চলতি বছরের জুন মাসে মাস্টারকার্ডের প্রাক্তন সিইও অজয় বাঙ্গা প্রথম ভারতীয়-আমেরিকান হিসাবে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্টের পদে বসেছেন। বিশ্বব্যাঙ্কের চূড়ান্ত লক্ষ্য দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী তৈরি করা।
ঋণ এবং অনুদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে উন্নয়নশীল দেশগুলির দারিদ্র কমানো এবং দেশগুলিকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া বিশ্বব্যাঙ্কের অন্যতম লক্ষ্য।
বিশ্বের মোট দেশের সংখ্যা ১৯৫টি। কিন্তু বর্তমানে, মোট ১৯০টি দেশের কাছে বিশ্বব্যাঙ্কের সদস্যপদ রয়েছে। ব্রাত্য পাঁচটি দেশ।
এই পাঁচটি দেশ হল— উত্তর কোরিয়া, অ্যান্ডোরা, কিউবা, মোনাকো, লিখটেনস্টাইন। কিন্তু কেন বিশ্বব্যাঙ্কের দরবারে জায়গা পায়নি এই পাঁচ দেশ?
এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়ার নাম। উত্তর কোরিয়া দীর্ঘ দিন ধরে বদ্ধ সীমান্ত নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। আর সেই কারণে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে সে দেশের সরকার।
উত্তর কোরিয়া এক সময় সোভিয়েত ছত্রছায়ায় ছিল। তার পর থেকেই বাইরের কোনও মদত ছাড়া স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে উন্নত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করে চলেছে বলে উত্তর কোরিয়ার দাবি। আর সেই কারণেই নাকি নিজেদের বিশ্বব্যাঙ্কের সাহায্য থেকে সরিয়ে রেখেছে তারা।
এই তালিকায় নাম থাকা দ্বিতীয় দেশ অ্যান্ডোরা। মাত্র ৪৭ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে তৈরি এই দেশের জনসংখ্যা ৭৭ হাজার। ফ্রান্স এবং স্পেনের বিচারব্যবস্থা চলে অ্যান্ডোরাতে। ফ্রান্স এবং স্পেন— উভয়ই বিশ্বব্যাঙ্কের সদস্য।
বিশ্বব্যাঙ্কের যে কোনও আর্থিক নীতি, যা স্পেন ও ফ্রান্সকে প্রভাবিত করে তা স্বাভাবিক ভাবে অ্যান্ডোরাকেও প্রভাবিত করে। সম্ভবত সেই কারণেই এই দেশের কাছে আলাদা করে বিশ্বব্যাঙ্কের সদস্যপদ নেই।
উত্তর কোরিয়ার মতো, কিউবাও দীর্ঘ দিন ধরে কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে। দেশটি প্রতিবেশী এবং বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বরাবরই অনীহা প্রকাশ করে এসেছে। কিউবার অর্থনীতি কঠোর ভাবে সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
অ্যান্ডোরার মতো মোনাকোও একটি ছোট দেশ। আয়তনে মোনাকো পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। অতীতে ফ্রান্সের অধীনে থাকা এই দেশ দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৯৩ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে সেখানে এখনও বহাল রয়েছে রাজতন্ত্র।
তবে মোনাকোর অর্থনীতি ফরাসি অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত। আর সেই কারণে আলাদা করে এই দেশের কাছে বিশ্বব্যাঙ্কের সদস্যপদ নেই বলে মনে করা হয়।
লিখটেনস্টাইনও একটি ছোট দেশ। এই দেশের জনসংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি। জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে এই দেশের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি।
বিশ্বব্যাঙ্কের পরিবর্তে ছোট এই দেশটি অর্থনীতির জন্য সুইৎজ়ারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তিতে রয়েছে। যে কারণে আর্থিক দিক দিয়ে তারা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থার উপর ভরসা রাখেনি।
বিশ্বব্যাঙ্কের সদস্য নয়, এমন তালিকায় স্বশাসিত দ্বীপ‘রাষ্ট্র’ তাইওয়ানও রয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তাইওয়ান নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র বলে দাবি করলেও, বিশ্ব উন্নয়ন সূচকের ক্ষেত্রে এটি আলাদা দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত নয়। আর সেই কারণেই বিশ্বব্যাঙ্কের সদস্যপদ পায়নি তাইওয়ান।
বিশ্বব্যাঙ্ক হল একটি বহুপাক্ষিক আর্থিক সংস্থা যা ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশগুলিকে পুনর্গঠনের জন্য ১৯৪৪ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি)’ প্রতিষ্ঠিত হয়। আইবিআরডির উদ্দেশ্য ছিল ঋণ প্রদানের মাধ্যমে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশগুলিকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনা।
পরে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)’ সংস্থার সঙ্গে আইবিআরডি জোট বেঁধে বিশ্বব্যাঙ্ক তৈরি হয়। বিশ্বব্যাঙ্কের সদস্য হওয়ার জন্য, একটি দেশকে প্রথমে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) যোগদান করতে হয়।