আকাশ জুড়ে সূর্য। দিন-রাতের পার্থক্য বোঝার উপায় নেই। ক্ষীণ হতে হতে রাত প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এ ভাবেই কি শেষের দিকে এগিয়ে যাবে পৃথিবী?
সম্প্রতি মহাকাশে নতুন এক গ্রহের খোঁজ মিলেছে, যা বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। মনে করা হচ্ছে এই গ্রহই দেখাতে পারে, কী ভাবে এক দিন পৃথিবী মহাজাগতিক নিয়মে ধ্বংস হয়ে যাবে।
গ্রহটির নাম কেপলার-১৬৫৮বি। ২০১৯ সালে কেপলার টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রথম এই গ্রহ দেখতে পান বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশে কেপলার-১৬৫৮বি-এর শেষ দিন ঘনিয়ে এসেছে। দ্রুত গতিতে নক্ষত্রের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে সে। আগামী কয়েক হাজার বছরের মধ্যে গ্রহটি নক্ষত্রে বিলীন হয়ে যাবে। আর তার অস্তিত্ব থাকবে না।
তীব্র গতিতে মৃত্যুর দিকে ছুটছে কেপলার-১৬৫৮বি। সেই ছবি ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের টেলিস্কোপে। পৃথিবী থেকে গ্রহটির দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৬০০ আলোকবর্ষ। এই গ্রহের সঙ্গে সৌরজগতের গুরুগ্রহের সাদৃশ্য রয়েছে।
কেপলার-১৬৫৮বি সৌরজগতের বৃহস্পতি গ্রহের আকারের সমান। একে ‘হট জুপিটার’ বা ‘উষ্ণ বৃহস্পতি’ও বলা হয়ে থাকে।
সূর্য থেকে তার নিকটতম গ্রহ বুধের যা দূরত্ব, কেপলার-১৬৫৮বি এবং তার সূর্যের মধ্যেকার দূরত্ব তার চেয়ে ৮ গুণ কম। নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করতে কেপলার-১৬৫৮বি ৩ দিনেরও কম সময় নেয়।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই নক্ষত্র এবং কেপলার-১৬৫৮বি-এর মধ্যেকার দূরত্বই দিন দিন কমে আসে। নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করতে বছরে প্রায় ১৩১ মিলিসেকেন্ড করে কম সময় নিচ্ছে কেপলার-১৬৫৮বি।
‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিকাল জার্নাল লেটারস’ নামক বিজ্ঞান বিষয়ক একটি পত্রিকায় কেপলার-১৬৫৮বি নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, কেপলার-১৬৫৮বি যদি এই হারে নক্ষত্রের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তবে ৩০ লক্ষ বছরের কম সময়ে তা নক্ষত্রে বিলীন হয়ে যাবে।
কোন মহাজাগতিক নিয়মে পৃথিবীর শেষ ঘনিয়ে আসবে, বিজ্ঞানীরা তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। উঠে এসেছে একাধিক সম্ভাবনার কথা। তবে সূর্যের সঙ্গে এক সময় তার দূরত্ব কমে আসতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
মৃত্যুপথযাত্রী কেপলার-১৬৫৮বি-কে দেখার পর গ্রহের অন্তিম ক্ষণ সম্পর্কে আপাত ভাবে একটি ধারণা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কেপলার-১৬৫৮বি-এর মতো পরিণতি হতে পারে পৃথিবীরও।
কেমন হবে শেষের সে দিন? বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, বুধ এবং শুক্র গ্রহ সূর্যে আগেই বিলীন হয়ে যাবে। তার পর আসবে পৃথিবীর পালা। ধীরে ধীরে সূর্যের অনেক কাছে চলে যাবে নীল গ্রহ।
সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব যত কমবে, তত পৃথিবীর আকাশে বড় হতে থাকবে সূর্য। সেই সঙ্গে তার রং হবে গনগনে আগুনের মতো লাল। তাপে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বও যাবে বিলীন হয়ে।
হাভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের গবেষক শ্রেয়স ভিসপ্রগাদা বলেছেন, ‘‘আজ থেকে ৫০০ কোটি বছর পর হয়তো পৃথিবীর শেষের দিন ঘনিয়ে আসবে। পৃথিবীর আকাশের দখল নেবে সূর্য।’’
কেপলার-১৬৫৮বি পৃথিবীর সম্ভাব্য পরিণতিতে আলোকপাত করেছে ঠিকই, তবে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি শেষের দিনটি কেমন হবে। আকাশ জুড়ে দানবীয় লাল সূর্য দেখার জন্য সে দিন অবশ্য কেউ অবশিষ্ট থাকবেন না।
গবেষকদের একাংশ এ-ও বলেন, পৃথিবীর সেই অন্তিম ক্ষণ উপস্থিত হতে হতে অন্য কোনও সৌরজগতের অন্য কোনও গ্রহ বা উপগ্রহে মানুষ তাদের নতুন ঠিকানা খুঁজে নিতে পারে, সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।