Eli Cohen

সিরিয়া সরকারে ছড়ি ঘোরাতেন, দামাস্কাসের রাস্তায় প্রকাশ্যে ফাঁসি হয় মোসাদের গুপ্তচরের

১৮ মে ১৯৬৫ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের মার্জিস স্কোয়ারে ১০ হাজার মানুষের জমায়েত। উপলক্ষ এক ‘বিশ্বাঘাতক’ গুপ্তচরের ফাঁসি। কিন্তু কেন? কী তার অপরাধ? কেউ জানেন, কেউ বা জানেন না!

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৪০
Share:
০১ ১৯

ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের জগৎজোড়া খ্যাতি। কোন ছদ্মবেশে যে লুকিয়ে আছে তাদের গুপ্তচর, তা বুঝে ওঠার আগেই কাজ সাঙ্গ করে বিলীন হয়ে যান তাঁরা। বহু ক্ষেত্রেই আক্রান্ত দেশ মোসাদের উপস্থিতি টের পায় ক্ষতি হওয়া যাওয়ার পর। এলি কোহেন এমনই এক জন গুপ্তচর ছিলেন যাঁর জন্য পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল ইজরায়েল।

ছবি: সংগৃহীত।

০২ ১৯

১৯৬৫ সালের ১৮ মে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের মার্জিস স্কোয়ারে ১০ হাজার মানুষের জমায়েত। উপলক্ষ এক ‘বিশ্বাসঘাতক’ গুপ্তচরের ফাঁসি। কিন্তু কেন? কী তাঁর অপরাধ? কেউ জানেন, কেউ বা জানেন না! কেউ বা কানে শোনা খবরেই হাজির হয়ে গিয়েছেন সেখানে। হাজির সিরিয়া প্রশাসনের ছোটবড় বহু কর্তা। এমন একজন ‘বিশ্বাসঘাতক’কে ফাঁসি দেওয়ার দৃশ্য দেখতে চান সিরিয়া প্রশাসনের আধিকারিকেরা।

ছবি: সংগৃহীত।

Advertisement
০৩ ১৯

কামিল আমেন থাবেতকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাস সিরিয়া প্রশাসনের। মোসাদের গুপ্তচর হিসাবে সিরিয়াকে ঘুণপোকার মতো ফাঁপা করে দেওয়ার শাস্তি হিসাবে চরম দণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। আর কেউ যাতে সিরিয়ার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করার সাহস না দেখান, সেই কারণে প্রকাশ্য দিবালোকে ফাঁসির আয়োজন করেছিল সিরিয়া সরকার।

ছবি: সংগৃহীত।

০৪ ১৯

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গুপ্তচরকে কামিল আমেন থাবেত নামে চিনত সিরিয়ার প্রশাসন। যদিও তাঁর আসল নাম ছিল এলি কোহেন। যিনি ইজরায়েলের হয়ে সিরিয়ায় চার বছর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯৬১-’৬৫ সালের মধ্যে সিরিয়া প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

০৫ ১৯

এলি কোহেনকে সিরিয়া পাঠানো হয়েছিল তাদের সামরিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে ইজরায়েলকে অবগত করতে। পারদর্শী এই গুপ্তচর চার বছর একের পর এক খবর মোসাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিল সিরিয়াকে। কোথা থেকে তাঁদের সব পদক্ষেপের আগাম খবর ইজরায়েলের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, সে সম্বন্ধে বহু দিন কোনও খোঁজই পায়নি সিরিয়া।

ছবি: সংগৃহীত।

০৬ ১৯

নিজের কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার জন্যই তাঁকে সিরিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোসাদ। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগে এত সহজে ঢুকে যাবেন এলি, যা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি মোসাদও। তাই রসদ হিসেবে কোহেন যা যা চেয়েছিল, সবই দিয়েছিল মোসাদ।

