Kishan Lal murder case

ছিল না প্রমাণ, প্রত্যক্ষদর্শীও, এলআইসি এজেন্ট সেজে ২৫ বছর গা ঢাকা দেওয়া খুনিকে ধরল পুলিশ

১৯৯৭ সালে খুন। খুনি পলাতক হওয়ার ২৫ বছর পর দিল্লি পুলিশের সহায়তায় ধরা পড়ে আসল খুনি।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:৫৭
Share:
০১ ১৬

১৯৯৭ সাল। দিল্লির তুঘলকাবাদের ঘটনা। ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে একটি মৃতদেহ। খুনিরা পলাতক। ২৫ বছর ধরে খুনিদের ধরতে পারেনি দিল্লি পুলিশ। বছর ঘুরতে থাকে, সেই সঙ্গে থানায় ভারী ফাইলের তলায় জমা পড়তে থাকে ১৯৯৭ সালে দায়ের হওয়া এফআইআরের কপি। অবশেষে প্রায় তিন দশক পর খুনির সন্ধান পেল দিল্লি পুলিশ।

০২ ১৬

মৃতের নাম কিষাণ লাল। পরিবারের সদস্য বলতে তাঁর স্ত্রী সুনীতা। তাঁদের সংসারে নতুন অতিথি আসবে বলে দু’জনেই ভীষণ খুশি। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন কিষাণের মৃত্যু তাঁর জীবনে ঝড় তোলে। থানায় খুনের এফআইআর দায়ের করলে পুলিশ তদন্তে জানতে পারে এই খুনের নেপথ্যে রামু নামের এক দিনমজুর দায়ী।

Advertisement
০৩ ১৬

তবে খুন করার পরেই উধাও হয়ে যায় রামু। হাজার চেষ্টা করেও তাকে খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ। সুনীতা বার বার থানা থেকে ফিরে এসেছেন। কিন্তু খুনির সাজা পাওয়া দূরের কথা, রামু তখনও নিরুদ্দেশই ছিল। অবশেষে ঘটনার ২৫ বছর পর দিল্লি পুলিশ আবার এই মামলার তদন্ত শুরু করে।

০৪ ১৬

এত বছর আগেকার ঘটনা। খুনের সময় কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন না। ছিল না কোনও প্রমাণও। তাই রামু সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্যহীন ছিল পুলিশ। ২০২১ সালের অগস্ট মাসে নর্থ ডিসট্রিক্ট দিল্লি পুলিশের উপর দায়িত্ব পড়ে সমাধান না হওয়া মামলাগুলির পুনর্তদন্ত করার।

০৫ ১৬

পুলিশের দলে ছিলেন সাব-ইনস্পেক্টর যোগেন্দ্র সিংহ, হে়ড কনস্টেবল পুনীত মল্লিক ও ওমপ্রকাশ দগর-সহ পুলিশ কমিশনার ধর্মেন্দ্র কুমার এবং ইনস্পেক্টর সুরেন্দ্র সিংহ। রামুকে খোঁজার জন্য পুলিশ সাদা পোশাকে নানা স্থানে তল্লাশি চালায়।

০৬ ১৬

ডিসিপি সাগর সিংহ কালসি বলেছেন, ‘‘বিগত কয়েক মাস ধরে সূত্র খুঁজতে দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত তদন্ত চালিয়েছে পুলিশ। কোনও রকম তথ্য ছাড়াই এই তদন্ত শুরু করা হয়েছিল।’’

০৭ ১৬

পুলিশি দলের সদস্যরা লাইফ ইনস্যুরেন্স সংস্থার এজেন্ট সেজে রামুর খোঁজ করতে শুরু করেন। দিল্লির উত্তম নগরে রামুর আত্মীয়ের খোঁজ পান তাঁরা। তাঁদের অসুস্থ আত্মীয়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করা হবে, এ কথা বলে রামুর ঠিকানা পায় পুলিশ।

০৮ ১৬

ফরুকাবাদের কোথাও বাড়ি রামুর— আত্মীয়ের কাছ থেকে এই খোঁজ পেয়ে ফরুকাবাদে পৌঁছয় পুলিশ। সেখানে পৌঁছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে রামুর ছেলে আকাশের খোঁজ পায় পুলিশ। আকাশ জানান, বাবার সঙ্গে বহু দিন দেখা হয়নি। তিনি শুধু এ টুকু জানেন যে, লখনউয়ের জানকীপুরম এলাকায় রামু ই-রিকশা চালান।

০৯ ১৬

রামুকে হাতেনাতে ধরতে পুলিশও বদলায় তার সাজ। এলআইসি এজেন্ট থেকে তখন পুলিশ ই-রিকশা সংস্থার কর্মীর ছদ্মবেশ ধরেছে। কেন্দ্র থেকে ই-রিকশাচালকদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানকীপুরমের সব রিকশাওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ।

১০ ১৬

১৪ সেপ্টেম্বর জানকীপুরমের কাছাকাছি একটি রেলস্টেশন থেকে খোঁজ পায় রামুর। ৫০ বছর বয়সি রামু তখন নিজের নাম বদলে হয়েছে অশোক যাদব। দিল্লির রামুকে যেন তিনি চিনতেই পারছে না।

১১ ১৬

পুলিশ তখন রামুর আত্মীয় এবং সুনীতাকে লখনউয়ে আসতে অনুরোধ করে। তাঁরা এলে সকলে জানায়, অশোক যাদবই আসলে রামু। ২৫ বছর পর সুনীতার স্বামীর খুনি ধরা পড়ে।

১২ ১৬

জিজ্ঞাসাবাদ করায় রামু জানায়, কিষাণের সঙ্গে তুঘলকাবাদেই পরিচয় হয় রামু এবং তাঁর এক শ্যালক তিল্লুর। তাঁরা খোঁজ পান, কিষাণ নাকি তাঁর বাড়ি বিক্রি করতে চাইছেন। কিষাণের কাছে মোটা টাকার বিনিময়ে বাড়ি কিনবেন বলে আগ্রহ দেখান দু’জনেই।

১৩ ১৬

রামু ও তিল্লু খবর পান, কিষাণের কাছে কোনও ভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা এসেছে। সেই টাকা চুরি করতেই ওখলার কাছে খুন করেন কিষাণকে। কিষাণকে জানানো হয়েছিল, ওখলার কাছে একটি বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

১৪ ১৬

সেখানে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় কিষাণকে। প্রথমে মাদক খাইয়ে কিষাণকে অচেতন করে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। হত্যার পর কিষাণের মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যান রামু ও তিল্লু।

১৫ ১৬

রামু জানান, টাকার লোভেই এই খুন করেছেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, লখনউয়ে আসার আগে বিভিন্ন জায়গায় নিজের আসল পরিচয় গোপন রেখে ঘুরে বেরিয়েছেন রামু। ১৯৯৭ সালে পালানোর পর নিজের ভুয়ো পরিচয়পত্রও তৈরি করেন তিনি।

১৬ ১৬

ডিসিপি কালসি বলেন, ‘‘সুনীতা তাঁর স্বামীর খুনিকে চিনে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন।’’ পুলিশ আধিকারিক জানান, ২৫ বছরের পুরনো মামলা আবার নতুন ভাবে শুরু হবে। তিমরপুর থানায় রামুর বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement