আলোর উৎসব দীপাবলি। টুনি বাল্ব থেকে শুরু করে রকমারি প্রদীপ কিংবা বাজি, বছরের এই একটা সময়ে নানা আলোর উপাদানে ভরে ওঠে ভারতের বাজার। ঘর সাজানোর রংবেরঙের আলো বাড়িতে নিয়ে যান মানুষ।
দিল্লি, মুম্বই কিংবা কলকাতার বড় বড় বাজারগুলিতে এই সময়ে চিনা পণ্যের রমরমা কারবার। কম দামে বাহারি আলো তৈরিতে চিনের জুড়ি মেলা ভার। ক্রেতারাও দীপাবলিতে চিনা আলো কিনে থাকেন।
চিনা পণ্য সস্তায় মেলে। তার নির্ভরযোগ্যতা, স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও উৎসবের মরসুমে সে সব আর মাথায় রাখেন না ক্রেতারা। বছর বছর ভারতের দীপাবলির বাজার এ ভাবেই দখল করে এসেছে চিন।
তবে এ বার হয়তো ছন্দপতন ঘটেছে। ভারতের দীপাবলির বাজারে চিনা পণ্যের বিক্রির ধুম দেখা যায়নি। প্রতি বারের মতো চিনা আলোর জন্য চেনা উন্মাদনা ছিল না। বরং এ বারের বাজারে দেশীয় পণ্যের পরিমাণ বেশি ছিল বলে দাবি।
দীপাবলির আগেই ভারতের বাজারে দেশি ‘ট্রেন্ড’ লক্ষ করা গিয়েছিল। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছর দীপাবলিতে চিনের এক লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।
দীপাবলির বাজারের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে ধনতেরসের পরিসংখ্যান। দেশ জুড়ে এই দিনটিতে প্রচুর বিক্রিবাটা হয়ে থাকে। ধনতেরসে সোনা, রুপো কিংবা যে কোনও বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র কেনাকে শুভ বলে মনে করা হয়।
ধনতেরসের বাজারেও চিনা পণ্যের বিক্রিতে প্রতি বছরের চেনা ছবি এ বার দেখা যায়নি। বরং সেই বিক্রি খানিকটা কমেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ‘ট্রেন্ড’ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেছে।
কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের (সিএআইটি) প্রেসিডেন্ট বিসি ভারটিয়া, সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীণ খাণ্ডেলওয়াল ধনতেরসে ৫০ হাজার কোটি মূল্যের ভারতীয় পণ্যের কেনাবেচা হতে চলেছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
কেন হঠাৎ এই ট্রেন্ড? চিনা পণ্যের জনপ্রিয়তা কি কমছে ভারতে? বাণিজ্যিক কর্তারা অবশ্য অন্য দাবি করছেন। তাঁরা এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন।
সিএআইটি-র কর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বছর ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর ডাক দিয়েছিলেন। ‘লোকাল’ অর্থাৎ স্থানীয় জিনিসপত্রের কেনাবেচা বৃদ্ধির জন্য সরকারের তরফে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও দেশের মহিলাদের স্বনির্ভরতার ডাক দিয়েছেন। তিনি ‘নারী সে খরিদারি’র (মহিলাদের কাছ থেকে কেনা) পক্ষে সওয়াল করেন। সেই ডাকও দেশের মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করেছে বলে দাবি সরকার পক্ষের।
সিএআইটি-র কর্তারাদের মতে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের থেকে মাটির প্রদীপ কিংবা তাঁদের তৈরি হস্তশিল্পের বিভিন্ন খুঁটিনাটি জিনিস কেনার জন্য ক্রেতাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁরা। তাতে সাফল্য এসেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, শুধু দীপাবলিতেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভারতের বাণিজ্যিক পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। পরিসংখ্যানও ভারতের পক্ষেই যাচ্ছে। বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের রিপোর্টে ভারত, মেক্সিকোর নাম করা হয়েছে।
গত কয়েক বছরে রফতানিকৃত পণ্যের উৎপাদনে এই দু’টি দেশের চোখে পড়ার মতো উন্নতি হয়েছে। আগামী দিনে বড় বড় দেশকেও তাই বাণিজ্যে টেক্কা দিতে পারবে ভারত, তেমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর সংক্রান্ত উপাদানের আদানপ্রদান ২০২৩ সালে ১৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে, একই পণ্যের রফতানি চিন থেকে আমেরিকায় কমেছে ২৯ শতাংশ।
রফতানিকারক দেশ হিসাবে সবে উন্নতি করতে শুরু করেছে ভারত। অনেকে তাই বলছেন, এখনই এ সব নিয়ে মাতামাতি করার কারণ নেই। উৎপাদন ক্ষেত্রে ভারতের আরও উন্নতি প্রয়োজন।