ছবি: সংগৃহীত।

০৭ ১৯

১৯২৪ সালে মিশরের এক ইহুদি পরিবারে জন্মেছিলেন কোহেন। পুরো নাম ছিল ইলিয়াহু বেন শল কোহেন। মিশরে ইহুদি বিরোধী কট্টরতার কারণে দেশছাড়া হয় তাঁর পরিবার। পড়াশোনা সম্পূর্ণ করার জন্য মিশরেই থেকে যান কোহেন। তিনি মিশরেই থাকতে চেয়ছিলেন। কিন্তু মিশরে ইহুদি বিরোধিতা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৫৬ সালে ইজরায়েলে পরিবারের কাছে চলে যান।

ছবি: সংগৃহীত।

০৮ ১৯

পড়াশোনোয় ভাল হওয়ার কারণে ইজরায়েলি সেনায় ভাল পদে চাকরিতে যোগ দেন কোহেন। সেনায় গোয়েন্দা বিভাগেই কাজ শুরু করেন তিনি। মোসাদে যোগদানের বাসনা ছিল তাঁর। কিন্তু বেশ কয়েক বার আবেদন করেও বিফল হন। সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সময়েই নাদিয়া মাজেল নামে এক মহিলার সঙ্গে বিয়ে হয় কোহেনের।

ছবি: সংগৃহীত।

০৯ ১৯

ভাগ্যের চাকা ঘোরে ১৯৬০ সালে। আচমকাই এলি কোহেন ডাক পান মোসাদ থেকে। সেই সময় একটি নতুন মিশনে তাঁকে পাঠানোর জন্য মনস্থির করে মোসাদ। মিশন ছিল যথেষ্ট বড়। দায়িত্বপালনের জন্য তাঁকে বিশেষ প্রশিক্ষণও নিতে হয়। সিরীয়দের মতো আরবিতে কথা বলা থেকে শুরু করে তাঁদের জীবনযাপনের পদ্ধতি শিখতে হয় তাঁকে। মোসাদের গুপ্তচর হিসেবে তাঁর প্রথম গন্তব্য ছিল আর্জেন্টিনা।

ছবি: সংগৃহীত।

১০ ১৯

১৯৬১ সালে আর্জেন্টিনায় সিরীয় পরিচয়ে কাজ শুরু করেন কোহেন। সেখানে একজন ব্যবসায়ীর পরিচয় নিয়ে সিরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। প্রথমে সিরীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও পরে তাঁদের মারফত সিরিয়া প্রশাসনের বরিষ্ঠ আধিকারিকদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু হয় তাঁর। তাদের থেকে পাওয়া খবর মোসাদকে পাঠানো শুরু করেন তিনি। চমকপ্রদ সেই সব তথ্যে ভর করে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বাড়ানো শুরু করে ইজরায়েল।

ছবি: সংগৃহীত।

১১ ১৯

আর্জেন্টিনায় কামিল আমেন থাবেতের বিলাসবহুল পার্টিতে নিয়ম করে সিরীয় ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের যাতায়াত শুরু হয়। জানা যায়, সেই সব মহার্ঘ পার্টির আয়োজন করা হত মোসাদের অর্থেই। সেই সব পার্টিতে অজানা তথ্য সহজেই পেয়ে যেতেন কোহেন। এই পার্টিগুলিতে পর্যাপ্ত মদের সঙ্গে জুয়ার আসরের আয়োজন করা হত। আনা হত আর্জেন্টিনার সুন্দরী নারীদেরও।

ছবি: সংগৃহীত।

১২ ১৯

এক বছর আর্জেন্টিনায় থেকে জমি তৈরির পর এ বার প্রয়োজন ছিল সরাসরি সিরিয়ায় ঘাঁটি গাড়ার। সেই কাজে এলি কোহেনকে সহায়তা করেছিলেন তৎকালীন সিরীয় সেনার আধিকারিক আমিন-আল-হাফিজ (পরে যিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন)। তাঁর হাত ধরেই দামাস্কাসে এসে আমদানি রফতানির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ব্যবসার কাজের জন্য সিরিয়ার রাজধানীতেই স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন কোহেন।

