ভরা রাস্তায় নাচছেন এক দল পড়ুয়া। তবে তাঁদের মাঝে নজর কেড়ে নিয়েছেন এক তরুণী। টি-শার্ট এবং জিন্স পরা পড়ুয়াদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও নাচছেন নিপুণ ভঙ্গিতে।
গাঢ়় নীল রঙা শাড়ি পরিহিতা ওই তরুণীর এ হেন কীর্তিতে আপাতত উচ্ছ্বসিত নেটদুনিয়া। কে তিনি?
ফেসবুকে ওই তরুণীর উচ্ছল নাচের ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন কেরলের বাসিন্দা অজিন পতনমতিত্তা। অজিনই জানিয়েছেন, ওই তরুণী আর কেউ নন, পতনমতিত্তার জেলাশাসক দিব্যা এস আয়ার। ওই ভিডিয়োটিই ভাইরাল হয়েছে।
উপলক্ষ ছিল, মহাত্মা গাঁধী ইউনিভার্সিটি আর্ট ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা। ৩১ মার্চ কেরলের ক্যাথোলিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সেই অনুষ্ঠানে একটি ‘ফ্ল্যাশ মব’-এর আয়োজন করেছিলেন।
ওই অনুষ্ঠানে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘গলিয়োঁ কি রাসলীলা: রামলীলা’ সিনেমার একটি গান বাজিয়ে আচমকাই নেচে উঠেছিলেন এক দল ছাত্র-ছাত্রী। সে দলেই ভিড়ে গিয়েছিলেন পতনমতিত্তার জেলাশাসকও।
ভন্সালীর ওই সিনেমায় ‘নাগাড়া সঙ্গ ঢোল বাজে’ গানের তালে তালে তুমুল নেচেছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। ওই গানের কয়েকটি দৃশ্যে রণবীর সিংহও কোমর দুলিয়েছিলেন। সম্প্রতি দীপিকা-রণবীরের সে গানের তালেই পড়ুয়াদের সঙ্গে নেচেছেন দিব্যা।
ভিডিয়োর সঙ্গে অজিন লিখেছেন, ‘পড়ুয়াদের সঙ্গে নাচের ছন্দে মেতে জেলাশাসক! জেলা স্টেডিয়ামে কলেজ পড়ুয়াদের ফ্ল্যাশ মব-এ নাচছেন পতনমতিত্তার জেলাশাসক তথা আইএএস আধিকারিক দিব্যা এস আয়ার।’
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সপরিবার হাজির হয়েছিলেন দিব্যা। প্রথম দিকে অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে থাকলেও পড়ুয়াদের অনুরোধে এক সময় তিনিও মাঠে নেমে পড়েন।
ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে প্রভূত প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছেন দিব্যা। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘যুব উৎসবের সূচনা করতে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম। সঙ্গে আমার সন্তান এবং পরিবারও ছিল। পড়ুয়াদের নাচ উপভোগ করছিলাম। ওঁরাই এসে নাচের তালে তালে আমাকে পা মেলাতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।’’
জেলাশাসকের এ হেন কাণ্ডে আপ্লুত নেটমাধ্যম। দিব্যার উৎসাহ দেখে তারিফও করেছেন তাঁরা। ২০১৪ সালে আমলা হওয়ার আগে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা সেরে ফেলেছিলেন। এমনকি, আমলা হিসাবে কাজ শুরু করার পরে ডাক্তারি করতেন ৩৭ বছরের দিব্যা।
১৯৮৪ সালে কেরলের তিরঅনন্তপুরমের জন্ম দিব্যার। বাবা সেশা আয়ার ইসরো-র অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ত্রিবাঙ্কুরে কাজ করেন। সেশা এবং ভগবতীর বড় মেয়ে দিব্যা সেকেন্ডারি পরীক্ষায় রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিলেন। এর পর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
মেডিক্যাল কলেজের ডিগ্রি সত্ত্বেও ডাক্তারিকে পাকাপাকি ভাবে পেশা হিসাবে বেছে নেননি দিব্যা। ২০১৪ সালে আমলা হিসাবে তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল কোট্টায়মের অ্যাসিস্টেন্ট কালেক্টরের কার্যভার। এর পর তিরুঅনন্তপুরমের সাব-কালেক্টর হন তিনি।
আমলার দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি গানে এবং অভিনয়েও উৎসাহ রয়েছে দিব্যার। রাজ্যের ভোটারদের উৎসাহিত করতে ‘মাই ভোট মাই ফিউচার’ নামে সরকারি প্রচারে অংশ নেন তিনি।
ভোটারদের অধিকার নিয়েও সরব দিব্যা। ২০১৬ সালে এ সম্পর্কিত একটি গানও লিখে ফেলেন। নিজেই গলা মিলিয়েছিলেন তাতে। সে সময় ওই গানটিও ভাইরাল হয়েছিল।
পরের বছর আবারও চমক দেন দিব্যা। মালয়ালি একটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সে ছবি মুক্তির পর নজর কাড়েন দিব্যা।
কর্মক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ২০১৮ সালে তিরুঅনন্তপুরমের স্থানীয় দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি পদে উন্নীত হন দিব্যা। এর পর ১০০ দিনের কাজে তাঁর তোড়জোড় নজরে এসেছিল স্থানীয়দের।
গত বছরের ২১ জুলাই পতনমতিত্তার ৩৬তম জেলাশাসক হিসাবে কাজ শুরু করেন দিব্যা। আমলা হিসাবে কাজের পাশাপাশি একাধিক বইও লিখেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে পতনমতিত্তা জেলার একটি আদিবাসী স্কুলের পড়ুয়াদের লিঙ্গনিরপেক্ষ পোশাক বিলি করেও শিরোনামে উঠে এসেছিলেন দিব্যা।
কাজের ফাঁকে সংসারও পেতেছেন এই আমলা। ২০১৭ সালে তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক কে এস সবরীনাধনকে বিয়ে করেন।
ঘটনাচক্রে, কেরল বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার তথা এককালের মন্ত্রী জি কার্তিকেয়নের ছেলেকে বিয়ের পর ওই রাজ্যের প্রথম বিধায়ক-আমলা দম্পতি হন তাঁরা। ২০১৯ সালে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়।