ক’দিন আগেই চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ছাত্রীদের স্নানের ভিডিয়ো তুলে তা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল দেশে। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার জেরে আট জন ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও পরে জানা যায়, কোনও ছাত্রীর ভিডিয়ো তোলা হয়নি। অভিযুক্ত ছাত্রী নিজের ছবি তাঁর বন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন। এই ঘটনায় হইচই পড়ে যায় চার দিকে। কিন্তু এমন ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও দেশে আপত্তিকর ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ গিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল।
ইদানীং, ‘এমএমএস কেলেঙ্কারি’র কথা আকছার শোনা যায়। কিন্তু এই শব্দবন্ধের সঙ্গে দেশবাসীর প্রথম পরিচয় হয়েছিল ২০০৪ সালে। ওই বছরই দেশে প্রথম এই কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল।
এই কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছিল দিল্লির একটি স্কুলের। ওই স্কুলের দুই পড়ুয়ার একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল। যা ঘিরে তোলপাড় পড়ে যায়।
স্কুল চত্বরে একাদশ শ্রেণির দুই পড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের ভিডিয়ো রেকর্ডিং ছড়িয়ে পড়েছিল। যে ছেলেটি ভিডিয়োটি তুলেছিল, তার ফোনে ‘মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং’ ব্যবস্থা ছিল।
তখনও বাজারে স্মার্টফোন আসেনি। কিছু কিছু ফোনে তখন ‘মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং’-এর সুবিধা ছিল। যার সাহায্যে ফোনে ভিডিয়ো পাঠানো যেত।
দুই পড়ুয়ার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিয়োটি ছিল ২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের। কয়েক মুহূর্তে সেটি বিভিন্ন ফোনে ছড়িয়ে পড়েছিল।
পরে ওই ভিডিয়োটি ইন্টারনেটেও আপলোড করা হয়। যা ‘কপি’ করে আরও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে এই ভিডিয়ো ক্লিপটির জন্য প্রথমে কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি।
২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর। দিল্লির একটি সংবাদপত্রে এই ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, দিল্লির একটি স্কুলের পড়ুয়াদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ওই ভিডিয়োটি বিক্রি করছে একটি ‘অনলাইন ট্রেডিং ওয়েবসাইট’।
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘…গার্লস হ্যাভিং ফান’— এই নামে ভিডিয়োটি ওই ওয়েবসাইটে ছিল। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায়।
এই ঘটনায় দিল্লির হাইজ খাস থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। প্রতিবেদনটির সূত্র ধরে ‘ক্রাইম ব্রাঞ্চ’কে তদন্তের নির্দেশ দেন দিল্লির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ‘এমএমএস ক্লিপ’টি ওই ওয়েবসাইটে ১২৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল।
এই ঘটনায় নাম জড়ায় খড়্গপুর আইআইটি-র চতুর্থ বর্ষের ছাত্রের। ক্লিপটি বিক্রির নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা ছিল বলে দাবি করে পুলিশ। ২০০৪ সালের ২৭ নভেম্বর ক্লিপটি বিক্রির জন্য ওয়েবসাইটে সেটি রাখেন ওই ছাত্র।
খড়্গপুরের ঠিকানায় ‘এলিস ইলেক্ট্রনিক্স’ নাম ব্যবহার করেছিলেন ওই ছাত্র। পরে ওই ওয়েবসাইটটির সিইও-কে তলব করেছিল দিল্লি হাই কোর্ট।
এই ঘটনায় ওয়েবসাইটটির সিইও, ওই পড়ুয়া ও আরও এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করে পুলিশ। ভিডিয়োটির বিষয়বস্তু জানার পরও তাঁরা সেটি বিক্রি করেছিলেন বলে দাবি করে পুলিশ।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯২ ও ২৯৪ এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ভিডিয়োটিতে যে ছাত্র ও ছাত্রীকে দেখা গিয়েছিল, তাদের স্কুল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, ওই ছাত্র ও ছাত্রীর বাবা-মায়েরা তাদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। তবে তারা কোথায় রয়েছে জানা যায়নি।
এই ঘটনার পর গত দেড় দশকে দেশে একাধিক ‘এমএমএস কেলেঙ্কারি’র ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। বর্তমানে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের দুনিয়ায় এই ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা অহরহ ঘটছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা।
‘এমএমএস কেলেঙ্কারি’ নিয়ে সিনেমাও তৈরি হয়েছে বলিউডে। যার মধ্যে অন্যতম ‘দেব ডি’, ‘লভ সেক্স অউর ধোঁকা’, ‘রাগিণী এমএমএস’।