ছবি: সংগৃহীত।

১৩ ১৯

দামাস্কাসে এসেও এলি কোহেন সিরিয়ার মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা বিভাগ ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে মহার্ঘ পার্টি দেওয়া শুরু করেন। সেই সব পার্টি থেকে এ বার সিরিয়া প্রশাসনের অন্দরমহলের খবর মোসাদের কাছে পৌঁছানোর কাজ শুরু করেন তিনি। এক কথায় কোহেনের দিনরাত কাটত সিরিয়া প্রশাসন ও সেনাবিভাগের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গেই। কাউকে টাকা দিয়ে, কাউকে বা উপহার দিয়ে, সিরিয়া সরকারের গোপন তথ্য আদায়েও সিদ্ধহস্ত ছিলেন কোহেন।

ছবি: সংগৃহীত।

১৪ ১৯

রেডিও ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে দামাস্কাস থেকে কোহেন ইজরায়েলে মোসাদের দফতরে খবর পাঠাতেন। সময়ে সময়ে বিভিন্ন কোড ব্যবহার করে নিজের বার্তা ইজরায়েলে পৌঁছে দিতেন তিনি। কোনও দস্তাবেজ পাঠানোর হলে, তখন কাজে আসত তাঁর আমদানি রফতানির ব্যবসা। ব্যবসার আড়ালে সেই সব নথি সহজেই মোসাদের কাছে পৌঁছে যেত।

ছবি: সংগৃহীত।

১৫ ১৯

১৯৬৪ সালে নিজের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে শেষ বার ইজরায়েল এসেছিলেন এলি কোহেন। সেই সময়ই তিনি মোসাদের শীর্ষকর্তাদের জানিয়ে দেন খুব বেশি দিন এ ভাবে আর সিরিয়ায় কাজ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু এমন কথা জানার পরেও কোহেনকে আবারও সিরিয়ায় ফিরে কাজ করার পরামর্শ দেয় মোসাদ। সেই নির্দেশ পাওয়ার পর আবারও দামাস্কাসে ফিরে যান তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

১৬ ১৯

গত আড়াই বছরে সিরিয়া সরকার ও সেনাবিভাগের বহু তথ্য ইজরায়েলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। নিজেদের গোয়েন্দা বিভাগের থেকে ঘন ঘন এমন খবর পাচ্ছিল প্রশাসন। সঙ্গে তাঁরা জানতে পারে রেডিয়ো ট্রান্সমিটারের মাধ্যমেই সেই সব খবর সিরিয়া থেকে ইজরায়েলে পাঠানো হচ্ছে। সেই খবরের ওপর ভিত্তি করেই রেডিও ট্রান্সমিটার খোঁজে নামে সিরীয় সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা।

ছবি: সংগৃহীত।

১৭ ১৯

রেডিও ট্রান্সমিটার খোঁজ করতে হতবাক হয়ে যায় সিরীয় সেনাবাহিনী। দেখা যায়, যত বার তাঁরা এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন, তত বারই তাদের প্রযুক্তি দামাস্কাসে এলি কোহেনের বাসভবনের দিকে ইঙ্গিত করছে। শেষমেশ ১৯৬৫ সালে কোহেনকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী। এর পর শুরু হয় তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন।

ছবি: সংগৃহীত।

১৮ ১৯

হাজারো অত্যাচার ও নির্যাতন সত্ত্বেও এলি কোহেনের থেকে কোনও তথ্যই পায়নি সিরিয়া। সেই সময় ইজরায়েল আন্তর্জাতিক মহল থেকে সিরিয়ার ওপর চাপ তৈরি করে কোহেনকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনও অনুরোধ বা চাপে কর্ণপাত না করে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

১৯ ১৯

ফাঁসিতে ঝোলানোর সময় তাঁর গায়ে আরবি ভাষায় লিখে দেওয়া হয় তিনি এক জন মোসাদের গুপ্তচর, সিরিয়ার বহু ক্ষতি করেছেন। ১৯৬৫ সালের ১৮ মে মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ ইজরায়েলকে ফেরত দেয়নি সিরিয়া। কেবলমাত্র ১৫ মে তাঁর লেখা একটি চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল তাঁর পরিবারের কাছে।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement