নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের বিখ্যাত যৌনপল্লি ‘দে ওয়ালেন’। ‘রেড লাইট ডিসট্রিক্ট’ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। নেদারল্যান্ডসে পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ এই এলাকা।
যৌনবৃত্তিকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ‘দে ওয়ালেন’-এ বাস করছেন নারীরা। এই এলাকার সঙ্গে তাই জড়িয়ে আছে উত্তর পশ্চিম ইউরোপের ইতিহাস, ঐতিহ্য।
কিন্তু ‘দে ওয়ালেন’-এর আয়ু হয়তো ফুরিয়ে এসেছে। এই যৌনপল্লি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমস্টারডাম প্রশাসন। সেখানকার যৌনকর্মীদের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘দে ওয়ালেন’-এর যৌনপল্লি তুলে দিয়ে সেখানে একটি বহুতল গড়ে তোলা হবে। যৌনবৃত্তি আবর্তিত হবে সেই বহুতলকে কেন্দ্র করেই। গত বছর এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।
প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন বহুতলটিতে যৌনকর্মীদের জন্য মোট ১০০টি ঝাঁ চকচকে ঘর নির্দিষ্ট থাকবে। পেশা অনুযায়ী সেই ঘরেই সঙ্গমে লিপ্ত হবেন তাঁরা।
এ ছাড়াও ওই বহুতলটিতে বিনোদনের নানা রসদ মজুত থাকবে। যাঁরা লালবাতি এলাকার আমেজ উপভোগ করতে আসবেন, তাঁদের জন্য ওই বহুতলেই থাকবে রেস্তরাঁ, বার, বিনোদন কেন্দ্র। এমনকি বহুতলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রও গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
বহুতলে যৌন উদ্দীপক কেন্দ্র (এরোটিক সেন্টার) গড়ে তোলার পরিকল্পনা সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দারা এমন বহুতলের ভাবনাকে সবুজ সঙ্কেত দিতে পারছেন না কিছুতেই। তাঁদের অনুমতি ছাড়া কাজ এগোচ্ছে না।
বস্তুত, ‘দে ওয়ালেন’-এর আশপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা কেউই চাইছেন না, তাঁদের বাড়ির পাশে এমন একটি যৌনতার আখড়া গড়ে উঠুক। কাউকে এ বিষয়ে রাজি করানো যাচ্ছে না।
আমস্টারডাম প্রশাসন এই বহুতল গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিক ভাবে ৮টি জায়গা বাছাই করেছিল। কিন্তু কোনও জায়গাতেই স্থানীয়দের রাজি করানো যায়নি।
অভিযোগ, আমস্টারডামের যৌনপল্লিকে কেন্দ্র করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে অপরাধমূলক প্রবণতা। যৌনতার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকা অপরাধীদের আখড়া হয়ে উঠছে। তাই ‘দে ওয়ালেন’ তুলে দিয়ে নতুন বহুতল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে প্রশাসন।
আমস্টারডামের মেয়র ফেমকে হালসেমা বলেছেন, ‘‘আমি আশা করছি, অপরাধীদের আখড়া তুলে দিয়ে ওই জায়গাটিতে একটি এরোটিক সেন্টার গড়ে তোলা যাবে। যার নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য থাকবে। তবে এই কাজে আমাদের এখনও লম্বা রাস্তা পার করতে হবে। কারণ এখনও অনেকেই যৌনবৃত্তিকে অপরাধ হিসাবে দেখেন। তাই ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই রাজি হচ্ছেন না।’’
আমস্টারডামের এই বিখ্যাত লালবাতি এলাকায় অন্তত ৩০০টি কেবিন রয়েছে। ছোট ছোট ঘরগুলি ভাড়া নিয়ে রাখেন যৌনকর্মীরা। কাচের দেওয়ালের ভিতর থেকে ইশারায় তাঁরা দর্শকদের ডাকেন। অর্থের বিনিময়ে উদ্দাম যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার হাতছানি রয়েছে ‘দে ওয়ালেন’-এর কোনায় কোনায়।
গোটা এলাকাটিই মৃদু লাল আলোতে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়। আলো-আঁধারির মাঝে যৌনতার খেলায় মেতে ওঠে নারী-পুরুষ। কাচের বদলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে জানলা দিয়েও হাত বাড়িয়ে দেন ‘দে ওয়ালেন’-এর যৌনকর্মীরা।
‘দে ওয়ালেন’-এ নানা ধরনের বিনোদন কেন্দ্রও রয়েছে। দোকানে দোকানে সাজিয়ে রাখা রয়েছে যৌন উদ্দীপক বস্তু। যৌনক্রিয়া সম্পর্কিত একটি আস্ত জাদুঘরও রয়েছে আমস্টারডামের সবচেয়ে প্রাচীন এই লালবাতি এলাকায়।
‘দে ওয়ালেন’-এ রয়েছে এমন থিয়েটার হল, যেখানে যৌন উদ্দীপনামূলক যাত্রা কিংবা সিনেমা দেখানোর বন্দোবস্ত রয়েছে। শহরের এই প্রান্তে যৌনবৃত্তিতে কোনও রাখঢাক নেই। প্রকাশ্যেই চলে যৌনতার উদ্যাপন।
দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ‘দে ওয়ালেন’-এ আসেন। কেউ শুধু মাত্র এখানে ঘুরে চলে যান। পারিপার্শ্বিকের আমেজ উপভোগ করেন। আবার কেউ কেউ এখানে এসে উদ্দাম যৌনতায় মেতে ওঠেন। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ‘দে ওয়ালেন’-এ আসেন ২ লক্ষ ‘যৌন পর্যটক’ (সেক্স টুরিস্ট)।
চলতি বছরের বড়দিনের মধ্যেই ‘দে ওয়ালেন’-এ বহুতল নির্মাণের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে ফেলতে চাইছেন মেয়র। তার পরেই শুরু করে দেওয়া হবে নির্মাণকার্য।
আমস্টারডাম শহরের মতোই তার যৌনবৃত্তির ইতিহাসও অনেক পুরনো। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতকে এখানে প্রথম যৌনতার মাধ্যমে রোজগারের আশা নিয়ে আসেন মহিলারা। প্রথম দিকে রাস্তার উপরেই চলত দেহব্যবসা। পরে প্রকাশ্যে যৌনতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
তার পর থেকে ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন আমস্টারডামের যৌনকর্মীরা। তাঁদের সেই দেহব্যবসাকেই এ বার নতুন রূপ দিতে চলেছে প্রশাসন। যৌনতার ক্ষেত্রকে সঙ্কুচিত করে একটি বহুতলে আবদ্ধ করে দেওয়া হবে ‘দে ওয়ালেন’।