নতুন প্রজন্মের পরমাণু চুল্লি নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করল চিন! চতুর্থ প্রজন্মের পরমাণু চুল্লি বিশ্বে এই প্রথম।
চিনের উত্তর শানডং প্রদেশে শিদাওওয়ান প্ল্যান্টে চতুর্থ প্রজন্মের সেই পরমাণু চুল্লি বসানো হয়েছে।
চিনের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প়ৃথিবীতে যত ধরনের পরমাণু চুল্লি রয়েছে তার থেকে এই চুল্লি আলাদা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্য পরমাণু চুল্লির তুলনায় চতুর্থ প্রজন্মের সেই অত্যাধুনিক চুল্লি আরও দক্ষতার সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ওই চুল্লি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে জ্বালানি উৎপাদনের সময় কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কম হয়। মনে করা হচ্ছে, কার্বন নির্গমনের বার্ষিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই উন্নত চতুর্থ প্রজন্মের চুল্লির দিকে ঝুঁকেছে চিন।
সিনহুয়া আরও জানিয়েছে যে, ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এবং শীতল চুল্লিটি শি জিনপিং সরকারের সংস্থা হুয়ানেং, সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিনের ‘ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার কর্পোরেশন’ যৌথ ভাবে তৈরি করেছে।
সিনহুয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিদাওওয়ান প্ল্যান্টে যে দু’টি উচ্চ-তাপমাত্রার চুল্লি বসানো হয়েছে, তা জলের পরিবর্তে গ্যাস দ্বারা ঠান্ডা করা হয়। ফলে এই পরমাণু চুল্লিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার খরচ তুলনামূলক ভাবে কম।
এই অত্যাধুনিক পরমাণু চুল্লিতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে কম সময় লাগবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভিন্ন কলকারখানায় প্রয়োজনীয় তাপ এবং বাষ্প সরবরাহ করতে নাকি সক্ষম চতুর্থ প্রজন্মের পরমাণু চুল্লিগুলি।
২০১২ সালে শিদাওওয়ান প্ল্যান্ট নির্মাণ শুরু হয়। ২০২১ সালে প্রথম সেই প্ল্যান্টে চতুর্থ প্রজন্মের চুল্লি বসানো হয়েছে।
তার পর থেকে ওই চুল্লির কার্যক্ষমতা বুঝতে বিভিন্ন পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল। এ বার সেই চুল্লিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হল।
চতুর্থ প্রজন্মের এই চুল্লিটি ছোট মডুলার প্ল্যান্টের অংশ। মডুলার প্ল্যান্ট বলতে ৩০০ মেগাওয়াটের কম ক্ষমতা সম্পন্ন পরমাণু চুল্লিগুলিকে বোঝায়। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ধরনের পরমাণু চুল্লি ভারী ভারী শিল্পের ক্ষেত্রে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে বেরিয়ে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চাইছে চিন। পাশাপাশি বিদেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভরতাও কমাতে চাইছে। আর সেই কারণেই নাকি এই চতুর্থ প্রজন্মের চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা করা হয়।
অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত দিক থেকেও এই চুল্লি অন্য চুল্লির থেকে উন্নত বলে চিনের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
চিন ২০৩৫ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি থেকে ১০ শতাংশ এবং ২০৬০ সালের মধ্যে ১৮ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করেছে। সেই কারণেও নাকি চিন নতুন ধরনের পরমাণু চুল্লি নিয়ে অনেক দিন ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছিল।
যদিও চিন ২০২০ সালের মধ্যে ৫৮ গিগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করার যে লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল, তা পূরণ করতে পারেনি।
গত সপ্তাহেই দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে উষ্ণায়ন রোখার উপায় সন্ধানের বার্ষিক আন্তর্জাতিক বৈঠক বা ‘কপ-২৮’ বসেছিল। সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিল চিন।
সেই জলবায়ু সম্মেলনে ২০টি দেশকে ২০৫০ সালের মধ্যে পারমাণবিক ক্ষমতা তিন গুণ করার অঙ্গীকার নিয়ে একটি প্রতিশ্রুতিপত্রে সই করার আবেদন জানানো হয়। তবে চিন তাতে কোনও রকম স্বাক্ষর করেনি।