Chaitanyananda Saraswati

করেছেন পিএইচডি, এমবিএ, রয়েছে বিবিধ ডিগ্রি! যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত কে এই স্বঘোষিত ‘গডম্যান’ চৈতন্যানন্দ?

স্কলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ ও যৌন নিগ্রহের অভিযোগ জমা পড়েছে দিল্লির স্বঘোষিত ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন আশ্রমের ছাদের নীচে চলত যৌন নির্যাতন ও মানসিক অত্যাচার।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৬
Share:
০১ ১৮

১৭ জন কলেজছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে। স্বঘোষিত ধর্মগুরু তিনি। দিল্লির একটি পরিচিত আশ্রম তথা বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের ডিরেক্টর। নাম স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী, যাঁর পূর্বনাম ছিল পার্থসারথি। দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে অবস্থিত শ্রীসারদা ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের অন্যতম মাথা এবং আশ্রমের সেই পরিচালক আপাতত পলাতক।

০২ ১৮

ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও আপত্তিকর বার্তা পাঠানোর অভিযোগে অভিযুক্ত চৈতন্যানন্দ ২৮টি বই লিখেছেন। তাঁর সেই সব বই রমরম করে বিক্রি হয় বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। ‘রিসার্চগেট’ নামের একটি সংস্থা তাঁকে ‘শঙ্করাচার্য বংশীয় আর্ষবিদ্যা’ ধারার বৈদিক ঐতিহ্যের সন্ন্যাসীর খেতাবও দিয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৮

সংস্থার ওয়েবসাইটে তাঁর সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ধর্মগুরু স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর অন্যতম প্রবীণ শিষ্য চৈতন্যানন্দ। গুরুর তত্ত্বাবধানে ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা ধরনের ধর্মগ্রন্থের পাঠ নিয়েছেন। বিশেষ করে বেদান্ত বিদ্যালয়ের উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র এবং ভাগবদ্গীতা। এমনকি শ্রীসারদা ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের খ্যাতনামী অধ্যাপক হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে তাঁকে।

০৪ ১৮

শিক্ষা সংক্রান্ত অন্য একটি ওয়েবসাইটে চৈতন্যানন্দের প্রোফাইলে বলা হয়েছে, তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বুথ স্কুল অফ বিজ়নেস’ থেকে এমবিএ এবং পিএইচডি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি এবং ডিলিট পেয়েছেন। ভারত ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে তাঁর সাতটি সম্মানসূচক ডিলিট রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

০৫ ১৮

অভিযোগ, আশ্রমের সংস্থা থেকে ডিপ্লোমা করিয়ে দেওয়া এবং স্কলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে ছাত্রীদের ডেকে পাঠাতেন বাবা। তাঁর নজর থাকত অনগ্রসর বা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসা ছাত্রীদের উপর। তাঁর অশ্লীল আচরণের প্রতিবাদ করলে বা বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করতে চাইলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও নাকি দিতেন স্বামী চৈতন্যানন্দ।

০৬ ১৮

অভিযোগ, দিনের পর দিন আশ্রমের ছাদের নীচেই চলত যৌন নির্যাতন ও মানসিক অত্যাচার। ধর্মগুরুর চাপে প্রথম প্রথম মুখ খুলতে না পারলেও সম্প্রতি নির্যাতিতা ১৭ জন ছাত্রী এককাট্টা হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। বিস্ফোরক সব অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ অভিযানে নামে। সেই তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ৫০ জন ছাত্রীকে পাঠানো গুরুজির হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রায় সব মেসেজেরই ভাষা অশ্লীল এবং যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ।

০৭ ১৮

ছাত্রীদের অভিযোগ, রাতের বেলায় ক্রমাগত ফোন করে অশ্লীল বার্তালাপ করার জন্য জোর করতেন ‘গুরুজি’। আবার কোনও কোনও ছাত্রীকে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য জোর করতেন। কোনও ছাত্রী সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে বা মেসেজের উত্তর না দিলে আশ্রমের সঙ্গিনী তথা কর্মচারীদের দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে কাজ হাসিল করার চেষ্টা করতেন তিনি।

০৮ ১৮

হুমকি বা চাপের মুখে মাথা নত করতে না চাইলে পড়াশোনা বা কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকি পেতেন ছাত্রীরা। তাঁদের ডিগ্রি এবং নথিপত্র আটকে রাখারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ জমা পড়েছে।

