রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেক সমীকরণ বদলে গিয়েছে। রাশিয়ার উপর আমেরিকা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিশ্ব বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যে ডলার ব্যবহার করতে না পারায় চিনের কিছুটা সুবিধা হয়েছে বলা যায়। ডলারের বিকল্প হিসাবে অনেক দেশই ব্যবহার করছে চিনা মুদ্রা ইউয়ান।
তবে বিভিন্ন দেশের উপর যখন তখন আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা চিন ভাল চোখে দেখছে না। এতে তাদের বিভিন্ন সংস্থার কার্যকলাপও বাধা পাচ্ছে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে আগ্রহী বেজিং।
এই সমস্যার সমাধানে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার বিরুদ্ধে আইনি ‘প্রত্যাঘাত’-এর পরিকল্পনা করেছে চিন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চিনে বিদেশনীতি সংক্রান্ত নতুন একটি আইন পাশ হয়েছে।
নতুন আইনটি চিনের পুরনো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আইনের সঙ্গে নতুন কয়েকটি নিয়মের সংমিশ্রণ। এর মাধ্যমেই আমেরিকা এবং অন্যান্য ‘শত্রু’ দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে কোমর বেঁধেছেন জিনপিং।
নতুন আইনে অর্থনীতির চেয়ে জাতীয় নিরাপত্তার দিকে বেশি ঝুঁকেছেন জিনপিং। আইনটির বয়ানে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ শব্দটি সাত বার ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু ‘অর্থনীতি’ এসেছে মাত্র দু’বার।
গত ২৮ জুন চিনের ন্যাশনাল পিপ্লস কংগ্রেস বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক নতুন আইনটি পাশ করেছে। এখন থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে ওই আইন প্রয়োগ করতে পারে বেজিং।
কী আছে নতুন আইনে? নতুন আইনটিকে তাদের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করার একটি আইনি অস্ত্র হিসাবে ব্যাখ্যা করছে বেজিং। এর মাধ্যমে যে কোনও দেশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কড়া অর্থনৈতিক পদক্ষেপ করতে পারবেন জিনপিংরা।
সম্প্রতি আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) চিনা সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অছিলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করছে বলে অভিযোগ। এতে বিদেশে চিনের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যে কোনও দেশের উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা যদি কোনও ভাবে চিনের স্বার্থে আঘাত করে, তবে নতুন আইনের মাধ্যমে সেই অধিকার সুরক্ষিত করতে পারবে বেজিং।
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পাল্টা হিসাবে বিভিন্ন আমেরিকান সংস্থার বিরুদ্ধে চিনও ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে হেতু ডলারের রমরমা, তাই চিন কলকাঠি নাড়লেও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি।
সেই কারণে এ বার আইনের পথে হাঁটতে চলেছেন জিনপিং। চিনের পক্ষে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পথ নতুন আইনের মাধ্যমে আরও সুগম হল।
চিনের এই নতুন আইনের লক্ষ্য নিঃসন্দেহে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু ভারতের সঙ্গেও চিনের সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয়। তাই নয়াদিল্লিরও এ ক্ষেত্রে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে।
নতুন আইনের মাধ্যমে চাইলেই ভারতের বিরুদ্ধেও কড়া হতে পারে বেজিং। চিন এবং ভারতের পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হলে নতুন আইন প্রয়োগ করে বেজিং ভারতের বিরুদ্ধে কড়া অর্থনৈতিক পদক্ষেপ করতে পারে।
চিনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ কম নয়। বাণিজ্যিক স্বার্থে আঘাত লাগলে তাই নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে কড়া হতে পারে বেজিং। চিনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ভারতের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।