গত কয়েক দিন ধরে শেয়ার বাজারে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। তাঁর শিল্পগোষ্ঠীর শেয়ারের দর হু হু করে নেমেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানিদের সব সংস্থা।
আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গত সপ্তাহে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তার পর থেকেই তাদের শেয়ারের দামে ধস নেমেছে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকাতেও। সেখানে এক ধাক্কায় তৃতীয় থেকে নেমে প্রথম দশের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছেন আদানি। ভারতীয় ধনকুবের বর্তমানে রয়েছেন ১৭ নম্বরে।
হিন্ডেনবার্গের এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আদানিরা কারচুপি করে ধনী হয়েছেন। শেয়ার বাজারে তাঁরা কৃত্রিম ভাবে নিজেদের দর বাড়িয়েছেন। এ ভাবে লগ্নিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
রিপোর্টে একা গৌতম আদানি বা তাঁর সংস্থা নয়, আদানি পরিবারের আরও একাধিক সদস্যের দিকে আঙুল তুলেছে হিন্ডেনবার্গ। নাম করে করে দেখানো হয়েছে, তাঁরা কী কী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
হিন্ডেনবার্গের তালিকায় রয়েছেন গৌতম আদানির ভাই, দাদা এবং শ্যালক-সহ আত্মীয়দের অনেকেই। অভিযোগ, একাধিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন আদানি পরিবারের এই সদস্যেরা।
হিন্ডেনবার্গের ১০৬ পাতার রিপোর্টে বিনোদ আদানির নাম রয়েছে। অভিযোগ, তিনি আদানি গোষ্ঠীর একটি ভুয়ো সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন।
গৌতম আদানির দাদা বিনোদ। ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি এবং ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতে তাঁর নাম জড়িয়েছিল।
পাকাপাকি ভাবে দুবাইতে থাকেন বিনোদ আদানি। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তাঁর সম্পদ নজরকাড়া। কয়েক সপ্তাহ আগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় বিনোদের নাম উঠে এসেছিল সবার উপরে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে রাজেশ আদানির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি গৌতমের ভাই। বর্তমানে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন তিনি। রাজেশ বেআইনি হিরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি আমেরিকান সংস্থার।
হিন্ডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, রাজেশ হিরে দুর্নীতিকাণ্ডে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারত সরকারের ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স বা ডিআরআই তাঁকে এই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করেছিল। ১৯৯৯ এবং ২০১০ সালে দু’বার রাজেশকে গ্রেফতারও করা হয়।
গৌতম আদানির শ্যালক সমীর ভোরার নামও করা হয়েছে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে। হিরে দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল এই সমীরেরও। বর্তমানে তিনি আদানিদের অস্ট্রেলিয়া বিভাগের এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর।
ডিআরআই সমীরকেও হিরে দুর্নীতিকাণ্ডের অন্যতম হোতা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল, রিপোর্টে জানিয়েছে হিন্ডেনবার্গ। অভিযোগ, তিনি দুর্নীতি ঢাকার জন্য একাধিক মিথ্যার আশ্রয়ও নিয়েছিলেন।
এ ছাড়াও, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পেশায় দাঁতের চিকিৎসক। আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারওম্যান প্রীতি।
রিপোর্টে রয়েছে যতীন মেটার নামও। তাঁর পুত্র আদানির ভাইয়ের কন্যার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। হিরে দুর্নীতির সঙ্গে তিনিও জড়িত বলে অভিযোগ হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে।
হিরে নিয়ে ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। আদানিরাই নাকি সেই দুর্নীতির কাণ্ডারি। অভিযোগ, কর ফাঁকি দিয়ে তাঁরা হিরে এবং সোনার গয়নার ব্যবসা চালিয়েছেন।
হিন্ডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টকে তারা ‘ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা’ বলেও দাবি করেছে।
কিন্তু আদানিদের জবাবের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি শেয়ার বাজারে। তার পরেও ক্রমশ নেমেছে তাদের শেয়ারের দর। বিপর্যয়ের মুখে তড়িঘড়ি ২০ হাজার কোটি টাকার এফপিও বাতিল করে দিয়েছেন আদানি।
এলআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে। আদানিদের বহু কোটির শেয়ার কিনেছে এই সব সংস্থা। তাই আদানিদের বিপর্যয়ের মুখে উদ্বেগে সাধারণ মানুষও।
এলআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে। আদানিদের বহু কোটির শেয়ার কিনেছে এই সব সংস্থা। তাই আদানিদের বিপর্যয়ের মুখে উদ্বেগে সাধারণ মানুষও।