বুধবার ভারতীয় সংসদ ভবনে জঙ্গি আক্রমণের ২২তম বর্ষপূর্তির দিনেই ফিরে এল ভয়াবহতার পুরনো ছবি। সংসদের ভিতর অধিবেশন চলাকালীন রংবোমা বা স্মোক ক্র্যাকার নিয়ে হানা দেন দুই ব্যক্তি।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত পঞ্চম অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর তরফ থেকে পুলিশ সূত্রের এমন বয়ানই জানা গিয়েছে।
পঞ্চম অভিযুক্ত নিজে সংসদ ভবনের ভিতরে বা বাইরে উপস্থিত না থাকলেও, তিনি মদত জুগিয়েছেন এই কাজে।
বুধবার রাতে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে গ্রেফতার হন বিশাল শর্মা। জানা যায়, রংবোমা নিয়ে আক্রমণ করা মোট চার জন অভিযুক্তকে তিনিই আশ্রয় দিয়েছিলেন।
তবে গোটা ঘটনায় ছ’জনের যুক্ত থাকার প্রমাণ মিললেও ‘ষড়’যন্ত্রীদের মধ্যে ষষ্ঠ জনকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ বিজেপির মাইসুরু কেন্দ্রের সাংসদ প্রতাপ সিংহের দেওয়া প্রবেশপত্র পকেটে পুরে, জুতোয় রংবোমা লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন দুই যুবক। তার পরে অধিবেশন চলাকালীন দুপুর ১টার কিছু পরে লোকসভার দর্শক আসন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে ছুড়তে থাকেন সেই রংবোমা।
ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার মূল অধিবেশন কক্ষের একাংশ। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাংসদেরা।
লোকসভার অন্দরে রংবোমাকাণ্ড চলাকালীনই সংসদ ভবনের বাইরে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলেন দুই বিক্ষোভকারী। তাঁদের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। দ্রুত তাঁদের আটক করে পুলিশ।
যদিও লোকসভা কক্ষে ঝাঁপ মারা দু’জনকে ঠেকাতে মার্শাল বাহিনীকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। লোকসভারই দুই সাংসদ, উত্তরপ্রদেশের মালুন নাগর (বহুজন সমাজ পার্টি) এবং রাজস্থানের হনুমান বেনীওয়াল (রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি) পাকড়াও করেন তাঁদের। এর পরে ওই দুই যুবককে কয়েক জন সাংসদ মিলে শারীরিক নিগ্রহ করেন বলেও অভিযোগ।
পরে জানা যায়, সংসদের ভিতরে হামলা চালানো দু’জনের নাম সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি। সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলা দু’জনের নাম আনমোল শিন্ডে এবং নীলম সিংহ।
বুধবার রাতেই দিল্লি পুলিশের তদন্তে তথ্য মেলে যে, এই ঘটনার নেপথ্যে আরও দু’জন রয়েছেন। বস্তুত, তাঁদের পুরো পরিকল্পনাই হয়েছিল সমাজমাধ্যমে যোগাযোগের মধ্যে দিয়ে। পুলিশ দাবি করে, ছ’জন আলোচনা করে ঠিক করেন, সংসদের ভিতরে ঢুকে দু’জন ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করবেন।
ঘটনাচক্রে, বুধবারই ছিল সংসদে হামলার ২২ বছর পূর্তি। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলায় ন’জন নিহত হয়েছিলেন।
বুধবার সকালে সে দিনের সন্ত্রাসে নিহত নিরাপত্তা কর্মীদের স্মরণ করেই শুরু হয়েছিল সংসদের দু’কক্ষের শীতকালীন অধিবেশন। তার পরেই এই ঘটনার জেরে সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করেছে বিরোধী দলগুলি।
এরই মধ্যে লোকসভায় রংবোমা নিয়ে হানাদারির ঘটনায় প্রকাশ্যে এল পশ্চিমবঙ্গ যোগ। জানা গেল, বুধবার দুপুরে সংসদে রং-বোমা ফাটানোর পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন যিনি, তিনি এক জন সমাজকর্মী এবং কাজ করতেন বাংলারই এক এনজিওতে।
ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই নেপথ্য ‘নায়কের’ এক ঘনিষ্ঠ জানিয়েছেন, বুধবার লোকসভায় ওই ঘটনা ঘটানোর পর হোয়াট্সঅ্যাপে সেই ঘটনার ভিডিয়োও পাঠিয়েছিলেন বাংলায় সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত ওই যুবক। যাঁর নাম ললিত ঝা।