়াও ইউরোপের নানা দেশ থেকে ভ্রমণপ্রিয়রা গ্রীষ্মে এখানে বেড়াতে আসেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেখানকার সমুদ্রের ধারে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল হোটেল ও রেস্তরাঁ।
মরা মাছের ঢল নামায় আতঙ্কে পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। পচা মাছের দুর্গন্ধে এমনিতেই অতিষ্ট বাসিন্দারা। এই অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটনে ভাটা পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলি।