দু হাজার একুশকে কি বিচ্ছেদের বছর বলা যায়! ক্যালেন্ডার বলছে, খ্যাতনামীরা একের পর এক বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়েছেন এই বছর। প্রেমিক বা প্রেমিকা বিচ্ছিন্নও হয়েছেন কেউ কেউ। মনোরঞ্জন জগতের একের পর এক নাম তো আছেই। তার পাশাপাশি রাজা-উজির এমনকি কোটিপতিরাও ঘর ভাঙা ঠেকাতে পারেননি।
ভাঙনের তালিকায় বিল গেটস থেকে শুরু করে রয়েছেন টেসলার সর্বেসর্বা ধনকুবের এলন মাস্ক। আছেন হলিউডের জেনিফার লোপেজ, গিগি হাদিদরাও। ভারতীয় সিনেমা জগতের আমির-কিরণ, সামান্থা-নাগা চৈতন্য কিংবা ঘরের কাছে বাঙালি গায়ক অনুপম রায়ের বিচ্ছেদের স্মৃতিও বেশ দগদগে। এখনও।
তবে বিচ্ছেদ-বিতর্কের পাশাপাশি যা আসে, তা হল ভরণপোষণের হিসেব। সোজা কথায় খোরপোশ। যত বড় ব্যক্তিত্ব, যত বেশি সম্পদ, তত বেশি খোরপোশ। ১৩ হাজার কোটি ডলারের মালিক বিল এবং মেলিন্ডা গেটস যদিও কানাকড়ির ভাগাভাগি না করে চমকে দিয়েছিলেন। তবে সবাই কি আর গেটস দম্পতি! বরং তাঁদের উল্টোটাই। সম্প্রতি তেমনই একটি উদাহরণ দেখে চোখ কপালে উঠেছে অনেকের।
দুবাইয়ের রাজ পরিবারের এক সদস্যকে বিচ্ছেদের ‘দাম’ দিতে হয়েছে কোটি কোটি মার্কিন ডলারে। রাজপুত্রের থেকে পাওয়া খোরপোশে নিজের পরিচারিকাদলের বেতন পর্যন্ত আদায় করে ছেড়েছেন তাঁর বিচ্ছিন্না স্ত্রী।
দুবাইয়ের ওই রাজপুত্রের নাম শেখ মহম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম। তিনি দুবাইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীও। বয়স ৭২।
২০০৪ সালে রাজকুমারী হায়া বিন্ত আল হুসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় দুবাইয়ের এই শাসকের। ১৫ বছর পর ২০১৯ সালে স্ত্রীকে না জানিয়েই শরিয়ত আইনে তাঁকে বিচ্ছেদ দেন মাখতুম। খোরপোশের মামলা শুরু হয় তার পর থেকেই।
দু’বছর ধরে চলে মামলা। শেষ হয় এই ২০২১ সালেই। ব্রিটেনের আদালত রাজপরিবারের আইনি বিচ্ছেদ এবং খোরপোশের বিষয়টি সামলায় ৭৩ কোটি মার্কিন ডলারে।
দুবাইয়ের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্ত্রী-র ফোন হ্যাক করা এমনকি নিজের দুই কন্যাকে অপহরণ করানোরও অভিযোগ ছিল। তাই বোঝা পড়া করতে একটু বেশিই অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আদালতকে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী-ও জানিয়েছেন নিরাপত্তার স্বার্থেই তাঁকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
কিন্তু কী সেই ‘ব্যবস্থা’? জানা গিয়েছে বিচ্ছিন্ন স্ত্রী এই দুই কন্যাকে লন্ডনের একটি প্রাসাদোপম বাড়িই খোরপোশে দিতে হয়েছে মাখতুমকে। খোরপোশের অর্থের ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে শুধু সেই প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই। এর মধ্যে ওই প্রাসাদের পাঁচজন পরিচারকের বেতনও রয়েছে। পাশাপাশি ওই প্রাসাদের ১০ বছরের সংস্কারের ভারও মাখতুমকেই নিতে বলেছে ব্রিটেনের আদালত।
মাখতুমের সঙ্গে বিয়ের পর ৪০০টি রেসের ঘোড়া কিনেছিলেন রাজকন্যা হায়া। সেই ৪০০ ঘোড়াও তাঁকেই দিয়েছে আদালত। পশুপ্রেমী প্রাক্তন স্ত্রীকে বছরে প্রায় চার লক্ষ মার্কিন ডলার দিতে হবে মাখতুমকে। শুধু পোষ্যদের পরিচর্যার জন্য।
সুদিনে প্রাক্তন স্ত্রী-কে প্রায়শই দামি অলঙ্কার, নামি ব্র্যান্ডের পোশাক উপহার দিতেন মাখতুম। ৪৭ বছরের রাজকন্যা সেসবও সঙ্গে নেবেন।
যদিও রাজকন্যার অভিযোগ ওই সব অলঙ্কার এবং পোশাকের অনেকগুলিই চুরি গিয়েছে। আদালত তার জন্যও ক্ষতিপূরণ দিয়েছে হায়াকে। চুরি যাওয়া অলঙ্কারের জন্য প্রায় দু’কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন হায়া।