কফিন আকারের যন্ত্রের ভিতর প্রবেশ করলে ১০ মিনিটেই মৃত্যু। থাকবে না কোনও মৃত্যুযন্ত্রণা। সেই যন্ত্র, যার নাম ‘সার্কো’-কে এ বার অনুমোদন দেওয়া হোক স্কটল্যান্ডেও। চাইছেন যন্ত্রের নির্মাণকারী সংস্থার প্রধান ফিলিপ নিটশে। যাঁকে বলা হয় ‘ডক্টর ডেথ’। এই নিয়ে প্রচারও চালাচ্ছেন তিনি।
নিটশের ইচ্ছা, স্কটল্যান্ডে আনা হোক এই যন্ত্র। জনসাধারণের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে। তাঁর দাবি, এতে উপকার হবে সেই সব মানুষের, যাঁরা মরতে চান। কিন্তু যন্ত্রণার ভয়ে ওই পথে হাঁটতে পারছেন না।
মৃত্যুর প্রত্যাশায় যন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করার এক মিনিটের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সেই ব্যক্তি। ১০ মিনিটে মৃত্যু অবধারিত।
ইতিমধ্যে স্কটল্যান্ডের লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক এমপি লিয়াম ম্যাকআর্থারকেও চিঠি দিয়েছেন নিটশে।
লিয়াম সে দেশে সাহায্য নিয়ে আত্মহত্যাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য বিল আনার পক্ষে সওয়াল করছেন।
নিটশে অনুরোধ করেন, স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে যে বিল আনা হচ্ছে, তাতে তাঁর সংস্থার তৈরি যন্ত্রের কথাও থাকুক। চাইলে যাতে ইচ্ছুকরা ওই যন্ত্রের মাধ্যমে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারেন, সে কথার উল্লেখ থাকুক বিলে।
নিটশে বার বার দাবি করেছেন, এই যন্ত্রের মাধ্যমে ‘শান্তি’-তে মরতে পারবেন ইচ্ছুকরা।
যদিও বামপন্থীরা স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে আনা এই বিলের বিরোধিতা করেছেন। নিটশের সংস্থার তৈরি মৃত্যু-যন্ত্রেরও বিরোধিতা করেছেন।
ওই দেশের বামপন্থী তাদের দাবি, দেশের সাধারণ মানুষ এতে ‘আতঙ্কিত’ হয়ে পড়বেন। এই দাবি অবশ্য মানতে চাননি নিটশে। জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই খুনের কাজে এই ‘সার্কো’ পড ব্যবহার কার যাবে না। কারণ যন্ত্রটির ভিতরে না ঢুকলে একে সক্রিয় করা যাবে না। ভিতরে থাকা বোতাম চাপলে তবেই বেরিয়ে আসবে বিষাক্ত গ্যাস। তাই চাইলেও কেউ বাইরে থেকে এই যন্ত্র চালু করতে পারবেন না।
এই সার্কোর ভিতরে রয়েছে আপৎকালীন বোতাম। কোনও ব্যক্তি আচমকা মন বদলালে চাপতে হবে সেই বোতাম। তাহলেই থেমে যাবে মৃত্যুর প্রক্রিয়া। সার্কো খুলে বেরিয়ে আসতে পারবেন ওই ব্যক্তি।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান গর্ডন ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘‘ফিলিপ নিটশে নিজের যন্ত্রের জন্য লবি করছেন। সে কারণেই স্কটল্যান্ডে স্বেচ্ছামৃত্যু এবং সাহায্য নিয়ে আত্মহত্যা আইনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। এই দেখে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।’’
২০১৫ সালে নিজের ডাক্তারির লাইসেন্স পুড়িয়ে ফেলেন নিটশে। ২০২১ সালে তৈরি করে ফেলেন আত্মহত্যার জন্য যন্ত্র ‘সার্কো’। সুইৎজারল্যান্ডের যে সব ক্লিনিকে স্বেচ্ছামৃত্যুর ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে এই যন্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটেনের একটি দৈনিক সংবাদপত্রের দাবি, অনেক সময় মরণেচ্ছু ব্যক্তি পেশিশক্তি ব্যবহার করে কোনও কাজ করার মতো পরিস্থিতিতে থাকেন না। ওই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শুধু মাত্র চোখের পাতার নড়াচাড়া আঁচ করেই যন্ত্র সঙ্কেত গ্রহণ করতে পারবে।
ব্রিটিশ একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দু’টি এমন সারকো যন্ত্র তৈরি হয়ে রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরও একটি যন্ত্রের থ্রি-ডি প্রিন্টিং শুরু করেছে এগজ়িট ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি জানিয়েছে, সুইৎজারল্যান্ডে এই পরিষেবা দেওয়া শুরু করাই লক্ষ্য সংস্থার। তার পরই তাদের লক্ষ্য স্কটল্যান্ড। যদিও তাতে বিতর্কের ঢেউ থামছে না।
যন্ত্র নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। অনেকেই মনে করেন, আসলে গ্যাস চেম্বারকে মহিমান্বিত করেছে এই ‘সার্কো’। সমাজসেবীদের বড় অংশ মনে করেন, এই যন্ত্রের মাধ্যমে আত্মহত্যাকেই স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।