০৯ ১৮

প্রথম প্রথম ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা করতেন গুরুজি। কখনও কখনও মিষ্টি ব্যবহার বা বিদেশভ্রমণের টোপ দিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতেন তিনি। তার পরই বেরিয়ে পড়ত ‘বাবা’র আসল রূপ। অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে ছাত্রীদের হোয়াট্‌সঅ্যাপে বার্তা পাঠাতে শুরু করতেন। রাতবিরেতে নিজের ঘরে ডেকে এনে যৌনতায় লিপ্ত হতেন চৈতন্যানন্দ।

১০ ১৮

যে সব ছাত্রী বেগড়বাঁই করতেন তাঁদের জন্য বিশেষ ‘দাওয়াই’ প্রস্তুত রাখতেন তিনি। চাপ সৃষ্টি করার জন্য ছাত্রীদের স্কলারশিপ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। তিনি গোপনে মহিলা হস্টেলের ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন বলেও সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।

১১ ১৮

বছর ৬২-র স্বঘোষিত ‘গডম্যান’-এর ছিল একটি বিদেশি গাড়ি। সেটিরও খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। সেই গাড়ির নম্বরপ্লেটেও গোলমালের হদিস পেয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। গাড়িতে দূতাবাসের ভুয়ো নম্বরপ্লেট লাগানো ছিল, যার নম্বর ছিল ‘৩১ইউএন’। গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

১২ ১৮

১৭ জনের মধ্যে বেশ কয়েক জন অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, আশ্রমের বেশ কয়েক জন মহিলাকর্মী বাবার কথায় তাঁদের উপর জোর খাটাতেন। তাঁদের জোর করতেন ‘গুরুজি’র কাছে যেতে, তাঁর প্রস্তাবে সায় দিতে। এক জন ছাত্রীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে নাম পরিবর্তন করতেও নাকি বাধ্য করেছিলেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু।

১৩ ১৮

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগও আনা হয়েছে। আশ্রম থেকে ন’টি ভুয়ো নম্বরপ্লেট বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ২৫ অগস্ট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে দ্বিতীয় এফআইআর দায়ের করা হয়। দিল্লি দক্ষিণ-পূর্ব জেলা পুলিশের যুগ্ম অধিকর্তা অমিত গোয়েল জানান, প্রত্যেকটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

১৪ ১৮

পুলিশের যুগ্ম অধিকর্তা জানিয়েছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ ৪ অগস্ট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এখনও পলাতক অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যানন্দ। সূত্রের খবর, এক বার আগরার কাছে নাকি তাঁকে দেখা গিয়েছে। দিল্লিতে বসবাস করলেও স্বঘোষিত এই ধর্মগুরু আদতে ওড়িশার বাসিন্দা। রাজধানী বসন্ত কুঞ্জের মতো অভিজাত এলাকায় বসে কুকীর্তি চালিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ সব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় হতবাক সেখানকার বাসিন্দারাও।

১৫ ১৮

অভিযুক্তের খোঁজে চিরুনিতল্লাশি চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকেরা। ধর্মগুরুর এই স্বরূপ প্রকাশ পেতেই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। ৩২ জন ছাত্রীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন অভিযোগ করেছেন যে তাঁরা অশ্লীল হোয়াট্‌সঅ্যাপ বার্তা পেয়েছেন।

১৬ ১৮

আশ্রম তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসতেই তড়িঘ়ড়ি সমস্ত পদ থেকে চৈতন্যানন্দকে সরিয়ে দিয়েছেন সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁকে। যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর সমস্ত সংযোগ ছিন্ন করেছে আশ্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

১৭ ১৮

দক্ষিণ ভারতের একটি পরিচিত ধর্মীয় সংগঠনের দিল্লি শাখার দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল অভিযুক্ত ‘বাবা’র কাঁধে। তাঁর বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ ওঠার পর ওই সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে, তাঁর কার্যকলাপ কোনও ভাবেই ধর্মীয় সংগঠনটি সমর্থন করে না। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।

১৮ ১৮

মাঝেমধ্যেই আগরা ও উত্তরাখণ্ডে ধর্মপ্রচার ও নানা অনুষ্ঠানে যেতেন ‘বাবা’। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই অ়ঞ্চলেই গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ স্ক্যান করা হয়েছে। অপরাধের স্থান এবং অভিযুক্তের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিও চালাচ্ছে তারা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement