অ্যাপল সংস্থার এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ। সংস্থায় চাকরি করতে করতেই সেখান থেকে তিনি প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অ্যাপলের সেই কর্মী ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাঁর নাম ধীরেন্দ্র প্রসাদ। আমেরিকার আদালত তাঁকে তিন বছরের জন্য জেলে পাঠিয়েছে। সঙ্গে আদায় করা হয়েছে মোটা অঙ্কের জরিমানাও।
ক্যালিফর্নিয়ার স্যান জোয়াকিন কাউন্টির বাসিন্দা ধীরেন্দ্র। অ্যাপলের গ্লোবাল সার্ভিস সাপ্লাই চেনে ক্রেতা হিসাবে কাজ করতেন তিনি। সংস্থার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ দীর্ঘ ১০ বছরের।
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধীরেন্দ্র অ্যাপলে কাজ করেছেন। আর এই সময়ের মধ্যেই তিনি সংস্থার প্রচুর ক্ষতি করিয়ে দিয়েছেন। ধীরেন্দ্রের জন্যই অ্যাপেলকে গুনতে হয়েছে মোটা টাকা।
ঠিক কী কী করেছেন ৫৫ বছর বয়সি এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত? অভিযোগ, যন্ত্রপাতি চুরি থেকে শুরু করে ভুয়ো বিক্রির মতো একাধিক কারচুপিতে হাত ছিল ধীরেন্দ্রের।
অভিযোগ, ধীরেন্দ্র এমন অনেক জিনিসের জন্য সংস্থাকে টাকা দিতে বাধ্য করিয়েছেন, যা সংস্থা কখনও হাতেই পায়নি। সব অভিযোগের কথা নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
অ্যাপলের অভিযোগ, ২০১১ সাল থেকে প্রতারণা শুরু করেন ধীরেন্দ্র। তাঁর সঙ্গে এই কাজে শামিল হয়েছিলেন আরও দু’জন। তাঁরা হলেন রবার্ট গ্যারি হ্যানসেন এবং ডন এম বেকার।
বেকারের সংস্থায় অ্যাপল থেকে মাদারবোর্ড এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছিলেন ধীরেন্দ্র। অ্যাপলকে ভুয়ো বিল দেখিয়ে টাকা দিতে বাধ্য করেছিলেন।
নিউ ইয়র্কের আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন ধীরেন্দ্রর স্বীকারোক্তি, অ্যাপলের বাক্স থেকে জিনিস চুরি করে তিনি নতুন বাক্সে সেগুলি ভরতেন। তার পর আবার অ্যাপলের অফিসেই সেগুলি পাঠিয়ে দিতেন।
ধীরেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ, দেশের সঙ্গে প্রতারণার চক্রান্ত এবং কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কীর্তি ফাঁস হওয়ার পর আমেরিকার সরকার তাঁর প্রায় ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।
তদন্তকারীরা জানান, কাজের স্বার্থে ধীরেন্দ্রকে স্বতন্ত্র ভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছিল অ্যাপল। তিনি সেই ক্ষমতারই অপব্যবহার করে সংস্থাকে ঠকিয়েছেন।
বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা করেছেন, তবু কেন আগে ধরা পড়েননি ধীরেন্দ্র? অভিযোগ, ধরা পড়ার রাস্তাটিও তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কোথাও কোনও প্রতারণা হচ্ছে কি না, তা জানার আলাদা পদ্ধতি রয়েছে অ্যাপলের। সেই পদ্ধতিতেও তিনি কারসাজি করেছিলেন বলে অভিযোগ।
প্রতারণার মাধ্যমে ক্রমাগত নিজের আর্থিক লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে গিয়েছেন ধীরেন্দ্র। ফুলেফেঁপে উঠেছে তাঁর সম্পত্তি। বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে শুরু করেছিলেন তিনি।
নিউ ইয়র্কের আদালতে বিচারক অ্যাপল মামলায় ধীরেন্দ্রকে তিন বছরের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে অ্যাপলকে ১৪২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাঁকে।
আমেরিকার রাজস্ব দফতরেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ধীরেন্দ্রকে। আরও ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব দফতরে জমা দেওয়ার নির্দেশ তাঁকে দিয়েছেন বিচারক।