দিগ্বিবিজয়সিংহজি রঞ্জিৎসিংহজি জাডেজা। এই নাম হয়তো অনেকেই শোনেননি। তবে ক্রিকেটপ্রেমী ভারতীয়দের অনেকেই তাঁর কাকার নাম শুনেছেন। দ্বিতীয় রঞ্জিৎসিংহজি ভিবাজি। যাঁর নামে বিখ্যাত রঞ্জি ট্রফির সূত্রপাত।
দিগ্বিবিজয়সিংহজি রঞ্জিৎসিংহজি জাডেজা ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত গুজরাতের নওয়ানগরের (বর্তমানে যার নাম জামনগর) ‘জাম সাহেব’ অর্থাৎ মহারাজা ছিলেন।
কাকা রঞ্জিৎসিংহজি ভিবাজির পর তিনিই সিংহাসনে বসেন।
দিগ্বিবিজয়সিংহজি ১৮৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রাজকোটের রাজকুমার কলেজে পড়াশোনা শেষ করে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যালভার্ন কলেজে ভর্তি হন।
পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তিনি ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সেনাদলে যোগ দেন। ১৯২০ সালে মিশরে ভাল কাজ করার জন্য ১৯২১ সালে তিনি ব্রিটিশ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন।
প্রায় এক দশক ইংরেজ সেনাদলে কাজ করার পর ১৯২৯ সালে সেনাদলের ক্যাপ্টেন হন। ১৯৩১ সালে তিনি পদত্যাগ করেন।
কাকার মতো ক্রিকেট দুনিয়ায় বিরাট খ্যাতি না পেলেও তিনি ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেন এবং কয়েকটি ম্যাচে তিনি দলের নেতৃত্বও দেন।
১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি বিসিসিআই-এর সভাপতিও ছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সাইবেরিয়া এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করানোর জন্য পোলান্ডের বেশ কিছু বাসিন্দাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৪১ সালে জার্মানির হামলায় সোভিয়েত ইউনিয়ন খানিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে পোলান্ডের কিছু বাসিন্দাকে রাশিয়া ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
সাইবেরিয়ার কড়া ঠান্ডা থেকে বাঁচার তাগিদে এই বাসিন্দারা অনেক ইউরোপীয় এবং এশীয় দেশে বাসস্থানের খোঁজ করলেও বেশির ভাগ দেশই তাঁদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
বহু দেশের দ্বারস্থ হয়ে ১৯৪১ সালে তাঁদের জাহাজ অবশেষে বম্বে (বর্তমানে মুম্বই)-র একটি পোতাশ্রয়ে পৌঁছয়। কিন্তু শাসক ব্রিটিশরাও তাঁদের ভারতে ঢুকতে বাধা দেন।
দিগ্বিবিজয়সিংহজি এই মানুষগুলির কথা জানতে পেরে তাঁদের দেশে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানান। কিন্তু অনুরোধ মানা না বলে দিগ্বিবিজয়সিংহজি নিজের শাসনাধীন রোসি পোর্ট পোল্যান্ডের এই শরণার্থীদের জন্য খুলে দেন।
এর পরই তিনি এই শরণার্থীদের জামনগরের কাছে বালাচাঁদি গ্রামে থাকার ব্যবস্থা করেন। তাঁদের অন্ন-বস্ত্রেরও দায়িত্ব নেন মহারাজা।
ভারতে পোলান্ডের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি শরণার্থীদের জন্য পড়াশুনো এবং অন্যান্য বন্দোবস্ত করেন। ভারতে গড়ে ওঠে ‘লিট্ল পোলান্ড’।
শরণার্থী অনাথ শিশুদের নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেন তিনি। এই শিশুরাও তাঁকে ‘বাপু’ বলেই ডাকত। ৬৭০জন শিশু এবং মহিলা শরণার্থীদের প্রাণরক্ষার জন্য তাঁকে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়।
প্রচুর অর্থও ব্যয় করতে হয় তাঁকে। কিন্তু কোনও বাধাই তাঁর এই সদিচ্ছাকে দমাতে পারেনি।
তখন থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত পোলান্ডের এই শরণার্থীরা ভারতে ছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ব্রিটেন পোলান্ড সরকারকে স্বীকৃতি দিলে এই শরণার্থীদের নিজেদের দেশে ফিরে আসতে বলা হয়।
তাঁর অসামান্য কৃতীত্বের জন্য দিগ্বিবিজয়সিংহজিকে পোলান্ডের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দেওয়া হয়। তাঁর নামাঙ্কিত রাস্তা এবং ছোটদের স্কুলেরও দেখা মেলে পোলান্ড গেলে।