কুমিরের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ! পুকুরে একসঙ্গে সাঁতার কাটছে কুমির এবং মানুষ। কখনও এমনটা দেখেছেন? ভাবছেন, এ আবার হয় নাকি! ভাবছেন নিশ্চয়ই, এটা নির্ঘাত কোনও রূপকথার গল্প। না, বাস্তবেই এর নিদর্শন রয়েছে। এ জন্য আপনাকে ঘুরে আসতে হবে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে।
কুমিরের সঙ্গে কিনা এমন ‘দোস্তি’! ভাবা যায়! বুরকিনা ফাসোয় একটি গ্রাম রয়েছে। যার নাম বাজ়ুলে। রাজধানী ওয়াগাডুগু থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমির। সেখানে গেলেই কুমির আর মানুষের বিরল বন্ধুত্ব চাক্ষুষ করা যাবে।
জলে কুমির! এই নিয়ে মনুষ্যসমাজে কম ভয় নেই। সেই কুমিরের সঙ্গে মানুষের এত সদ্ভাব যে আদৌ সম্ভব তা বাজ়ুলে না ঘুরে দেখলে বিশ্বাস হবে না।
আফ্রিকার ওই গ্রামে কুমিরকে ‘সৌভাগ্যের প্রতীক’ হিসাবে ধরা হয়। কুমিরের কিছু হলে গ্রামবাসীদের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
কুমিরের পিঠে চড়ে খেলছে গ্রামের বাচ্চারা। কোনও যুবক আবার কুমিরের পিঠে বসে রয়েছেন। এমন নানা কাণ্ড দেখতে পাওয়া যায় ওই গ্রামে। কুমির যে তাঁদের ক্ষতি করবে, এটা ভাবতেও পারেন না তাঁরা। এমনকি, ওই গ্রামে কুমিরের আক্রমণের খবরও নেই।
শোনা যায়, পঞ্চদশ শতক থেকে কুমিরের সঙ্গে ওই গ্রামের মানুষের সম্পর্ক অন্য খাতে বইতে শুরু করে। কথিত রয়েছে, এক সময় খরার কবলে পড়েছিল ওই গ্রাম। যার জেরে চরম দুর্ভোগের শিকার হন গ্রামবাসীরা।
সেই সময় নাকি জলের জন্য গ্রামের মহিলাদের একটি গোপন পুকুরের সন্ধান দিয়েছিল কুমিররাই। কুমিরদের দেখানো পথ ধরেই নাকি ওই পুকুরের সন্ধান পেয়েছিলেন গ্রামের মহিলারা। তার পরই খরার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পায় গোটা গ্রাম।
সেই থেকেই কুমিরকে অন্য চোখে দেখেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা। কুমিরের কাছে কৃতজ্ঞ এই গ্রামে প্রতি বছর বিশেষ অনুষ্ঠানও করা হয়। যার নাম ‘কুম লাকরে’।
এই অনুষ্ঠানে কুমিরদের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করেন গ্রামবাসীরা। পাশাপাশি গ্রামে যাতে সবার মঙ্গল হয়, কুমিরের কাছে সেই প্রার্থনাও করেন তাঁরা।
পিয়ের কাবোর নামে এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা ছোট থেকেই কুমিরের সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছি। একসঙ্গে সাঁতারও কেটেছি।’’ আমাদের এখানে যেমন হাঁস, মুরগি অবাধে ঘুরে বেড়ায়, ওই গ্রামে তেমনই কুমির ঘুরে বেড়ায়।
কাবোরের কথায়, ‘‘আমরা তো কুমিরের পিঠেও চড়ে বসি। ওরা কারও ক্ষতি করে না।’’ কুমিরের সঙ্গে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের যেন আত্মার টান।
ওই গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, কুমির তাঁদের পূর্বপুরুষের আত্মা। তাই কুমিরের প্রতি তাঁদের দুর্বলতা রয়েছে। আর সেই কারণেই কুমিরকে মাথায় তুলে রাখে ওই গ্রামের মানুষ।
কাবোর আরও জানিয়েছেন, যখন কোনও কুমিরের মৃত্যু হয়, তখন শোকে পাথর হয়ে যায় গোটা গ্রাম। এক জন মানুষ মারা গেলে যেমন শোকের আবহ তৈরি হয়, কুমিরের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটে।
কুমিরের মৃত্যু হলে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। এমনকি, কুমিরের শ্রাদ্ধেরও আয়োজন করা হয়। কাবোরের কথায়, ‘‘এমন অঘটন ঘটলে গ্রামের সকলে কান্নাকাটি করেন।’’
কুমিরের সঙ্গে গ্রামের মানুষের এমন নিবিড় টান দেখে তাজ্জব বনে যান পর্যটকরা। অনেকে কুমিরের সঙ্গে পোজ় দিয়ে ছবিও তোলেন। আবার অনেকেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন।